রাজধানীতে ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবনটি মাত্র এক মিনিটে ভেঙে ফেলার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কন্ট্রোলড ডিমোলিশন বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙা হবে বলে রাজউক সূত্রে জানা গেছে। অবশ্য ভবনটি ভাঙার দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জানতে চাইলে রাজউক বোর্ডের সদস্য (উন্নয়ন) আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য প্রস্তুত আছি। আদালতের নির্দেশনা পেলেই ভাঙা হবে। বিজিএমইএকেই ভবন ভাঙার খরচ বহন করতে হবে। তবে কন্ট্রোলড ডিমোলিশন পদ্ধতি অনুসরণের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। এ কাজে প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ পদ্ধতিতে একটি ভবনের বিভিন্ন অংশে বিস্ফোরক বসিয়ে আশপাশের সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরই ভবন ধসানোর কাজটি সম্পন্ন করতে হয়। তাই ভবন ভাঙার কাজটি এক মিনিটের কথা বলা হলেও পরিবেশগত যাবতীয় নিরাপত্তা আগেই নিশ্চিত করা হবে।
রাজউকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শ্রমিক দিয়ে হাতুড়ি-শাবল পিটিয়ে প্রচলিত পন্থায় ভবনটি ভাঙতে চাইছি না। কারণ, ওই পদ্ধতিতে ২০০৮ সালে র্যাংগ্স ভবন ভাঙার সময়ে শ্রমিক মারা যান।’
বিদেশি একটি বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে রাজউকের বোঝাপড়া হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, চলতি মাসের শুরু থেকে ভবনটি ভাঙার বিষয়ে রাজউকের সঙ্গে হাতিরঝিল প্রকল্পের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের আলাপ-আলোচনা চলছে। বিজিএমইএর কাছে ভবনের ড্রয়িং-ডিজাইনগুলোও চাওয়া হয়েছে। কোথায় কলাম, কোথায় রড আছে, সেগুলোর অবস্থানের ভিত্তিতে সব ঠিক করা হবে।
যোগাযোগ করা হলে সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, ভবনটি ভাঙার পদ্ধতি নিয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভবনের পাশে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল। রয়েছে কারওয়ান বাজার, নিউ ইস্কাটন এলাকা। ভাঙার পর চারদিক ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে। এর পরিবেশগত প্রভাব কতটা বিরূপ হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।
হাতিরঝিল প্রকল্পের সমীক্ষা দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হয় পরিকল্পনামাফিক। এ জন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। এভাবে ভবন ধসাতে বা ভাঙতে সময় লাগে এক মিনিটের মতো।
এই অধ্যাপক আরও বলেন, কন্ট্রোলড ডিমোলিশন পদ্ধতিতে বিস্ফোরণের সময় কম্পন হবে, আওয়াজ হবে, চারদিক ধুলায় আচ্ছন্ন হবে। সে জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
বিজিএমইএর রিভিউ আবেদন সর্বোচ্চ আদালত ৫ মার্চ খারিজ করে দেন। এরপর কার্যালয় সরিয়ে নিতে বিজিএমইএ তিন বছর সময় চাইলে ১২ মার্চ সর্বোচ্চ আদালত ভবন ভাঙতে ছয় মাস সময় দেন। এর আগে গত নভেম্বরে আপিল বিভাগের প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, বেগুনবাড়ি খাল ও হাতিরঝিল জলাভূমিতে অবস্থিত ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ নামের ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) ভাঙতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভাঙতে হবে। তারা ভবনটি ভাঙার খরচ বিজিএমএর কাছ থেকে নেবে।
যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএর সহসভাপতি (অর্থ) মো. নাছিরউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবনটি ভাঙার দায়িত্ব আমরা নেব না। রাজউকই ভাঙবে। আমরা জমি পেলে সম্মানের সঙ্গে এখান থেকে চলে যেতে পারলে বাঁচি।’
এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। চীনসহ বিদেশের বড় বড় শহরে, এমনকি ঘিঞ্জি এলাকায়ও ভবন ধসাতে এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, র্যাংগ্স ভবন অপরিকল্পিতভাবে ভাঙার কারণে অন্তত নয়জন শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন। তাই নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতিতে ভাঙতে হলে বিজিএমইএ ভবনের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক বসানোর পাশাপাশি নিরাপত্তাবেষ্টনী দিতে হবে। যেহেতু এ দেশে এই পদ্ধতি আগে আর ব্যবহৃত হয়নি, তাই এখানে বিদেশি বিশেষজ্ঞ রাখতেই হবে। একসময়ে এ ধরনের কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল, এখন সংখ্যা বেড়েছে।