পারিবারিক নাম অজয় সিং বিস্ত। তরুণ বয়সে পরিবার ছেড়ে দীক্ষা নেন। নাম পাল্টে হন যোগী আদিত্যনাথ। পুরোহিত হন। নাম লেখান রাজনীতিতে। সেই আদিত্যনাথই এখন ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
তৎকালীন অখণ্ড উত্তর প্রদেশের গাড়ওয়ালে ১৯৭২ সালে জন্ম নেন অজয়। গাড়ওয়াল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে স্নাতক করেন।
২১ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন অজয়। উত্তর প্রদেশের পূর্ব প্রান্তের গোরক্ষপুরের গোরক্ষনাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মহন্ত অদ্বৈতনাথের শিষ্য হন। দীক্ষা নিয়ে যোগী আদিত্যনাথ নাম গ্রহণ করেন। পরে গোরক্ষনাথ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হন।
গোরক্ষপুরে ক্রমেই যোগী আদিত্যনাথের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। ১৯৯৮ সালে ২৬ বছর বয়সে গোরক্ষপুর আসনে লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। সেটি নিয়ে পাঁচবার গোরক্ষপুর থেকে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন।
লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার জয়ের পর আদিত্যনাথ নিজস্ব যুব বাহিনী গঠনের কাজ শুরু করেন। তাঁর গড়া হিন্দু যুব বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও সহিংস কর্মকাণ্ডের বহু অভিযোগ আছে।
আদিত্যনাথ কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবে পরিচিত। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও মন্তব্যের জন্য বারবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন তিনি।
গো-রক্ষা আন্দোলনের জন্য আদিত্যনাথ আলোচিত। তিনি নিজেকে একজন ‘গো-সেবক’ বলে থাকেন। গরু রক্ষার বিষয়ে তাঁর উত্তেজক মন্তব্য আছে ঢের।
আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ফৌজদারি অভিযোগ আছে। এর মধ্যে হত্যা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ধর্মীয় স্থানে হামলার অভিযোগ অন্যতম।
ব্যাপক সমালোচনা-বিতর্ক সত্ত্বেও সময়ের ব্যবধানে গোরক্ষপুরে হিন্দু যুব বাহিনী ও আদিত্যনাথের প্রভাব-প্রতিপত্তি-জনপ্রিয়তা বাড়ে। এর প্রমাণ মেলে বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফলে। ২০১৪ সালে গোরক্ষপুর আসনে লোকসভা নির্বাচনে তিন লাখের বেশি ভোটে জেতেন তিনি।
অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করে আলোচিত হন বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আদর্শের প্রবক্তা আদিত্যনাথ।
২০০২ সাল ছিল আদিত্যনাথের রাজনৈতিক জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ সময়ে তিনি শক্তিশালী হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
২০০৭ সালে গোরক্ষপুরে এক হিন্দু ছেলে নিহত হওয়ার জেরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। দাঙ্গায় উসকানির অভিযোগে জেলে যান আদিত্যনাথ। এতে তাঁর জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে বিজেপির জয়রথে আদিত্যনাথের ভাবমূর্তি ও প্রভাব দারুণ ভূমিকা রাখে। উত্তর প্রদেশে অবদানের পুরস্কার হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আদিত্যনাথ ঠাঁই পাবেন বলে অনেকেই ভেবেছিলেন।
পরের বছর ভারতে অসহিষ্ণুতার বিতর্কে যোগ দেন আদিত্যনাথ। বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খানকে আক্রমণ করেন তিনি। শাহরুখকে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী হাফিজ সাঈদের সঙ্গে তুলনা করেন।
২০১৫ সালে এক অনুষ্ঠানে ‘সূর্য নমস্কার’-এর বিরোধিতাকারীদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে সমালোচিত হন আদিত্যনাথ।
উত্তর প্রদেশের সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের সময় আদিত্যনাথকে তারকা প্রচারক হিসেবে ব্যবহার করে বিজেপি। ৪০৩ আসনের উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় বিজেপি ৩০০-র বেশি আসন জিতে ভেলকি দেখিয়েছে।
উত্তর প্রদেশের এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি আগেভাগে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করেনি। আর এতে চটে যায় আদিত্যনাথের সমর্থকেরা। তবে শেষমেশ ৪৪ বছর বয়সী আদিত্যনাথই হলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভি অনলাইন অবলম্বনে