কর্ণফুলীর তীরে ছাত্রদল নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ

Slider চট্টগ্রাম টপ নিউজ

17629908_1226728050780705_4553823982115289679_n

 

চট্টগ্রাম;  কর্ণফুলী নদীর তীরে এক ছাত্রদল নেতার লাশ উদ্ধার করার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। পরিবারের অভিযোগ, নগরের চন্দনপুরার বাসা থেকে গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যায় একদল লোক।
গতকাল সকালে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের খেলারঘাট বাজারের পাশে কর্ণফুলী নদীর তীরে তার লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে দুপুরে লাশ শনাক্ত করেন তার স্বজনরা। বিকালে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নগরের চকবাজার থানার চন্দনপুরা পশ্চিম গলি মিন্নি মহল নামে দোতলা একটি ভবনের নিচতলায় স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক শিশু সন্তানকে নিয়ে থাকতেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক নুরুল আলম নুরু।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কও ছিলেন তিনি। স্থানীয় রাজনীতিতে নুরু বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে নুরুর লাশ কর্ণফুলী নদীর তীরে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। তারা নুরুকে চিনতে পেরে পরিবার ও বিএনপি নেতাকর্মীদের খবর দেয়। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন রাউজান থানার এস আই নুরুন্নবী।
তিনি বলেন, লাশের দুই হাত নাইলনের মোটা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। মুখে শার্ট ও চোখে ওড়না দিয়ে বাঁধা ছিল। পরনে ছিল লুঙ্গি। শরীরে আর কোনো কাপড় ছিল না। লাশের মাথায় দুটি গুলির চিহ্ন রয়েছে।
শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালো হয়ে গেছে। হত্যার আগে শক্ত কোনো কিছু দিয়ে মারধর করা হয়েছে হয়তো। লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার রাতে নুরুর বাসায় ছিলেন তার ভাগিনা রাশেদুল ইসলাম। তিনি জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে নক করার শব্দ শুনে বাসার দরজা খুলে দিই। আমাকে ধাক্কা দিয়ে রাউজানের নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ৮-১০ জন পুলিশ বাসায় ঢুকে পড়ে। এ সময় ভেতরের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন নুরু মামা। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে বাসা থেকে বের করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। তাদের কয়েকজনের পরনে পুলিশের পোশাক ছিল। অন্যরা সাদা পোশাকে ছিল।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে হাতে রশি বাঁধা অবস্থায় তার লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যখন নুরুকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন এসআই জাবেদের গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল। বুকে নেমপ্লেটে নামও লেখা ছিল।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ জাবেদ। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বুধবার আমি রাউজানের বাইরে যাইনি। রাত ২টা পর্যন্ত রাউজানের কাগতিয়া এলাকায় একটি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ছিলাম।
আরো ৩ জন নিখোঁজ
এদিকে চট্টগ্রামে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একই পরিবারের তিন সদস্যকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই তিন ব্যক্তি হলেন পরিবহন ব্যবসায়ী এসএম শফিকুর রহমান এবং তার দুই শ্যালক মো. হাসান তারেক ও মোয়াজ্জেম হোসেন সাথী। তাদের বাসা নগরীর খুলশি থানার আলফালাহ গলিতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পরিবারের পক্ষ থেকে গুরুতর এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শফিকুর রহমানের স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া টুম্পা বলেন, ‘২৪শে মার্চ দুপুরে ছয়জন লোক নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাদের বাসায় আসে। ঘরে ঢুকেই তারা তিনজনের আটটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।
এরপর একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য আমার স্বামীর ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমার স্বামী ও ভাই মোয়াজ্জেমকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। তারেক মোটরসাইকেল নিয়ে মাইক্রোবাসের পেছনে পেছনে যেতে থাকলে পাঁচলাইশ থানার সামনে থেকে তাকেও মোটরসাইকেলসহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
শফিকুর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নগরীর সল্টগোলা ঈশান মিস্ত্রিহাট এলাকার এস এস ট্রান্সপোর্টের মালিক তিনি। তারেকের বায়েজিদ এলাকায় টিআর মোবাইল টেকনোলজি নামে একটি দোকান রয়েছে। তার ভাই মোয়াজ্জেম মধ্যপ্রাচ্য থেকে কিছুদিন আগে দেশে বেড়াতে এসেছেন।
তারেকের মা মিনা বেগম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমাদের বাসায় একটি অনুষ্ঠান চলছিল। এ সময় হঠাৎ ছয়জন লোক বাসায় ঢুকে বলে, আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। শফিককে একটু আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে জানতে চাইলে তারা বলেন, আগ্রাবাদে যেতে হবে। একজন লোককে চিনিয়ে দিয়ে ফিরে আসবে। এরপর শফিকুরের সঙ্গে মোজাম্মেলকেও একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। সাদা রংয়ের মাইক্রোবাসটিতে নম্বর প্লেট ছিল না।
শফিকুরের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী ও ভাইদের কোনো অপরাধ থাকলে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় বিচার হোক। কিন্তু ছয়দিন ধরে তাদের থানায় সোপর্দ না করে যেভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে, কোনো অপরাধীকেও এভাবে গুম করে রেখে নির্যাতন চালানো যায় না।’ এ ব্যাপারে গত ২৫শে মার্চ খুলশি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *