ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ পথে নামল শামীম ওসমানের এসি বাস

Slider সারাদেশ

10917893_1586310234843177_2785436532876773338_n

ঢাকা;  ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ‘শীতল এসি ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড’ নাম দিয়ে নতুন বাস চালু হয়েছে। যাত্রীদের কাছে এই পরিবহনটি ‘এমপির’ বাস নামে পরিচিতি পেয়েছে। এই পরিবহন কোম্পানির মালিক নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমান।
গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাঢ়ায় এই বাসের যাত্রা উদ্বোধন করেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। এ সময় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পরিবহন মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু শামীম ওসমান ছিলেন না।
ঢাকার মতিঝিল থেকে নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড পর্যন্ত এই বাসটির চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই পথের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ টাকা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তালিকা অনুসারে মতিঝিল থেকে নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব ১৯.৩ কিলোমিটার। এই পথে বিআরটিসির এসি বাসের ভাড়া ৪৫ টাকা। বিআরটিএ সব পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসের ভাড়া মালিকেরা নিজেরাই নির্ধারণ করেন।
গতকাল উদ্বোধনের পর বাসের ৩১৯২ নম্বর টিকিটের যাত্রী ইমতিয়াজ আরেফিন বলেন, বাসে বিনা মূল্যে ওয়াই–ফাই সেবা আছে। তবে ওয়াই–ফাইয়ের গতি কম। ভাড়াটাও একটু বেশি।
ঢাকায় বাস চলাচলের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (মেট্রো আরটিসি)। প্রতি জেলাতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে অনুরূপ আরটিসি রয়েছে। একটি বাস ঢাকা মহানগর থেকে অন্য জেলায় চলাচল করলে মেট্রো আরটিসির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অন্য জেলা আরটিসির অনাপত্তিপত্র নিতে হয়। এরপর বিআরটিএ প্রতিটি বাসের জন্য আলাদা আলাদা চলাচলের অনুমতিপত্র দেয়।
মেট্রো আরটিসি সূত্র জানায়, সাংসদ শামীম ওসমান জেড এন করপোরেশনের নামে বাস নামানোর আবেদন করেন মেট্রো আরটিসি বরাবর। তিনি ওই করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী। গত সেপ্টেম্বর মাসে মেট্রো আরটিসি এই পথে ৪০টি এসি বাস নামানোর অনুমতি দেয়। ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জ আরটিসিও বৈঠক করে অনাপত্তি দেয়। গত সপ্তাহে বিআরটিএ থেকে সবগুলো বাসের অনুমতিপত্র নেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ আরটিসি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে ৮ মার্চ আরটিসির সভায় চাষাঢ়ায় যানজটের কথা উল্লেখ করে স্থানীয় সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম নতুন এই বাস নামানোর বিরোধিতা করেন। তিনি সভায় অভিযোগ করেন, সভার এক দিন আগে তাঁদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাধারণত সাত দিন আগে চিঠি দেওয়া হয়। সূত্র আরও জানায়, কমিটির ১১ সদস্যের নয়জন নতুন বাসের পক্ষে অবস্থান নেন। একজন সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলকারী বন্ধন, উৎসব, আনন্দ, সেতু পরিবহনের মালিকেরা পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে শামীম ওসমানের ছত্রচ্ছায়ায় প্রতি মাসে পরিবহন খাত থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করেছিলেন।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, চাষাঢ়ার যানজটের কারণে প্রতিদিন নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নতুন বাস যানজট বাড়াতে পারে।

যোগাযোগের চেষ্টা করেও এই বিষয়ে কথা বলার জন্য শামীম ওসমানকে পাওয়া যায়নি। নতুন বাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তদারকি করছিলেন জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তার হোসেন। তিনি এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলে  জানান। শামীম ওসমানের জেড এন করপোরেশনের অধীনেই নতুন বাস নেমেছে কি না, জানতে চাইলে মুক্তার হোসেন বলেন, ‘আপনি মনে হয় কাগজপত্র দেখেই ফোন করছেন। আপনি যা জেনেছেন সেটাই হতে পারে।’ নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, নতুন এই বাসের অনুমোদন দিয়েছে মেট্রো আরটিসি। তাঁদের কমিটি শর্ত সাপেক্ষে চালুর ব্যাপারে মতামত দিয়েছে। অন্যতম শর্ত হচ্ছে—সড়কের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না ও নিজস্ব পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *