বহুল কাঙ্খিত ব্রেক্সিট বিষয়ক লিসবন চুক্তির ৫০ অনুচ্ছেদ আগামী ২৯শে মার্চ সক্রিয় করবেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। এর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনকে বের করে আনতে তিনি সমঝোতার জন্য সময় পাবেন দু’বছর। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ব্রেক্সিট নিয়ে কঠোর সমঝোতায় (হার্ড নেগোশিয়েশন) যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। তবে সরকারের এমন ঘোষণার সমালোচনা করেছেন বিরোধী রাজনীতিকরা। তারা বলছেন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই দ্রুততার সঙ্গে ব্রেক্সিট সমঝোতায় পা বাড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এ খবর দিয়েছে অনলাইন স্কাই নিউজ। এতে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে ইউরোপীয়ান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড টাস্ক-এর কাছে আনুষ্ঠানিক নোটিফিকেশন পাঠানো হবে। এটাই হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার শুরু। এর পর যে দু’বছর সময় থাকবে তার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বৃটেনের সম্পর্ক কেমন হবে, তারা কি ইউরোপে একক বাজার সুবিধা পাবে কিনা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের কি অধিকার থাকবে বৃটেনেÑ এসব নিয়ে দর কষাকষি করতে হবে তেরেসা মে’কে। দু’ বছর সময় পরে অর্থা’ ২০১৯ সালের মার্চের শেষ নাগাদ এ সমঝোতা শেষ করতে হবে তেরেসাকে। তিনি ওয়েলসের সোয়ানসি সফরের সময় এক বক্তব্যে বলেছেন, যুক্তরাজ্যের জন্য সম্ভব সবচেয়ে সেরা চুক্তি নিশ্চিত করতে চাই আমি। এ বিষয়ে আমার অবস্থান স্পষ্ট। তিনি এ সময় প্রতিশ্রুতি দেন, এমন একটি চুক্তি করা হবে যা যুক্তরাজ্য ও বৃটেনের সব অংশে সবার জন্য উপকারে আসে। তিনি বলেন, এ জন্য আমি লক্ষ্য স্থির করেছি। এর মধ্যে রয়েছে একটি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি। নিরাপত্তা সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুও রয়েছে এর মধ্যে। তাই আমরা হার্ড নেগোশিয়েশনে যাবো। বৃটিশ জনগণ যে জন্য ভোট দিয়েছেন আমরা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে যাচ্ছি। ওদিকে অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয় করা সংক্রান্ত তথ্য ইউরোপীয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাস্কের অফিসকে সোমবার সকালে অবহিত করেছেন ব্রাসেলসে নিয়োজিত বৃটিশ দূত স্যার টিম ব্যারো। অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয় করা বিষয়ে নোটিফিকেশনের জবাব ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইইউয়ের বাকি ২৭টি দেশের নেতারা চার থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ব্যতিক্রমী একটি সম্মেলন ডাকতে পারেন। সেই সম্মেলনে মে বা জুন মাসের সম্ভাব্য আলোচনা শুরুর জন্য ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিচেল বারনিয়েরকে ম্যান্ডেট বা অনুমোদন দেয়া হবে। এরই মধ্যে ডনাল্ড ট্রাস্ক এ বিষয়ে টুইট করেছেন। তাতে তিনি সদস্য ২৭ দেশের জন্য ব্রেক্সিট সংক্রান্ত একটি খসড়া উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন। নোটিফিকেশনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা করা হবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সমঝোতা সংলাপে উঠে আসবে বিস্তর ইস্যু। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে বাণিজ্যভিত্তিক। উঠে আসবে ‘এক্সিট বিল’। কেউ কেউ বলছেন, এক্ষেত্রে ৫১০০ কোটি পাউন্ড পরিশোধ করতে হতে পারে বৃটেনকে। বৃটেনে অবস্থানরত ইউরোপের নাগরিক ও ইউরোপে বৃটিশ নাগরিকদের পরিণতিও হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তবে এরই মধ্যে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ-ক্লাউডি জাঙ্কার সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেসব প্রস্তাব সামনে তুলে ধরবে সেগুলো মেনে নেয়া না হলে বৃটেনকে বাণিজ্য চুক্তির আশা ছেড়ে দিতে হবে। ওদিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিতীয় গণভোট দিতে চাইছে স্কটল্যান্ড সরকার। তারা অভিযোগ করেছে, অনুচ্ছেদ ৫০ সক্রিয় করার বিষয়ে যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে তাদেরকে আগেভাগে জানানো হয় নি। বৃটিশ সরকারের সমালোচনা করেছেন বিরোধী লেবার দল নেতা জেরেমি করবিন। তিনি বলেছেন, ব্রেক্সিট কেমন হবে এ বিষয়ে ঐক্য গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তাদের উদ্দেশ্য পরিস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা সরকারের কাছ থেকে জবাব চাইবো। লড়াই করবো কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, শ্রমিকদের অধিকার, পরিবেশ ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। তেরেসা মের সমালোচনা করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেট নেতা টিম ফ্যারন। তিনি বলেছেন, কোনো পরিকল্পনা ও ক্লু ছাড়াই দ্রুততার সঙ্গে সমঝোতার পথে পা বাড়াচ্ছেন তেরেসা।