গ্রাম বাংলা ডেস্ক: বিএনপিকে রাজাকারদের দল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন, স্বৈরাচারের সৃষ্টি করা রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি।
আজ শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন’ শীর্ষক এক সেমিনারে সজীব ওয়াজেদ জয় এসব কথা বলেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘রাজাকারের সঙ্গে যারা রাজনীতি করে তারা কি রাজাকার নয়? সত্যিকার অর্থে বিএনপি রাজাকারের দল। বিএনপি যদি প্রমাণ করতে চায় যে তারা রাজাকারের দল নয়, তাহলে তারা জোট ছেড়ে চলে আসুক। জোট না ভাঙলে এটা প্রমাণ হবে যে তারা রাজাকারের দল।’
জয় বলেন, ‘রাজাকারদের স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানই এনেছেন। বিএনপি হচ্ছে রাজাকারদের দল।’
প্রধানমন্ত্রীপুত্র বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় আছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এ দেশে হবে। যারা রাজাকার, ৭১-এ খুন, হত্যা, নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। যারা তাদের সমর্থক, তারা কি স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করতে পারে?’
টেলিভিশনে গিয়ে অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম উল্লেখ না করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘এরা কি পাগল হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোয়েবলস ছিল হিটলারের প্রচারমন্ত্রী। তার নীতি ছিল একটা মিথ্যা কথা যদি বারবার বলতে থাকা হয়, তাহলে এক সময় মানুষ ওটাই বিশ্বাস করবে। তাদের উদ্দেশ্যও এটাই। মিথ্যাচার চলতে থাকলে মানুষ একসময় বিশ্বাস করবে। আমরা যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, তাদের দায়িত্ব অনেক। মিথ্যাচারের মোকাবিলা করতে হবে, লাজুক হলে চলবে না, টেলিভিশনে গিয়ে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে।’
কেরি ও মুনের ফোনের পরও ফাঁসি হয়েছে
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যাবজ্জীবন রায়ের কথা উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী অনেকে বলেন এটাতে নাকি ষড়যন্ত্র হয়েছে। অনেকে বলেন, সাঈদীকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে জামায়াতকে বাঁচাতে। যদি তা–ই হবে, তাহলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের ফোনের পরও কেন আওয়ামী লীগ সরকার একজন মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসি দিয়েছে? সরকার কারও কথা শোনেনি। এটা আদালতের রায়, আদালতের রায় মেনে নিতে হবে, আদালতের রায় কারও মনঃপূত না হলে আমরা বলতে পারি না সেখানে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এটা বলে, এগুলো বিশ্বাস করে, অনেকে আমরা নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছি।
ভুলভ্রান্তি হতে পারে, আমরা তো মানুষ
দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ভালো খবর প্রচার না হওয়ার কথা তুলে ধরেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি পত্রিকার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সরকারের সফলতা তুলে ধরতে আপনাদের লজ্জা লাগে, সফলতার কথা লিখেলেও একটু খোঁচা দিয়ে কথা বলেন। এগুলো তাদের বলতে গেলে তারা বলে, “আমরা আওয়ামী লীগের ভালো চাই, আওয়ামী লীগকে আরও ভালো দেখতে চাই বলে এগুলো লেখি”।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ভুলভ্রান্তি হতে পারে, আমরা তো মানুষ। দেখুন গত ৫-৬ বছর আগে দেশ কোথায় ছিল, এখন কোথায় আছে। ৫ বছরে দেশ যেখানে গিয়েছে, আগামী ৫ বছরে সেখান থেকে আরও সামনে যাবে, দেশ পিছনে ফিরে যাবে না।’
কারও সার্টিফিকেট লাগে না, আমরাই আমাদের সার্টিফিকেট
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দুটো আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের জয়ের পরও এ নিয়ে সমালোচকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বলেন, ‘আমাদের কারও সার্টিফিকেট লাগে না। আমরাই আমাদের সার্টিফিকেট। আমারা কারও চোখ রাঙানিকে ভয় পাই না।’
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘সেই ১৯৭৫–এর পর থেকে একের পর এক মিথ্যা প্রচার চলছে। ইতিহাস বদলানো হয়েছে, স্কুলের বইয়ে মিথ্যা ইতিহাস লেখা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য কী ছিল? যেন ভবিষ্যতে মিথ্যা ইতিহাসকে সত্য বলে মনে করা হয়। এটা ক্ষমতা দখলের একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। এটা কারা করেছে, কেন করেছে?’
জয় বলেন, ‘আমরা হতাশ নই। ২০ বছর আগে স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে গেলে মানুষ ভয় পেত, জয় বাংলা বলতে মানুষ ভয় পেত, কারণ এগুলো বললে তারা নির্যাতনের শিকার হতো। এখন সেই পরিবেশ নেই, এখন স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা যায়।’