ঐতিহাসিক ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরুর চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। তা আজ বুধবার স্থানীয় সময় সাড়ে ১২টায় ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাস্কের কাছে হস্তান্তর করার কথা। চিঠিটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে বৃটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার টিম ব্যারো তুলে দেবেন। ডনাল্ড ট্রাস্কের হাতে চিঠিটি পৌঁছার পরই শুরু হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনকে বের করে আনার সমঝোতা বা দেনদরবার। কার্যত এর মধ্য দিয়েই শুরু হয়ে গেল ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া। এখন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র সামনে দু’বছর সময়। এর মধ্যেই তাকে সব দেনদরবার সারতে হবে। যদি এ সময়ে দু’পক্ষ কোনো সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হয় তাহলে উভয় পক্ষ সময় বাড়াতে সম্মত হতে পারে। যদি তা না হয় তাহলে ২০১৯ সালের ২৯শে মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিদায় নেবে যুক্তরাজ্য। এ নিয়ে বৃটিশ মিডিয়াজুড়ে খবর। সেখানে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে এ বিষয়টি। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়েও রয়েছে এ বিষয়ে আগ্রহ। কারণ, এ প্রক্রিয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়তে পারে। আজ বুধবার স্থানীয় সময় সকালে হাউজ অব কমন্সে একটি বিবৃতি দেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মে’র। তিনি এতে বলবেন, এখন সময় সারাদেশকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আজ সকালে মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে তার সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। তারপরই তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য তথা বৃটেনের প্রস্থানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। সময় গণনা শুরু হবে। এ সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দেবেন। তাতে বলবেন, তিনি সমঝোতার সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এমন কি ইউরোপীয় নাগরিকদেরও (যারা বৃটেনে বসবাস করেন) প্রতিনিধিত্ব করবেন, যদিও ব্রেক্সিটের পর তাদের অবস্থা কি হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসে নি সরকার এখনও। আজ তিনি আরও বলবেন, বৃটেনের প্রতিটি মানুষের জন্য একটি যথার্থ চুক্তি করা হলো আমার কাছে অগ্নিঝরা লড়াই। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে লিসবন চুক্তির ৫০ অনুচ্ছেদ সক্রিয় করলেন। এখন পরবর্তীতে কি হতে যাচ্ছে তার একটি সম্ভাব্য তালিকা পাওয়া গেছে নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটগুলোতে। তাতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (বৃটেন বাদে) ২৭টি দেশের নেতারা বৃটেনের সঙ্গে সমঝোতার জন্য ইউরোপীয় কমিশনকে অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের সম্মতি জানাতে ২৯শে এপ্রিল সম্মেলন আহ্বান করতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এসব নেতা যে ম্যান্ডেট দেবেন তার ওপর ভিত্তি করে মে মাসে সমঝোতার গাইডলাইন প্রকাশ করবে ইউরোপীয় কমিশন। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বৃটেনের মধ্যে ভবিষ্যত বাণিজ্যিক চুক্তির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এরপর মে/জুন মাসেই শুরু হবে সমঝোতা প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে ২৩ এপ্রিল ও ৭ই মে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ২ শে সেপ্টেম্বর জার্মানিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাবশালী এ দুটি দেশ তাদের নির্বাচন নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকবে। এ বছরের শরৎকালে বৃটিশ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করবে এবং বিদ্যমান ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনগুলো বৃটিশ আইনে প্রতিস্থাপন করবে। এ বিষয়ে যে বিল আনা হবে তা হলো দ্য গ্রেট রিপিল বিল। ২০১৮ সালের অক্টোবরের মধ্যে সমঝোতা শেষ করে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে যেকোনো চুক্তির বিষয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে হাউজেস অব পার্লামেন্ট, ইউরোপীয়ান কাউন্সিল ও ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে ভোট হবে। ২০১৯ সালের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ ঘটবে বৃটেনের। গত জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনকে বের করে আনার জন্য যে গণভোট হয় আজ তা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। তিনি আজ বলবেন, আমরা গর্বিত ইতিহাত ও উজ্বল ভবিষ্যতের একটি মহৎ জাতি হতে চলেছি। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের। এখন সময় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন তাকে সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বলেছেন, সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের নজর থাকবে। তিনি বলেছেন, বৃটেন পাল্টে যাচ্ছে। কিন্তু সেটা কিভাবে পাল্টাচ্ছে প্রশ্ন সেটাই। যদি প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে কর্মজীবী বিশেষ করে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করতে ব্যর্থ হন তাহলে এটা হবে জাতির জন্য ঐতিহাসিক ব্যর্থতা। ওদিকে মঙ্গলবার রাতে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড টাস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ-ক্লাউডি জাঙ্কার ও জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন তেরেসা মে। দৃশ্যত এখন মে মাসের মধ্যভাগে ব্রেক্সিট সমঝোতা শুরু হতে যাচ্ছে। তাতে উঠে আসবে বাণিজ্য, অভিবাসী, ব্রেক্সিট বিল, উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও অন্তর্বর্তী একটি চুক্তির বিষয়। এ সময়ে বৃটেন একক বাজার সুবিধা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবে। নতুন একটি রীতি অনুসরণ করবে তারা। ইউরোপের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে। বৃটেনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেসব নাগরিক বসবাস করেন এবং ইউরোপে যেসব বৃটিশ নাগরিক বসবাস করেন তাদের অধিকারের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে একটি চুক্তি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করবে সরকার।