দিল্লিতে পা দিয়েই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠকের প্রস্তাব দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ শুক্রবারই চার দিনের ভারত সফরে এসেছেন হাসিনা৷ আজ , শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর শীর্ষ বৈঠকে কিছুক্ষণের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও থাকার কথা৷ এর বাইরে হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মধ্যাহ্নভোজেও হাসিনা -মমতা সাক্ষাত্ হবে৷ কিন্ত্ত প্রোটোকল মেনে এই সাক্ষাতের বাইরেও যে মমতার সঙ্গে কথা বলতে তিনি আগ্রহী , তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন হাসিনা৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তিনি৷
হাইকমিশন সূত্রের খবর , সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাসিনা বলেন , ‘আমি শুনেছি মমতা দিল্লিতে এসেছেন৷ ওঁর সঙ্গে আলাদা ভাবে দেখা করতে চাই৷ সেটা কাল (শনিবার ) রাতে হলেই ভালো হয়৷ ’ তিস্তা চুক্তি এই সফরের আলোচ্যসূচিতে না -থাকলেও , মমতার উপস্থিতিতে হাসিনা যে তিস্তা প্রসঙ্গ তুলতে পারেন সে ইঙ্গিতও এ দিন দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন , ‘তিস্তা নিয়ে আমি আশাবাদী৷ আগামী দিনে কিছু না কিছু একটা হবেই৷ ’ যদিও জল নয় , তিস্তাকে কেন্দ্র করে রাজনীতির আঁচেই তেতে উঠেছে রাজধানী৷ তাই আর ৩৫ হাজার কিউসেক নয় , মরা নদী তিস্তা থেকে ‘উপযুক্ত’ পরিমাণ জল পেলেই এই জটিলতার নিষ্পত্তি হবে বলে মনে করছে সব পক্ষ৷
দুই দেশের কূটনৈতিক মহলেই কৌতূহল তুঙ্গে , মমতা কি শেষ পর্যন্ত মোদীকে এই চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মতি দেবেন ? আজ হায়দরাবাদ হাউসে মমতার উপস্থিতিতে মোদী ও হাসিনার বৈঠকে তা কিছুটা স্পষ্ট হতে পারে৷ বাংলাদেশ অবশ্য চুক্তি নিয়ে অনেক বেশি আশাবাদী৷ হাসিনা ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় লিখেছেন , ‘অভিন্ন সুন্দরবন নিয়ে আমাদের কোনও বিরোধ নেই৷ তা হলে অভিন্ন নদীর জল নিয়ে কোনও সমাধানে আসতে পারব না কেন ?’ তাঁরই দল আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিষয়ক মন্ত্রী ওবেইদুর কাদের বলেন , ‘তিস্তা চুক্তি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা৷ হাসিনার সরকারই তিস্তায় জল আনবে৷ ’তবে জটিলতা কোথায় ?
নবান্নের কর্তারা বলছেন , ‘তিস্তায় জল নেই৷ বহু এলাকায় সুখা মরসুমে হেঁটেই নদী পারাপার করা যায়৷ সেই নদী থেকে বাংলাদেশ সুখা মরসুমে ৩৫ হাজার কিউসেক জল চায়৷ এই জল কোথা থেকে আসবে ? নদীর যা অবস্থা তাতে সাড়ে তিন হাজার কিউসেক জল দেওয়াও নিশ্চিত করা কঠিন৷ ’ তিস্তা প্রকল্পের নামে রাজ্য সরকার যে জলাধার ও ব্যারেজ করেছে তার জল ছেড়ে দিলেও এই চাহিদা মেটানো যাবে না৷ সে ক্ষেত্রে শুকিয়ে যাবে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষের জমি৷ যদিও বিষয়টি নিয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে রাজ্যের সেচসচিব কিংবা নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র, কেউই মুখ খুলতে চাননি৷
তাঁদের বক্তব্য , ‘মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধ৷ তিস্তা নিয়ে কোনও কথা বা তথ্য দিতে পারব না৷ ’ কিন্ত্ত তিস্তার জলের ক্ষেত্রে তো সিকিমের ভূমিকাও যথেষ্ট৷ সিকিম এই চুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলছে না কেন ? রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য , সিকিম -সহ উত্তর -পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় শাসকদলের সুরেই সুর মেলায়৷ ব্যতিক্রম শুধু পশ্চিমবঙ্গ৷ জলশূন্য তিস্তার যেটুকু জল রয়েছে , তার সিংহভাগ বাংলাদেশকে দেওয়ার কথা উঠতেই প্রতিবাদীর ভূমিকা নিয়েছেন মমতা৷ তিস্তার এই জলশূন্যতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কথা , ভারত -বাংলাদেশ আধিকারিক পর্যায়ের সমীক্ষাতেও স্পষ্ট হয়েছে৷ তবুও এই চুক্তি থেকে সরতে নারাজ বাংলাদেশ৷