আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক রূপরেখা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলো ভারত ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। আইসিসি’র সম্ভব্য প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন তারা মেনে নেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলো। ২০১৪ সালে আইসিসি’তে চালু হয় ‘তিন মোড়ল’ তত্ত্ব। আইসিসি’র আয়ে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের অবদান বেশি থাকায় অর্থের সিংহভাগ এই তিন দেশের পকেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরমধ্যে আবার ভারতের পকেটে যেতো সবচেয়ে বেশি অর্থ। কারণ, তাদের মাধ্যমেই আইসিসি সবচেয়ে বেশি অর্থ আয় করে বলে যুক্তি। আইসিসি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান এন শ্রীনিবাসন এই ‘বিগ থ্রি’ তত্ত্ব চালু করেন। কিন্তু তার বরখাস্তের পর নতুন দায়িত্ব পাওয়া শশাঙ্ক মনোহর বিষয়টি পছন্দ করেননি। একজন ভারতীয় হওয়া সত্বেও আইসিসিতে ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্ব তিনি পছন্দ করেননি। ‘বিগ থ্রি’ তত্ত্ব বিলুপ্ত করার জন্য কাজ করেন তিনি। এ বিষয় নিয়ে আইসিসি’র সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে আইসিসি’র সভায় একটি সুষম অর্থনৈতিক বণ্টন পদ্ধতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তিন মোড়লের ক্ষমতা খর্ব করে আইসিসি’র সব সদস্য দেশের যৌক্তিক পরিমাণ অর্থ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পথে ছিল। আইসিসি’র আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। এই নিয়ম চূড়ান্ত হলে ভারত ক্রিকেটে বোর্ডের বছরে এক হাজার কোটি টাকা আয় কমে যেতো। অন্যদিকে আর্থিক সুবিধা পেতো ওই তিন দেশ ছাড়া বাকিরা। বাংলাদেশের আয় ২৭৭ কোটি টাকা বেড়ে যেতো বলেও জানা যায়। কিন্তু এরই মধ্যে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে হুট করে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে বসেন শশাঙ্ক মনোহর। এতে বিগ থ্রি তত্ত্ব বিলুপ্তির সম্ভাবনা শঙ্কায় পড়েছে। অনেকে মনে করছেন, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই শশাঙ্ক মনোহর পদত্যাগ করেছেন। আগ থেকেই শশাঙ্কের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছিল ভারত ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। আর তার পদত্যাগের পর এবার তারা আরো বড় গলায় কথা বলতে শুরু করেছে। এমন কি স্পষ্টভাবে আইসিসি’কে জানিয়ে দেয়েছে যে, নতুন অর্থনৈতিক মডেল তারা গ্রহণ করবে না। এ বিষয়ে আইসিসি’র প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা ইয়ান হিগিন্সের কাছে ই-মেইল করেছে বিসিসিআই’র প্রধান নির্বাহি রাহুল জোহরি। তিনি সেখানে লেখেন, ‘এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে আইসিসি’র ধরন বদলে যাবে। সদস্য দেশগুলোর স্বায়ত্বশাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে বিশ্ব ক্রিকেটের ধারাবাহিতকতা থেকে বিসিসিআই পিছিয়ে পড়বে। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হতে হবে স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য নীতিতে। আইসিসি’র আয়ে বিসিসিআই-এর যে অবদান তার স্পষ্ট প্রতিফলন সেখানে থাকতে হবে। এ কারণে বর্তমানে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক রূপরেখায় আমরা একমত নই।’