ঠাকুরগাঁও জেলার উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষিভিত্তিক রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।

Slider রংপুর সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

10917893_1586310234843177_2785436532876773338_n

 

 

 

 

 

অনিকেত সেন অন্তর, ঠাকুরগাঁও।
শিল্পখাতের দ্রুত বিকাশ,
উৎপাদন, কর্মসংস্থান, রপ্তানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণে
উৎসাহ প্রদান, পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর ঠাকুরগাঁও জেলার
উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষিভিত্তিক রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ
অঞ্চল (ইপিজেড) নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।
এরই মধ্যে এই ইপিজেড নির্মাণের জন্য ঠাকুরগাঁও সদর
উপজেলার রহিমানপুর এলাকায় ২০০ একর জমির
অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র
জানিয়েছে। এই ইপিজেড নির্মাণের কথা শুনে
ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।
সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে
এলাকাবাসী।
ঠাকুরগাঁওয়ে ইপিজেড নির্মাণ হলে পাল্টে যাবে
অর্থনীতির চিত্র। একই সঙ্গে এই ইপিজেডে প্রায়
লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
জেলায় ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনায় শিল্প
উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি
হয়েছে।
জেলা পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে জানা গেছে,
ঠাকুরগাঁওয়ে মোট জনসংখ্যা ১৩ লাখ ৮০ হাজার। ১
হাজার ৭৮১ দশমিক ৭৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ
জেলায় ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের একটি সুগার মিল,
মাঝারি শিল্প ১৪টি, (কোল্ড স্টোরেজ ১০টি), হালকা
শিল্প ২ হাজার ৬৩৮টি, কুটির শিল্প ৯, হাজার ৬৫টি,
একটি বিসিক শিল্প নগরী।
জেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ১ লাখ ৮১ হাজর ১৮৬
দশমিক ০৯ একর, অনাবাদি জমি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭১১
দশমিক ৮৫ একর। মোট অর্পিত সম্পত্তি ৫ লাখ ২৬৬ লাখ
৩৯ একর। পরিত্যক্ত সম্পত্তি ৮৭ দশমিক ৭৮ একর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁওয়ে ৮০ শতাংশ মানুষ
কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। এই এলাকায় প্রচুর
পরিমাণ ধান, গম, ভুট্টা, আলু, আম, আখ, কাঁঠাল, সবজিসহ
বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। কিন্তু, এ সময় ফসল
ফড়িয়াদের মাধ্যমে দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়।
আবার অনেক সময় প্রকৃতিক কারণে সংরক্ষণের অভাবে
নষ্ট হয়ে যায়। ফলে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়
না কৃষক। আর কৃষিভিত্তিক ইপিজেড নির্মাণ হলে কৃষক
এখানে উৎপাদিত ফসল সহজেই বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য
পাবে। এই ইপিজেডে ফলের রস তৈরির কারখানা,
মুরগির ও পশুপাখির খাবার কারখানা, সয়াবিন তেল,
সুপারি, বাইসাইকেল, প্লাস্টিক দ্রব্য, সুপেয় পানি,
এনার্জি সেভিং বাল্ব, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ব্যাটারি
পানি, ধাতব শিল্প, জুতার এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন
দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান কারখানা গড়ে তুলে পণ্য
উৎপাদন করবে।
কৃষক ইয়াসিন আলী জানান, সরকার ঠাকুরগাঁওয়ে
কৃষিভিক্তিক ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে
বলে আমরা খুবই খুশি। আমাদের জেলায় উৎপাদিত পণ্য
দিয়েই এই ইপিজেড চলবে। উন্নয়নে এগিয়ে যাবে
আমাদের ঠাকুরগাঁও।
সমাজ সেবক মঈন উদ্দিন জানান, স্বাধীনতার পর থেকে
এই জেলা অবহেলিত। গড়ে উঠেনি কোনো শিল্প
কারখানা। শুধু দিন দিন বেকারত্বের সংখ্যাই বাড়ছে।
এই ইপিজেড নির্মাণ হলে একদিকে কর্মসংস্থানের
সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে গতিশীল হবে অর্থনীতির চাকা।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি হাবিবুল
ইসলাম বাবলু জানান, ইপিজেড নির্মাণ হলে ঠাকুরগাঁও
আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে যোগাযোগের
জন্য ট্রেন, বিমানবন্দর চালু হলে উদ্যোক্তারা এ
জেলায় শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে আরো আগ্রহী
হয়ে উঠবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান,
ইপিজেড নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে
চিঠি পেয়েছি। সেই অনুযায়ী ইপিজেড নির্মাণের
স্থান ও জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসন কাজ করছে।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের
প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন জানান, ১৯৯৬
সালে আওয়ামী লীগ সরকার ঠাকুরগাঁওয়ে ইপিজেড
নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু, কতিপয়
মানুষের বিরোধিতায় তখন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এই
সরকার দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ঠাকুরগাঁওয়ে
ইপিজেড নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছে। ইপিজেড
নির্মাণ হলে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের
কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আশা রাখি জমি
অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে আগামী বছর নির্মাণ কাজ
শুরু হবে।
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে
বালিয়াডাঙ্গী মহাসড়কের ধারে রহিমানপুর এলাকায়
ইপিজেড নির্মাণ হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *