ঢাকা; সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতার প্রেক্ষাপটে সারা দেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো সতর্ক ও তৎপর থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ করে জঙ্গিদের মাথাচাড়া দেয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজীপুরের টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি) নেতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নানসহ ২১ আসামি বহনকারী প্রিজন ভ্যানে হামলা করায় প্রতীয়মান হয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’-সহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখনো সক্রিয় রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। প্রিজন ভ্যানে হামলা সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৬ই মার্চ টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কলেজ গেইট যাত্রী ছাউনি সংলগ্ন স্থানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ’ নেতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নানসহ ২১ জন আসামি বহনকারী ঢাকা থেকে কাশিমপুরগামী প্রিজন ভ্যানকে লক্ষ্য করে আকস্মিকভাবে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় ওই প্রিজন ভ্যানের সামনে ও পেছনে পুলিশের দুটি স্কট ও প্রিজন ভ্যান মিলে প্রায় ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। চলন্ত প্রিজন ভ্যানে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করার পর একটি ককটেল বিস্ফোরিত হলে দুইজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। তবে প্রিজন ভ্যানের আসামিদের সুরক্ষিত অবস্থায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই প্রিজন ভ্যানে ককটেল নিক্ষেপকারী ব্যক্তিকে স্থানীয় জনতা তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে প্রথমে শিল্প পুলিশ এবং পরে টঙ্গী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটককৃত মোস্তফা কামাল (২২) নরসিংদী জেলার মাধবদী থানার শেকেরচরে জামিয়া এমদাদিয়া উলুম মাদরাসার নাহু জান্নাত বিভাগের ছাত্র। পুলিশ তার কাছ থেকে একটি গ্রেনেড, দুইটি পেট্রোল বোমা, পাঁচটি হাতবোমা ও দুইটি চাপাতি উদ্ধার করে। প্রিজন ভ্যানে মুফতি হান্নানসহ মোট ২১ জন আসামিকে ঢাকাস্থ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল কোর্টে মামলার হাজিরা শেষে পুনরায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কুমিল্লার চান্দিনায় ঘটনা সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুমিল্লা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘জেএমবি’-এর সদস্যরা আত্মগোপনে থেকে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করছে। তাদের গোপন তৎপরতা রোধ করতে সারা দেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো সতর্ক ও তৎপর থাকতে নির্দেশনা দেয়া যায়। কুমিল্লার ঘটনা সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ই মার্চ কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খাদঘর নামক স্থানে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। এ সময় দুইজন যাত্রী দ্রুত বাস থেকে নেমে যায়। এদের মধ্যে হাসান (২৪) নামে একজন রাস্তার পাশে থাকা পুলিশের পিকআপ লক্ষ্য করে বোমাসদৃশ বস্তু নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় জনগণ তাকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। নিক্ষেপ করা বোমাসদৃশ বস্তুটি বিস্ফোরণ ঘটেনি। বাসের অন্য যাত্রী মো. জসিম (২৫) হাতে একটি বোমাসদৃশ বস্তু ও একটি ছুরি নিয়ে পুলিশকে ভয়ভীতি দেখালে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে তার পায়ে গুলি লাগে। বর্তমানে আহত হাসান ও গুলিবিদ্ধ জসিম চান্দিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছে। আটককৃত দুইজন জেএমবি সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দুটি ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।