শিববাড়ি-পাঠানপাড়া এলাকার এমনই একজন আতঙ্কিত বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করে জানান, ভয়ে মা, বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি আজ সোমবার সকালে এলাকা ছেড়েছেন। বললেন, ‘এই তিন দিন মনে হয় যমপুরীতে ছিলাম। ভয়ংকর শব্দ! আতঙ্ক!’
আরেক আতঙ্কিত বাসিন্দা মো. আব্দুল কাইয়ুম। ব্যবসায়ী কাইয়ুমের বাড়ি শিববাড়ির পৈতাপাড়ায়। এলাকাটি আতিয়া মহল থেকে ৪৫০ হাত দূরে। কাইয়ুম মুঠোফোনে বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ যখন হয়, তখন তাঁদের পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারেন না। নিজের বাসা ছেড়ে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মা, বাবা আর ভাইকে নিয়ে চলে গিয়েছেন গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার চম্পকলতায়।
কাইয়ুম জানান, অভিযানের কারণে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের এক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ। তাই সবাই মিলে প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটেছেন। পরে রিকশা ও গাড়িতে করে সাতগড় এলাকা হয়ে গ্রামের বাড়ি পৌঁছেছেন।
কাইয়ুম বলেন, ‘কয়েক রাত ধরে ঘুমাতে পারিনি। এখন গ্রামের বাড়িতে এসে শান্তি।’
একই এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী নয়ন দাশ। তাঁর তিনতলা বাড়ি। তিনি ছাড়াও আরও পাঁচটি পরিবার ভাড়া থাকে সেখানে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। নয়নের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তিনি সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাই স্ত্রীকে দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছেন। সকাল নয়টার দিকে নয়ন জানালেন, সারাক্ষণ ভয় আর আতঙ্কে আছি। কিছুক্ষণ আগেও মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা গেছে।
সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত প্রায় নয়টি পরিবারের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, আজ সকালেই সবাই আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, গতকাল ও আজ শিববাড়ি-পাঠানপাড়া, পৈতপাড়া ও শিববাড়ির প্রায় দুই শ পরিবার এলাকা ছেড়েছে।
আতিয়া মহল থেকে শিববাড়ির দুই কিলোমিটার এলাকায় রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। যানবাহন চলছে না। এলাকাবাসী অনেকেই কর্মস্থলে যেতে পারছে না। ঘরে বন্দী রয়েছে।
সিলেট মহানগরের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসীকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হয়েছে। অনেকে ভয়ে এলাকা ছাড়ছেন। বৃহত্তর স্বার্থে এই কষ্ট স্বীকার করতে হবে। অভিযান শেষ হলে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।