তাঁর বয়সটা ৭৫ হলে হবে কি, সঙ্গে সঙ্গে তিনি এক পায়ে খাড়া!
হুইলচেয়ারটাই জীবনের সর্বস্ব বলে কি পৃথিবীর ‘মায়া’ কাটিয়ে হুশ করে চলে যাওয়া যায় না মহাকাশে?
কেন যাবে না, যদি রিচার্ড ব্র্যানসনের দেওয়া প্রস্তাবটা লুফে নিয়ে চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই ৭৫ বছর বয়সের মানুষটা বলে দিতে পারেন, ‘‘যাব, যাব। নিশ্চয়ই যাব। তৈরি হয়েই আছি যাওয়ার জন্য।’’
ভাবুন, যিনি অসম্ভব অন্ধকারেও, কৃষ্ণগহ্বরে আলোর দিশা দেখিয়েছিলেন, বলেছিলেন, আলো উগরে দিতে পারে এমনকী, কৃষ্ণগহ্বরও, সেই তিনি, স্টিফেন হকিং এ বার যাচ্ছেন মহাকাশে।আদিগন্ত, অতলান্ত অন্ধকারে। রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশযান ‘ভার্জিন গ্যালাক্টিক ফ্লাইট’-এ চেপে।
মহাকাশ নিয়ে বিস্তর বই পড়া, বই লেখা, পড়ানো, গবেষণার পর সেই মুলুকে ঘুরে আসার জন্য পা বাড়িয়েই রেখেছেন হকিং। ‘গুড মর্নিং ব্রিটেন’ নামে একটি টেলিভিশন শো’য়ে রবিবার হকিং বলেছেন, ‘‘ব্র্যানসন সে দিন আমাকে বললেন, এ বার ভার্জিন গ্যালাক্টিককে (মহাকাশযান) পাঠাচ্ছি মহাকাশে। তাতে আপনাকে সওয়ার করব বলে ভেবেছি। যেতে চান? যাবেন মহাকাশে? আমার তো প্রস্তাবটা পেয়ে খুব ভাল লাগল। আশাই করতে পারিনি। প্রথমে আকাশ থেকে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম, ব্র্যানসন ঠাট্টা করছেন নাকি আমার সঙ্গে। পরে ওঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, উনি সিরিয়াস। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম। ব্র্যানসনকে বললাম, নিশ্চয়ই যাব। আমি এক্কেবারে তৈরি। আমার তিন ছেলেমেয়ে আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। কিন্তু তার পরেও বলছি, এত আনন্দ আমি এর আগে পাইনি। মহাকাশে যাওয়ার আনন্দে মেতে রয়েছি। ব্র্যানসন আমাকে আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছেন।’’
সেই ‘ভার্জিন গ্যালাক্টিক’ মহাকাশযান, যার সওয়ার হবেন স্চিফেন হকিং।
ব্র্যানসনের এটা বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযান। শুধু হকিংই নন, বেশ কয়েক জনকে তাঁর মহাকাশযান ‘ভার্জিন গ্যালাক্টিক’-এ চাপিয়ে মহাকাশে নিয়ে যেতে চান রিচার্ড ব্র্যানসন। বাণিজ্যিক যেহেতু, যাত্রীদের যেতে হবে গাঁটের কড়ি খরচ করেই। হকিং জানিয়েছেন, তাঁকে ব্র্যানসন বলেছেন, ‘‘আপনার জন্য একটা সিট রেখেছি।’’ যেহেতু সেই আসনটি হকিংয়ের, তাই ধরেই নেওয়া যায় ব্র্যানসনের বাণিজ্যিক ‘ভার্জিন গ্যালাক্টিক’-এ হকিংয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ‘অতিথির আসন’।
তবে হকিংকে নিয়ে কবে মহাকাশে পাড়ি জমাবে ব্র্যানসনের ‘ভার্জিন গ্যালাক্টিক’, তার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সূত্রের খবর, সেই অভিযান হবে খুব শীঘ্রই। এর আগে ব্র্যানসন এক বার জানিয়েছিলেন, ২০০৯ সালেই তিনি মহাকাশে পাঠাবেন ‘ভার্জিন গ্যালাক্টিক’। পারেননি। ওই মহাকাশযানটি নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কয়েকটি গলদ ধরা পড়েছিল।
তার পর আবার চেষ্টা হয়েছিল ২০১৪-র অক্টোবরে। সে বার ব্র্যানসনেরই মহাকাশযান ‘স্পেসশিপ-টু’র পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে ঘটেছিল বড়সড় বিপত্তি। ক্যালিফোর্নিয়ার মোজাভে মরুভূমিতে তা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছিল।
খবর, এর আগে ২০১৪ সালেও ব্র্যানসন অফার দিয়েছিলেন হকিংকে। বলেছিলেন, ‘‘যাবেন মহাকাশে?’’ সে বার হকিং তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘আমার তো খুবই ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু ডাক্তাররা ছাড়বে না। তবে চলে যাওয়ার (মৃত্যু) জন্য এর চেয়ে ভাল উপায় আর কী হতে পারে!’’
আর তার আগে ২০০৭ সালে মাইক্রো-গ্র্যাভিটির পরীক্ষায় এক বার নামানো হয়েছিল হকিংকে। পৃথিবীর ‘মায়াজালে’র মধ্যেই!
এ বার কি হকিং প্রমাণ করবেন, স্পেস (মহাকাশ) ইজ নট সো ব্ল্যাক!