চট্টগ্রাম উত্তপ্ত; হরতাল রোববার

Slider চট্টগ্রাম

59736_b2

 

 

 

 

 

 

 

 

চট্টগ্রাম; বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ছাত্রদল নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় উত্তপ্ত বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। গতকাল  সকালে নিহত ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুর লাশ দেখতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ক্ষোভে ফেটে পড়েন নেতা-কর্মীরা। এই সময় মরদেহ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে বিচার চেয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায় অনেককে। কেবল তাই নয়, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক নুরুল আলম নুরু হত্যার প্রতিবাদে রোববার চট্টগ্রামে অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে মহানগর ছাত্রদল।

 

গতকাল দুপুরে নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ মাঠে নুরুর জানাজা শেষে নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদত হোসেন এ হরতালের ঘোষণা দেন। রোববার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ হরতাল পালন করা হবে। একই দিন দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এদিকে নুরুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এখনো মামলা করেনি পরিবার।

বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের চন্দনপুরার বাসা থেকে ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যায় একদল লোক। বৃহস্পতিবার সকালে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের খেলারঘাট বাজারের পাশে কর্ণফুলী নদীর তীরে তার লাশ পাওয়া যায়।

পরিবার ও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে পুলিশের একদল লোক নুরুকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। ওই দিন বিকালে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদত হোসেন বলেন, ছাত্রদল এই হরতাল ডাকলেও বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো এতে সমর্থন দেবে। চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা এবং রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলায় এই হরতাল পালন করা হবে।
এই সময় জানানো হয়, হরতালের পাশাপাশি নুরুল আলম নুরু হত্যার প্রতিবাদে দেশের সব জেলা-মহানগর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও মিছিল সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে ছাত্রদল।

গতকাল সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নুরুল আলম নুরুকে দেখতে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি, চাকসুর সর্বশেষ ভিপি নাজিম উদ্দিন ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজীব আহসান।

এ সময় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জনপ্রিয় ছাত্রদল নেতা হওয়ায় নুরুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অমানবিক এ হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক পরিবেশকে কলুষিত করেছে। যা ক?ারও জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। বিএনপি হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি দিয়ে বিএনপি হত্যার রাজনীতি মোকাবিলা করবে।

নগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা নুরুকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) আওতাধীন একটি ওয়ার্ড থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। তাই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত তা বের করা সিএমপির দায়িত্ব। তৃণমূল থেকে উঠে আসা ত্যাগী ছাত্রনেতা ছিলেন নুরু। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা ছাড়া অন্য কোনো মামলা নেই।

এদিকে নুরুল আলম নুরুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা করেনি তার পরিবার। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। গতকাল বিকালে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কেফায়েত উল্লাহ বলেন, পরিবারের কেউ এখনও মামলা করতে আসেননি। তারা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।

তবে নিহত নুরুল আলমের ভাগিনা রাশেদুল ইসলাম বলেন, সবাই জানাজা ও দাফন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মামলা করা হয়নি। এখন আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা করা হবে। পরিবারের কারও মানসিক অবস্থা ভালো নয়।
তিনি আরো বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় মর্গ থেকে লাশ বুঝে নেন দলীয় নেতারা। দুপুরে নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে জানাজা শেষে বিকালে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সাম মাহালদার পাড়া পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
মোরশেদ খানের নিন্দা
ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম নুরু হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। সারা দেশের বিএনপি নেতাকর্মীদের নিশ্চিহ্ন করতে নুরুকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এদিকে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে নুরু হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি শাহ সরোয়ার হোসেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল নেতা এম কপিল উদ্দিন বলেন, নুরু  হত্যাকাণ্ডে সারা দেশের ছাত্রসমাজ শোকাহত। এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে দুর্বার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
ঢাকায় গায়েবানা জানাজা
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তীরে পাওয়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল আলম নুরুর লাশের জানাজা হয়েছে ঢাকায়। শুক্রবার বাদ আসর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বক্তব্য দেন। জানাজায় বিএনপির কেন্দ্রীয় আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দসহ কয়েকশ’ নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন। এরপর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *