ওয়ানডে সিরিজ জয়ের বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। তৃতীয় ম্যাচে ‘ফেবারিট’ হিসেবে নেমেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এ জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানের মন একটু খারাপ। তবে সব মিলিয়ে তাঁর মধ্যে ভালো লাগাটাই বেশি। নিজেদের শততম টেস্টে বলতে গেলে ‘বলেকয়ে’ জিতে টেস্ট সিরিজটা ড্র করা গেছে। জয়ের অবস্থানে থেকেও ওয়ানডে সিরিজটা হয়তো জেতা যায়নি। তবে তাতেও ১-১ ফলটা খারাপ দেখাচ্ছে না!
নাজমুল হাসান দুর্দান্ত এই ফলের পেছনে তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের ভূমিকাকে দেখছেন বড় করে—সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। এঁদের প্রশংসায় পঞ্চমুখই বলা যেতে পারে তাঁকে, ‘গল টেস্ট আমি দেখিনি। তবে দ্বিতীয় টেস্টে যে সাকিবকে আমি দেখেছি, সে অসাধারণ, একেবারেই বদলে যাওয়া একজন খেলোয়াড়। কী অসাধারণ খেলল, কী দায়িত্ববান! ওয়ানডে সিরিজেও সে ছিল দুর্দান্ত। তামিমও বদলে গেছে, সে-ও কী খেলাটাই খেলছে। আর মুশফিক…।’
মুশফিক সম্পর্কে যা বললেন সেটি আলাদা একটা ‘পর্ব’। লিটন দাস আকস্মিকভাবে চোট পাওয়ায় মুশফিককে আবার দাঁড়াতে হয়েছে উইকেটের পেছনে। সেখানেও দুর্দান্ত বদল ধরা পড়েছে নাজমুলের চোখে। টেস্টে মুশফিক উইকেটকিপার, ব্যাটসম্যান ও অধিনায়কের ভূমিকায় যা খেলেছেন, তা নিয়ে দুটি কথাই তাঁর মুখে উচ্চারিত হলো, ‘অসাধারণ, অ-সা-ধা-রণ!’
তা কী করেছেন মুশফিক টেস্ট সিরিজে? খুব বেশি কিছু নয়, হেরে যাওয়া গল টেস্টে তিনিই ছিলেন দলের একমাত্র ব্যাটসম্যান, যাঁর ব্যাটে ছিল টেস্ট খেলোয়াড়োচিত চেতনা। দলের বিপর্যয়ে বুক চিতিয়ে ব্যাট করে ১৫ রানের জন্য সেঞ্চুরিবঞ্চিত হয়েছেন। শততম টেস্টে নিজের শততম ডিসমিসাল করলেন উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে। প্রথম ইনিংসে একটা ঝকঝকে ফিফটির সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ২২ রানে ম্যাচ জিতিয়েই ফিরলেন ড্রেসিংরুমে। অথচ এই মুশফিকের হাতের গ্লাভস কেড়ে নেওয়ার জন্য কত না ‘গোপন’ সলাপরামর্শ চলল! শেষমেশ তাঁকে উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব ছাড়তেই হলো। তবে কথায় বলে না, বিধাতা যদি কিছু চান, সেটি খণ্ডানো যায় না। ঘটনাচক্রে আবার তাঁর হাতেই উঠল গ্লাভস।
এখন কি পেছনে ফিরে মনে হচ্ছে, মুশফিককে উইকেটকিপিং থেকে সরিয়ে দেওয়াটা ভুল ছিল? নাজমুল হাসান এটি একেবারে অস্বীকার করতে পারেননি, ‘একেবারে যে ভুল হয়নি, তা তো বলা যাবে না। তবে যদি দেখেন, এতে তার উপকারও হয়েছে। উইকেটকিপার হিসেবে সে কত ধারালো হয়ে উঠেছে! ওর মনে হয়তো এটাই কাজ করছিল, আমাকে প্রমাণ করতে হবে। সুযোগ পেয়েই সে সেটি করে দেখাল।’ বিসিবি প্রধানের এই কথায় এটাও ধরে নেওয়া যায়, টেস্টে মুশফিকই অনাগতকাল পর্যন্ত থাকছেন তিন ভূমিকায়—অধিনায়ক, ব্যাটসম্যান ও উইকেটকিপার। লিটন দাস কিংবা নুরুল হাসান আপাতত অপেক্ষাতেই থাকছেন।
কথায় কথায় মাহমুদউল্লাহর প্রসঙ্গও উঠল। এখানেও নাজমুল অবিচল যে, মাহমুদউল্লাহকে টেস্ট স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়ায় ভালো হয়েছে। ‘দেখুন, ওকে বাদ দেওয়ার পর ওর খেলার মধ্যে কিন্তু পরিবর্তন এসেছে। প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করল। প্রথম ওয়ানডেতেও ভালো করেছে। ও দারুণ একজন অলরাউন্ডার, কত সুন্দর একটা প্লেয়ার, ওর খেলা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, ওকে তো আমরা হারাতে চাই না’—বোঝা গেল ক্রিকেটারদের নিয়ে কতটা ভাবেন বিসিবি সভাপতি।
তবে মাহমুদউল্লাহর ব্যাপারটিকে নাজমুল হাসান ভাবেন সবার জন্য একটা বার্তা, ‘এটা কিন্তু একটা বার্তা। পারফর্ম করতে হবে, তা না হলে দলে থাকার গ্যারান্টি নেই।’
নাজমুল হাসান আগেই বলেছেন, ক্রিকেট-সম্পর্কিত যাবতীয় সিদ্ধান্ত তিনিই নিয়ে থাকেন। তিনিই বাংলাদেশের ক্রিকেটের চূড়ান্ত এবং শেষ কথা। ক্রিকেটাররাও কয়েক বছর ধরে তা-ই দেখে আসছেন। তাঁরা শুধু দেখতেন, সিদ্ধান্তগুলো কেমন যেন ঘুরপাক খেয়ে গলিঘুঁজি ধরে আসত। এক দিক দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করে দিয়ে ভালোই করেছেন নাজমুল হাসান। এখন অন্য কারও ওপর দায় বর্তাবে না, না নির্বাচকদের ওপর, না কোচের ওপর!