গ্রাম বাংলা ডেস্ক: চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনটি জুবায়েরের। ছবি: শামসুল হকলেগ স্পিনের রোমাঞ্চ জাগিয়ে জুবায়ের হোসেন অভিষেকেই নজর কেড়েছিলেন। তবে টেস্টে তার প্রথম চার ইনিংসে উইকেট প্রাপ্তির দিক দিয়ে বলার মতো কিছু করতে পারেননি। অবশেষে চট্টগ্রাম টেস্টে দেখা গেল জুবায়ের-চমক। লেগ স্পিনারের ৫ উইকেটে জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে অলআউট ৩৭৪ রানে। বাংলাদেশ পেল ১২৯ রানের লিড। দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ২৩ রানে তৃতীয় দিন শেষ করেছে। এগিয়ে আছে ১৫২ রানে। হাতে এখনো দুদিন সময়। নিশ্চিতভাবেই এই ম্যাচের লাগাম পুরোপুরি বাংলাদেশের হাতে। তবে কি সত্যিই হতে যাচ্ছে বাংলাওয়াশ!
উইকেট কিছুটা বিস্ময়ই উপহার দিয়েছে দু্ই দলকে। উইকেট কখনো বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের দিকে, কখনো বা জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের দিকে। তবে শেষমেশ বাংলাদেশের বোলাররা বিজয়ী। ফ্লাইট, টার্ন, গুগলিতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের ক্ষণে ক্ষণে বোকা বানিয়েছেন জুবায়ের। একটু খরুচে হলেও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছেন জুবায়ের। ৯৬ রানের বিনিময়ে পেয়েছেন ক্যারিয়ার-সেরা ৫ উইকেট।
জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে মূলত দুটি ঝড়ে। দুটিতেই বড় ভূমিকা জুবায়েরের। প্রথমটি সকালের সেশনে। ১ উইকেট ১৬৯ থেকে ৪ উইকেটে ১৭২—মাত্র ৩ রানেই জিম্বাবুয়ের ৩ উইকেট নেই! এর দুটি নিলেন জুবায়ের, সেটিও একই ওভারে। এ বিপর্যয় সামাল দেয় চাকাভা-চিগুম্বুরার ষষ্ঠ উইকটে জুটি। এ জুটিতে তোলা ১১৩ রানের পর বিকালের সেশনে আরেকটি ঝড়। এ সেশনে শেষ ৫২ রানেই পড়েছে অবশিষ্ট ৫ উইকেট। এখানেও দুই উইকেট নিলেন জু্বায়ের। সবচেয়ে বড় কথা, ইনিংস সর্বোচ্চ ৮৮ রান করা চিগুম্বুরাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের বড় লিড নিশ্চিত করেছেন তিনি।
প্রথম সেশনে বাংলাদেশের ‘দেয়াল’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা-সিকান্দার রাজা। সেই জুটি ভাঙেন শফিউল ইসলাম। শুরুর দিকে জিম্বাবুয়ের আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান খুব একটা সুযোগ না দিলেও শফিউলের একটি ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন মাসাকাদজা। ফেরার আগে এ ডানহাতির সংগ্রহ ৮১ রান। লাঞ্চের আগমুহূর্তে উইকেট পেয়ে যেন উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ৪৭তম ওভার করতে আসা জুবায়ের তিন বলের মধ্যে টেলর আর রাজাকে ফিরিয়ে দিলে মুহূর্তেই ৪ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। দুঃসময়েল বৃত্তে থাকা জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক করেন মাত্র ১ রান, আর রাজা ফেরেন ক্যারিয়ার-সেরা ৮২ রান করে।
১৭২ রানে ৪ উইকেট ফেলে বেশ স্বস্তিতেই মধাহ্নবিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। লাঞ্চের আগে দুই উইকেট নিয়ে, লাঞ্চ সেরেও যেন ক্ষুধা মেটেনি জুবায়েরের। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারেই জুবায়ের ফেরান ক্রেইগ আরভিনকে। ফলো-অনের শঙ্কায় পড়ে জিম্বাবুয়ে। তখনো জিম্বাবুয়ে ২৯৪ রানে পিছিয়ে, হাতে মাত্র শেষ ৫ উইকেট।
কিন্তু এই ‘শেষ’ পাঁচজনের একজন যে চিগুম্বুরা। বাংলাদেশের পুরোনো যম আবারও নতুন করে দেখা দিলেন। চাকাভার সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ১১৩ রানের জুটি গড়ে ফলোঅন এড়ায় জিম্বাবুয়ে। শুধু তা-ই নয়, তখন যেন ক্লান্তি পেয়ে বসেছিল বাংলাদেশকে। এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশের মধ্যে প্রাণ ফিরিয়ে আনেন শফিউল। এরপর শেষ চার উইকেট তুলে নিতে অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। এর দুটো তুলে নিয়ে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন জুবায়ের। এরই মধ্যে একটি উইকেট নেন সাকিব, পুরো ইনিংসে যেটি তাঁর একটি মাত্র উইকেট!