মাঝির লাগি আছি জাগি
সকল রাত্রি বেলা
ঢেউ গুলো যে আমায় নিয়ে
করে কেবল খেলা
ঝড়কে আমি করব মিতে,
ডরব না তার ভ্রুকটিতে_
দাও ছেড়ে দাও,
ওগো , আমি তুফান পেলে বাঁচি।
এই গানটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। যে কোন সুস্থ মানুষের হ্রদয়কে নাড়া দিতে পারে এই গান। গানের গুরুত্ব ও ভাবার্থ মানব মনকে কতটুকু সজাগ ও সতর্ক করে তা যার সক্ষমতা আছে তিনিই বুঝেন। যার সেই সক্ষমতা নেই তিনি বুঝবেন না।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে ৯ মাস যুদ্ধ করে আমরা আমাদের মাতৃভূমি পেয়েছি। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও সাড়ে ২ লাখ মা বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে আমাদের মানচিত্র ও লাল সবুজের পতাকা। আমরা সেলুট জানাই আমাদের দেশ, মানচিত্র আর জাতীয় পতাকাকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর চলে গেলেও আমরা ৭১ সনের ইতিহাসকে এখনো অকাট্য দলিল করতে পারিনি। কারণ যখন যারা সরকার হয় তারা তাদের মত করে ইতিহাস তৈরী করেন। ফলে জাতি ও আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের দেশ সৃষ্টির ইতিহাস সন্দেহের দোলাচলেই থেকে যাচ্ছে। এটা পরিস্কার করা উচিত। যে জাতি তার জন্মের ৪৬ বছরেও তার ইতিহাস ঠিক করে বলতে পারেনি, সে জাতির ভাগ্যে কি আছে তা অজানাই থেকে যায়।
সাম্প্রতিক বছর গুলোতে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গনতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পরবর্তি সরকার গুলোর বৈধতা নিয়ে বার বার প্রশ্ন আসে। পঞ্চদশ সংশোধনী ও ষোড়শ সংশোধনী করা ও বাতিল করার কারণে আমাদের সংবিধান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সপ্তদশ সংশোধনী করে সকল কালো অতীত মুছে ফেলা এখন জরুরী হয়ে গেছে। না হয় আমাদের ইতিহাস ও সংবিধান ধুম্রজালে আটকে থাকবে। এতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুন্ঠিত হওয়ার আশংকা থেকেই যায়।
৯১ এর সাধারণ নির্বাচনের পর ৯৬ সালে বিএনপি জোর করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগ একই কায়দায় ক্ষমতায় আরোহন করে। দুটি দলই গনতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ক্ষমতার প্রয়োজনে তারা রাজাকার ও স্বৈরাচারের সঙ্গেও আঁতাত করেছে। দুটি দলই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করছে। ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার জন্য যদি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে ব্যবসা করা হয় ,তবে সেটা হবে দূর্ভাগ্যজনক। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে স্বতন্ত্র রাখতে চাই। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিবেদ চাই না।
২০০০, ২০০৪, ২০০৫, ২০১৩,২০১৪, ২০১৬,২০১৭ সহ অনেক সালেই আমাদের দেশ সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদে পুঁড়েছেও পুঁড়ছে। আদালতে দন্ড হয়েছে যে, সরকার নিজেই জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত। এখন অভিযোগ উঠছে যে, সাবেক সরকারগুলো সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদে যুক্ত। আবার সাবেক সরকারী দল গুলো বলছে, বর্তমান সরকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদে যুক্ত। সুতরাং সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদে কারা যুক্ত তা এখনো আবিস্কার হয়নি তাই পরিস্কার হওয়া উচিত।
সুতরাং দেশ, জনগন, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গনতন্ত্র রক্ষায় আমাদের একটি মূলনীতি থাকা এখন সময়ের দাবী। না হয় কবির গানের ভাষায় “ঢেউ গুলো যে আমায় নিয়ে করে কেবল খেলা” চরণটি আমাদের জন্য প্রয়োজ্য হয়ে যাবে।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম