দিল্লিতে সাজসাজ রব: দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি শোভা পাচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের পতাকা পাশাপাশি উড়ছে রাস্তার দুপাশে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম ভারত সফর। এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন এবং ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতে গিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এফবিসিসিআই’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদলও সঙ্গে রয়েছেন।
বাস-ট্রেন উদ্বোধনীতে থাকছেন মমতা, আলাদা বৈঠকও হবে: সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ হাসিনা-মোদি শীর্ষ বৈঠক শেষে দিল্লিতে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল এবং ত্রিপুরার পালটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও উপস্থিত থাকছেন। পরে মমতা ব্যানার্জিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথকভাবে দেখা করতে পারেন বলে খবর বেরিয়েছে। ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলাপে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সমপ্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, পদ্মা (গঙ্গা) ব্যারেজ নির্মাণ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবসম্পদ রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে বলে জানানো হয়েছে।
‘ল্যান্ড মার্ক ভিসিটে’ তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে: এদিকে বিবিসি বাংলার প্রশ্নের জবাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে গতকাল বলেন, ‘দেখবেন এটা কিন্তু সত্যিকারের একটা ল্যান্ডমার্ক ভিজিট বা অবিস্মরণীয় সফর হয়ে উঠবে। এই সফর থেকে যাতে অর্জনগুলোও বড় মাপের হতে পারে, তার জন্য আমরা দুপক্ষ এখনও নিবিড় ও সক্রিয়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সফরে ঠিক কী কী হবে তার বিস্তারিত অবশ্য আমি এখনই প্রকাশ করতে পারছি না। সরকারি কর্মকর্তারা বেশি ভেঙে বলতে চান না, তবে দুদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে বিশেষ সমঝোতা হতে চলেছে এবং তিস্তা নিয়ে চুক্তির আশা একেবারেই ক্ষীণ- দিল্লিতে পর্যবেক্ষকরা তা মোটামুটি ধরেই নিয়েছেন। কিন্তু বিবিসি বাংলার রিপোর্টে বলা হয়েছে- দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও মীমাংসা হয়নি তিস্তার- প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে এটাই শুধু একটা বড় আফসোস। দিল্লিতে বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি বলেন, “ভারতের অভ্যন্তরীণ বাধার কারণেই যে আজ পর্যন্ত তিস্তা চুক্তি সম্পাদিত হয়নি সেটা আমরা সবাই জানি। আমরা আশা করব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার যে একান্ত আলোচনা হবে তখনই মি. মোদি ব্যাখ্যা করবেন সেই বাধা দূর করার জন্য তারা ঠিক কী করছেন বা কতদূর এগিয়েছেন।” হাইকমিশনার বলেন, আমাদের দিক থেকে আমরা চুক্তির জন্য পুরোপুরি রেডি আছি। আর এখানে আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার- তিস্তায় যা পানি আছে তার অর্ধেক ভাগাভাগি করতে হবে। আট আনা পানি থাকলে চার আনা-চার আনা ভাগ হবে, আর যদি ছ-আনা থাকে তাহলে ভারত পাবে তিন আনা আর আমরা তিন আনা। এটা নিয়ে তো কোনো তর্কই হতে পারে না!”
অন্যান্য কর্মসূচি: সফরের দ্বিতীয় দিন আজ শীর্ষ বৈঠকের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীর হিন্দি সংস্করণ উন্মোচন করবেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। বিকালে ম্যানেকশ সেন্টারে মহান মু্ক্িতযুদ্ধে শাহাদৎবরণকারী ভারতীয় সৈনিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৭ শহীদ ভারতীয় সেনা পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননাপত্র প্রদান করবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী আজমির শরিফ যাবেন। সেখানে খাজা মঈনউদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর দরগাহ শরীফ জিয়ারত করবেন। একইদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা করবেন। পরে তিনি রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। এদিন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সফরের সমাপনী দিন (১০ই এপ্রিল) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাজমহল হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। বিকালে তিনি ঢাকার উদ্দেশে দিল্লি ত্যাগ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সফর উপলক্ষে মোদির টুইট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর উপলক্ষে দুটি টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন মোদি। দুজনের হাস্যোজ্বল একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করে মোদি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হার এক্সেলেন্সি শেখ হাসিনাকে তার ভারত সফরে স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত।’
দ্বিতীয় আরেকটি টুইটে তিনি লিখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমি আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ প্রসঙ্গত, আনুষ্ঠানিক সফরসূচি অনুযায়ী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর কথা ছিল মোদির মন্ত্রিসভার বাঙালি সদস্য বাবুল সুপ্রিয়। তবে মোদি নিজেই বিমানবন্দরে ছুটে যান শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে। বাবুল সুপ্রিয় ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নেন।
সুষমার সাক্ষাৎ: সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এ সময় সুষমাকে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাদের সাক্ষাৎ-বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন বলে এনডিটিভির খবরে জানানো হয়েছে।