তিন বছর আগে বঙ্গভবনের বাজারের টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে সোহাগ ওরফে সালাম (২৫) নামের একজনকে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রথম দফায় ওয়ারি থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান সোহাগ। দ্বিতীয় দফায় গতকাল তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। থানা-পুলিশ, সিআইডি ও ডিবির হাত ঘুরে এ মামলা এসেছে পিটিআইয়ের হাতে। এই তিন সংস্থাই মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়।
আজ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে পিবিআই।
২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি দুপুর বেলায় রাজধানীর কাপ্তান বাজারে বঙ্গভবনের দৈনন্দিন বাজার করতে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট রিয়াজ হোসেন। বেলা দেড়টার দিকে কাপ্তান বাজারের মুক্তি হোমিও হলের সামনে সার্জেন্ট রিয়াজের পথ আটকে বঙ্গভবনের বাজারের ৪৯ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় তিন-চারজন ছিনতাইকারী। ওই ঘটনায় পরে সার্জেন্ট রিয়াজের সঙ্গে থাকা আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা করেন।
গতকাল পিবিআইয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই মামলাটি প্রথমে ওয়ারি থানার পুলিশ, এরপরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত করে। সর্বশেষ আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত আদেশে এর তদন্তভার পায় পিবিআই। পিবিআইয়ের ঢাকা মহানগর ইউনিট আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত শনিবার রাত আড়াইটার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে সোহাগকে গ্রেপ্তার করে।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশির আহমেদ জানান, ওয়ারী থানার পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে সোহাগ, মনোয়ার হোসেন মুন্না ও মো. সুলতান নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে এবং তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্য থেকে ১৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে। পরে তাঁরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান। সিআইডি মামলাটির তদন্তভার পেয়ে তদন্ত করে শুধু মনোয়ার হোসেন মুন্নার বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন (অভিযোগপত্র) দাখিল করে। পরে মামলার বাদী আমিনুল ওই তদন্ত প্রতিবেদনে অসন্তুষ্টি জানিয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করলে মামলাটির তদন্তভার পায় ডিবি। তদন্তভার পেয়ে ডিবি জামিন নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সোহাগের সঠিক ঠিকানাই বের করতে পারেনি। সঠিক ঠিকানা না থাকায় সোহাগকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্তভার পেয়ে সোহাগকে গ্রেপ্তার করে।
পিবিআই জানায়, গ্রেপ্তার সোহাগের বাড়ি বরগুনা জেলায়। সাত-আট বছর বয়সে অভাবের তাড়নায় ঢাকায় আসেন তিনি। ঢাকায় কোনো আশ্রয় না থাকায় সদরঘাট লঞ্চঘাট টার্মিনাল এলাকায় অন্য ভবঘুরেদের সঙ্গে থাকতেন তিনি। পরে কয়েকজন সদস্য একত্রিত হয়ে টার্মিনাল এলাকায় ছিঁচকে চুরি করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা কয়েকজন মিলে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের পেছনের রেলওয়ে কলোনি বস্তিতে একটি ঘর ভাড়া নেন। এ সময় মনির নামে একজনের সঙ্গে তাঁদের সখ্য হয়। ওই মনির তাঁদের ঢাকার যানজটপূর্ণ টার্মিনাল এবং রাস্তার চলমান যানবাহন থেকে মোবাইল ফোন ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার কৌশল শেখায়। ছিনিয়ে আনার কাজটি করত মনির ও অন্যরা। ছিনতাই করা মালামালের বিক্রীত টাকার তিন ভাগের এক ভাগ দেওয়া হতো যে ছিনিয়ে এনেছে তাঁকে। বাকি টাকার দুই ভাগের ভাগ মনির নিত এবং বাকি এক ভাগ অন্য সহায়তাকারীদের মধ্যে ভাগ হতো। কখনো পুলিশের হাতে ধরা পড়লে মনির তাঁদের জামিনের ব্যবস্থা করত। এ চক্রের বাকি সদস্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।