চারপাশের সড়কবাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। আশপাশের বাড়িঘরেও জ্বলছে সন্ধ্যাপ্রদীপ। কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে (সিসিসি) ম্যাচটি শেষ হলো ঠিক সন্ধ্যার অন্ধকারে। শ্রীলঙ্কা বোর্ড সভাপতি একাদশের ৩৫৪ রান তাড়া করে বাংলাদেশ কাল হারল মাত্র ২ রানে।
প্রস্তুতি ম্যাচে দলের সবাইকে বাজিয়ে দেখার চেষ্টা থাকে। এ কারণেই যেমন কাল বাংলাদেশ দলে ছিলেন ১৮ জন, শ্রীলঙ্কায় ১৩ জন। তবে ১১ জনের বেশি ব্যাট করতে পারবেন না। এ ম্যাচ দিয়ে খেলোয়াড়েরা সেরে নেন মানসিক প্রস্তুতি। আর বাংলাদেশ যেহেতু এর আগে টানা পাঁচটি টেস্ট খেলেছে, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল লাল বল ছেড়ে সাদা বলের ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়া। তা সেই কাজটি ভালোই হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তবু যেন একটু অতৃপ্ত, ‘ভালো খেললাম ঠিকই আছে, কিন্তু জিততে তো পারলাম না।’
ডিনারের সময় হয়ে গেছে। অনেককেই দেখা গেল, টিম বাসে ওঠার আগে মুখে কিছু দিয়ে নিচ্ছেন। মাশরাফিও সেই দলে। বাসে উঠতে যাওয়ার মুহূর্তে মাশরাফি তাঁর মতোই অকপট, ‘জিততে পারতাম। আমার ওই সময় ওই শটটা খেলা ঠিক হয়নি। আমি রিয়াদকে স্ট্রাইক দিলে ভালো করতাম। ও মারতে পারত। আমি একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।’
পাহাড়সম রান টপকে বাংলাদেশের জয়ের আশাও জাগিয়েছিলেন মাশরাফি। ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যখন উইকেটে নামেন অধিনায়ক, জয়ের জন্য ১১৬ রান করতে হবে ১১.১ ওভারে। জয় দূরে থাক, কেউ ভাবেইনি স্বাগতিক দলের হাত প্রায় ধরে ফেলা যাবে। নেমেই চালাতে শুরু করলেন মাশরাফি। কোনো বোলারকেই ছাড় দেননি। ওয়ানডে সিরিজে যার সামনে দাঁড়াতে হবে সেই থিসারা পেরেরার ওপর চড়াও হয়েছেন বেশি। চার ছক্কার দুটিই মেরেছেন পেরেরাকে। ডানহাতি পেসার লাহিরু মাদুশঙ্কাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন ডিপ মিডঅনে। ৫৮ করে গেছেন মাত্র ৩৫ বলে, যাতে চারটি করে চার ও ছক্কা। অষ্টম উইকেটে ১০১ রানের জুটি গড়েছেন মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে, বল খেলেছেন মাত্র ৫৮টি। এ প্রান্তে মাশরাফির রুদ্রমূর্তি, ও প্রান্তে মাহমুদউল্লাহর ‘সংযত’ আক্রমণ মাঠে জড় হওয়া শ পাঁচেক আর মাঠের বাইরে দাঁড়ানো কয়েক শ দর্শকের মন ভরিয়ে দিয়েছে।
ইনিংসের প্রথম বলেই ইমরুল কায়েস বিনুরা ফার্নান্ডোর বলে আউট হয়ে আসার পর সৌম্য ও সাব্বির দ্বিতীয় উইকেটে গড়েছেন ১১৬ রানের জুটি। সৌম্য করেছেন ৪৭ রান। সুন্দরভাবে ইনিংসটাকে গড়ে তুলেও সৌম্য ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন তুলে মেরে। দুর্দান্ত খেলেছেন সাব্বির, চতুরঙ্গা ডি সিলভার বাঁহাতি স্পিনে লং অনে ক্যাচ হওয়ার আগে দলের সর্বোচ্চ ৭২ রান করেছেন ৬৩ বলে, ১১টি চারের সঙ্গে মেরেছেন একটি ছক্কা। সব কটি শটই ছিল দেখার মতো। সাব্বিরের পর দ্রুত ফিরে যান মুশফিক, স্লগ সুইপে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন চতুরঙ্গা ডি সিলভার বলে, ২৩ বলে করেছেন ২০ রান।
এরপর পঞ্চম উইকেটে দেখা গেছে ময়মনসিংহের দুই ছেলের ব্যাটিং। মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক ৬৬ রানের জুটি গড়েছেন ৬১ বলে। মোসাদ্দেক যেন শুরু করেছিলেন পি সারায় তাঁর অভিষেক টেস্ট ইনিংসের পর থেকেই। ৫০ বলে ৫৩ করে তিনিও ক্যাচ লং অনে। মাশরাফি আউট হওয়ার পর শেষ ৯ বলে দরকার ছিল ১৫ রান। থিসারা পেরেরার করা শেষ ওভারে অর্থাৎ শেষ ছয় বলে ১৩ রান। শেষ বলটিতে একটি চার মারতে পারলেও হয়ে যায়। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ নিতে পারলেন একটি সিঙ্গেল, ৬৮ বলে ৭১ রানে অপরাজিত তিনি। ৩৫২ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস।
এর আগে শ্রীলঙ্কা বোর্ড সভাপতি একাদশ টসে হেরে ৩৫৪ রান করে মূলত চারজনের অবদানে। সান্দুন বিরাক্কোডি করেছেন সর্বোচ্চ ৬৭, কুশল পেরেরা ৬৪, ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ৫২ এবং থিসারা পেরেরার ৪১ রানে। একেবারের নিষ্প্রাণ উইকেটে বাংলাদেশের বোলাররা সামান্য ছন্দহীন থাকার সুযোগও শ্রীলঙ্কানরা নিয়েছেন। লাঞ্চের সময় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে স্কোরারের কাছ থেকে স্কোরকার্ড নিয়ে গেলেন, খুশি মনে অবশ্যই নয়। বারবার বোলারদের বোলিং বিশ্লেষণ দেখলেন, রুবেলের নামের পাশে চোখ গেল একটু বেশিই। ৮ ওভারে সর্বোচ্চ ৬৭ রান দিয়েও উইকেটশূন্য রুবেল।
আসলে কী পাওয়া গেল এই ম্যাচ থেকে? সাব্বির রহমান দলের পক্ষ থেকে জানিয়ে গেলেন, ‘আমরা আসলে জয়-পরাজয়ের কথা তো ভাবিনি, আমরা চেয়েছিলাম ভালো খেলতে। আমরা ভালো খেলেছি। আমরা চেজ করতে চেয়েছিলাম বলেই টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া। এখানে সাড়ে তিন শ চেজ করা মানে ওয়ানডে সিরিজে প্রায় তিন শ আমরা চেজ করে জিততে পারব।’
শততম টেস্টে জয় বাড়িয়ে দিয়েছে জয়ের তৃষ্ণা। ওয়ানডে সিরিজে জয়টা একটু বেশিই প্রত্যাশিত, কারণ এই সংস্করণে শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশ অনেক অভিজ্ঞ দল। আজ সকালে ডাম্বুলা-যাত্রা মাশরাফিদের। ২৫ মার্চ থেকে সেখানেই শুরু ওয়ানডের দ্বৈরথ।