হাঙ্গেরিতে দু’বাংলাদেশীকে আটক , সরকারকে ১০ হাজার ইউরো করে অর্থদন্ড

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাবিশ্ব

index

বাংলাদেশী দুই আশ্রয়প্রার্থীকে বেআইনিভাবে আটকে রেখেছে হাঙ্গেরি। এ জন্য ওই দুই বাংলাদেশীর প্রতিজনকে ১০ হাজার ইউরো করে দিতে হাঙ্গেরি সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে স্ট্রাসবার্গে অবস্থিত ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস। রায়ে হাঙ্গেরি সরকারের প্রতি আরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই ১০ হাজার ইউরো ছাড়াও খরচ বাবদ তাদেরকে আরও ৮৭০৫ ইউরো করে দিতে। তবে দুই বাংলাদেশীকে আটকে রাখার কারণে তাদেরকে অর্থ দিতে হবে এটা হাঙ্গেরির কাছে বিস্ময়কর বলে জানিয়েছে হাঙ্গেরি। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও অনলাইন ইবিএল নিউজ। এতে বলা হয়, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশী দু’নাগরিক ইলিয়াস ও আলী আহমেদ পৌঁছান হাঙ্গেরির সীমান্তবর্তী শহর রোজকে। তারা বলকান রুট হয়ে ইউরোপের ভিতর দিয়ে যাত্রা শেষে ওই শহরে পৌঁছান। সেখানে তাদেরকে বন্দি করে রাখা হয় তিন সপ্তাহের কিছু বেশি সময়। তাদেরকে সার্বিয়ায় ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় হাঙ্গেরি সরকার। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, ২০১৫ সালের হাঙ্গোরি সরকার তার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করে। সৃষ্টি করে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য দুটি ট্রানজিট রুট। উদ্দেশ্য বলকান অঞ্চল হয়ে সেখানে যাওয়া অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনা। ওই ট্রানজিট রুটে আটক রাখা হয় দু’ বাংলাদেশীকে। তারা ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই হাঙ্গেরি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে তাদেরকে মুক্তি দেয়া ও সার্বিয়ায় ফেরত পাঠানো বন্ধ করার আবেদন জানানো হয়। সেই মামলায় মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস রায় দেয়। তাতে বলা হয়, ওই দু’ অভিবাসীকে ইউরোপিয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটসের অধীনে ট্রানজিট জোনে আটক রাখা বেআইনি। তবে ট্রানজিট জোনের পরিস্থিতি বিবেচনায় এটাকে ওই কনভেনশন লঙ্ঘন বলে ভাবা যায় না। এ ছাড়া বলা হয় আটক ওই দু’বাংলাদেশীকে বাইরের কারো সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয় নি। এমনকি তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও দেয়া হয় নি। তাদেরকে আশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কেও পর্যাপ্ত তথ্য জানতে দেয়া হয় নি। কোর্ট তার রায়ে বলেছে, দু’ বাংলাদেশীর মধ্যে একজনকে এ সংক্রান্ত শুধু একটি লিফলেট দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এর কোনো অর্থ ছিল না তার কাছে। কারণ তিনি নিরক্ষর। কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে হাঙ্গেরির। কিন্তু তারা তা করবে কিনা তা জানা যায় নি। ওদিকে কোর্ট এমন সময়ে এ রায় দিলো যখন গত সপ্তাহে হাঙ্গেরি একটি আইন পাস করেছে। তাতে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সীমান্তে ক্যাম্পগুলোতে আটকে রাখার টার্গেট রয়েছে। হাঙ্গেরির এমন প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, ২০১৫ সালে হাঙ্গেরিতে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা পৌঁছেছে এক লাখ ৭৭ হাজার। গত বছর তা নাটকীয়ভাবে কমে দাঁড়ায় ২৯ হাজারে। অন্যদিকে এ বছরের প্রথম দু’মাসে এ সংখ্যা ৯১২। সেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের সবাইকে আটকে রাখা হবে ট্রানজিট জোনের বন্দিশিবিরে। কাঁটাতারের বেড়ায় বেষ্টিত এমন বন্দিশালার সমালোচনা করেছেন ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র। হাঙ্গেরিয়ান হেলসিংকি কমিটির কো-চেয়ার মারতা পারদাভি বলেছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়াধিন থাকায় তাদের বিচার বিভাগীয় শিথিলতা না পাওয়া বেআইনি। এক্ষেত্রে যে রায় দেয়া হয়েছে তা যথার্থ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *