ঢাকা; বিটিটিবি থেকে বিটিসিএলে নামকরণ করে স্বায়ত্তশাসন দিলেও লাভের মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। এরই ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরে লোকসান গুনতে হয়েছে ৩৩৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৫০ টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ২৮৫ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার ৭৩১ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে ৩০১ কোটি টাকা।
অব্যাহত লোকসানের মুখে প্রতিষ্ঠানটি এখন জর্জরিত। অথচ আধুনিকায়ন ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যেই ২০০৮ সালে বিটিটিবিকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) নামকরণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছরেও বিটিসিএল লাভের মুখ দেখেনি। বরং বেশ কিছু প্রকল্পে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় বিটিসিএল কর্মকর্তাদের সহায়তারও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। ভিওআইপি ব্যবসায় সহায়তার মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক পাঁচ এমডিসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলাও করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের দায়েরকৃত মামলায় বলা হয়, বিটিসিএল কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে একটি চক্র আন্তর্জাতিক কলের ডাটা মুছে ফেলে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অবশ্য বেসরকারি খাতে সেলফোন ও ফিক্সডফোন সেবা চালু হওয়ায় আগে থেকেই প্রতিযোগিতার মুখে হিমশিম খাচ্ছিল বিটিসিএল। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক কল ব্যবসায় বিটিসিএলের পাশাপাশি আরো তিনটি প্রতিষ্ঠানকে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দেয়া হয়। এতে বিটিসিএলের একচেটিয়াত্ব হ্রাস পায়। এরপর থেকে রীতিমতো মিইয়ে যেতে থাকে বিটিসিএল। প্রতিবছরই লোকসানের ধকল সইতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু এ থেকে উত্তরণে কোনো চেষ্টাই নেই সংস্থাটির। অপরদিকে বেসরকারি সেলফোন ও পিএসটিএন অপারেটররা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কৌশল নিয়ে এগুতে থাকে। ফলে গ্রাহক তাদের দিকেই ঝুঁকতে থাকে। অন্যদিকে আয় বাড়াতে কিংবা গ্রাহক ধরে রাখতে বিটিসিএল কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে বিটিসিএল দিন দিন গ্রাহক হারাতে থাকে। এছাড়া গ্রাহক ল্যান্ড ফোন নিয়ে বিপাকে পড়লে অভিযোগ দিলেও দিনের পর দিন তার সমাধান হয় না। এভাবে অনেকেই ল্যান্ড ফোন ব্যবহার থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। অন্যদিকে বিটিসিএলের সংযোগও কমতে থাকে। গত অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে এর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বিটিসিএলের অডিট রিপোর্টে দেখা যায়- সারা দেশে বিটিসিএলের টেলিফোন সংযোগ রয়েছে ৭ লাখ ১৬ হাজার। অথচ তাদের ক্ষমতা রয়েছে ১৪ লাখ ৪৪ হাজার সংযোগ দেয়ার। এ হিসাব অনুযায়ী এখনও অর্ধেক সংযোগও দেয়া হয়নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ২০১৩ সালে প্রায় ৯ লাখ গ্রাহক ছিল। মাত্র তিন বছরে বিটিসিএলের গ্রাহক কমেছে কমপক্ষে ২ লাখ। সংযোগক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার না হওয়ায় সংস্থাটির আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বিটিসিএল সূত্র মতে, ২০০৫ সালে সে সময়ের বিটিটিবির সংযোগক্ষমতা ছিল প্রায় ১০ লাখ। আর বিটিসিএলে রূপান্তর হওয়ার পর ২০০৮ সালে সংযোগক্ষমতার ৩৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ ছিল অব্যবহৃত। এ সময় সংযোগ ছিল ৮ লাখ ৩৬ হাজার ১১১টি। ওই বছর সংযোগ কমে যায় ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০০৯ সালে সংযোগক্ষমতার ৩৪ শতাংশই ছিল অব্যবহৃত। ২০১০ সালে সংযোগক্ষমতার ২৬ দশমিক ৭২ শতাংশ অব্যবহৃত ছিল। ২০১১ সালে সংযোগক্ষমতার ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ অব্যবহৃত ছিল। ২০১২ সালে সংযোগ কমে যায় ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ অবস্থায় বিটিসিএল গ্রাহক বাড়াতে সংযোগ মূল্য কমালেও নিম্নমানের সেবার কারণে গ্রাহক আকৃষ্ট করতে পারেনি।
বিটিসিএল ল্যান্ডফোনের নতুন সংযোগমূল্য আগের তুলনায় অনেক কমানো হয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে সংযোগমূল্য ২ হাজার টাকা। আর চট্টগ্রামে ১০০০ টাকা। অন্য জেলা ও উপজেলায় মাত্র ৬০০ টাকা করা হয়েছে। কলরেটও আগের তুলনায় কমানো হয়েছে। লোকাল কলের ক্ষেত্রে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতি মিনিট ৩০ পয়সা এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১০ পয়সা। বিটিসিএল থেকে অন্যান্য অপারেটরে কলপ্রতি মিনিট ৮০ পয়সা। মাসিক লাইন অবশ্য বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মাসে লাইন রেন্ট ১৬০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে লাইন রেন্ট ১২০ টাকা। উপজেলা ও গ্রোথ সেন্টারের গ্রাহকদের জন্য ৮০ টাকা। তবে এত সব সুযোগও আগ্রহ বাড়াতে পারেনি গ্রাহকদের। বিটিসিএল সাতটি মহানগর ছাড়াও ৬৪ জেলায় ইন্টারনেট চঙচ-এর মাধ্যমে লিজডলাইন ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এজন্য দেশব্যাপী শতাধিক ইন্টারনেট চঙচ স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এ সেবা সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। এছাড়া ৬৪ জেলা ও ২২টি উপজেলায় টেলিফোনের বিদ্যমান কপার ক্যাবলের মাধ্যমে একই সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়। এডিএসএল মডেম ও রাউটারের মাধ্যমে গ্রাহক নিজ বাড়িতে বা অফিসে একাধিক ডিভাইস ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। এ ধরনের গ্রাহক সর্বনিম্ন ৩০০ টাকায় এ সংযোগ পাচ্ছেন। এছাড়াও সম্প্রতি ডট বাংলা ডোমেইন সার্ভিস চালু করেছে। গত ৩১শে ডিসেম্বর ডট বাংলা ডোমেইনের শুভ উদ্বোধন করা হয়। ওইদিন থেকেই বিটিসিএল ডট বাংলা ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করে। এ সেবার মাধ্যমে ডট বাংলা ডোমেইন ব্যবহার করে ইন্টারনেটে বাংলা ভাষায় ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস দেয়া যাবে এবং বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে ইউনিকোডে বাংলাভাষা ব্যবহার করে সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাবে। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি বাস্তবে রূপ পেয়েছে। একই সঙ্গে সাইবার স্পেসে বাংলা ভাষার ব্যবহার পূর্ণতা পেল। কিন্তু যতই পূর্ণতা পাক ব্যাপক প্রচার ও প্রসার না হওয়ায় গ্রাহক এ বিষয়ে রয়েছে একেবারেই অন্ধকারে। তাছাড়া সেবা কার্যক্রম বিস্তৃত করলেও সেবার মান বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বিটিসিএলের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় এ বছর সামগ্রিক রাজস্ব বৃদ্ধির হার অসামান্য (১২৬%)। চলতি বছরের সামগ্রিক রাজস্ব আয় ছিল ১১৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। গত বছর যা ছিল ৫০৪ কোটি ৪৯ লাখ।
এ বছর বিটিসিএল নেটওয়ার্কে আন্তর্জাতিক ইনকামিং ট্রাফিক বেড়েছে প্রায় ১৫ গুণ। গত বছর অন্যান্য আইজিডব্লিউ অপারেটররা টার্মিনেশন রেট ১.৫০ ইউএস সেন্ট থেকে ২ ইউএস সেন্টে বৃদ্ধি করেছিল। তবে বিটিসিএল টার্মিনেশন রেট ১.৫০ ইউএস সেন্ট বলবৎ রাখে যা বিটিসিএল-এর নেটওয়ার্কে ইনকামিং ট্রাফিক প্রবাহ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এ বছর দেশের বাইরের কল (আইজিডব্লিউ) থেকে আয় ছিল ৫৮৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। গত বছর এ খাতে রাজস্ব ছিল মাত্র ৪০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
এ বছর পিএসটিএন স্থানীয় রাজস্ব কমেছে ১১ শতাংশ। পিএসটিএন কাস্টমার সংখ্যা কমার কারণে এটা হয়েছে। এছাড়া টেলিফোন প্রতি গড় রাজস্ব কমাটাও একটা কারণ। বর্তমান বছরে মোট পিএসটিএন রাজস্ব ২৮১ কোটি ২৮ লাখ টাকা যা গত বছর ছিল ৩১৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
ইন্টারনেট সেবা ও ডাটা সেবা থেকে এ বছর রাজস্ব বেড়েছে। এ সেবাগুলো থেকে রাজস্বের পরিমাণ ৭৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। গত বছর ছিল ৪৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সেবাগুলোয় রাজস্ব বেড়েছে ৬০ শতাংশ।
ট্রাফিক ও সেটলমেন্ট রেট বাড়ার কারণে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবা থেকে আসা রাজস্বের পরিমাণও বেড়েছে। আর ট্রাফিক কমার কারণে এএনএস ও আইএসডি সেবা থেকে রাজস্ব কমা।
বিটিসিএল তাদের অপারেটিং ক্ষতির পরিমাণ ২৮৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হয়েছে। এ বছর অপারেটিং ক্ষতি ছিল ৩১২ কোটি ১২ লাখ টাকা। আর গত বছর ছিল ৫৯৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। বিরাট মূল্যহ্রাস সংক্রান্ত ব্যয়ের কারণে এ ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অডিট রিপোর্টে সেবার পেছনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৩৫ কোটি ৪৭ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেখানো হয়েছে ৪৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৬১ টাকা। প্রশাসনিক ব্যয় দেখানো হয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৬৭ কোটি ৩৭ হাজার ২০৮ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪১৪ কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ২৩৪ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২০১৪ অর্থবছরে ৩৭ কোটি ৯৯ লাখ ৭৪ হাজার ২২৯ টাকা। এ খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫৯ কোটি ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৮১৩ টাকা। মোট রাজস্ব দেখানো হয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫০৪ কোটি ৪৯ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৪ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব দেখানো হয়েছে ১১৪০ কোটি ৫২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭২ টাকা। সব মিলিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লোকসান দেখানো হয় ৩৩৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৫০ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যা ছিল ২৮৫ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার ৭৩১ টাকা। বেশ কজন বিটিসিএল গ্রাহক বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে ব্যর্থ হওয়ায় বিটিসিএল তার গ্রাহকক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেলফোনের সহজলভ্যতা এবং বিটিসিএলের সংযোগ গ্রহণ ও পরবর্তী সেবা দিতে সংস্থাটির অপেশাদারি মনোভাব গ্রাহকদের আগ্রহ নষ্ট করে দিয়েছে।
সেবার মান উন্নয়ন ও সেবাসমূহের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার সংস্থাটিকে এগিয়ে নিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এক্ষেত্রে বিটিসিএলকে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় যে উদ্দেশ্যে বিটিসিএল কোম্পানি করা হয়েছিল তা পুরোপুরি ব্যর্থ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে বিটিসিএলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কী করার আছে। যেখানে হাতের কাছে মোবাইল ফোন, সেখানে ঘরে থাকা ল্যান্ড ফোনে কতটা ভরসা করবেন গ্রাহক।
বিটিসিএল সূত্র মতে, ২০০৫ সালে সে সময়ের বিটিটিবির সংযোগক্ষমতা ছিল প্রায় ১০ লাখ। আর বিটিসিএলে রূপান্তর হওয়ার পর ২০০৮ সালে সংযোগক্ষমতার ৩৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ ছিল অব্যবহৃত। এ সময় সংযোগ ছিল ৮ লাখ ৩৬ হাজার ১১১টি। ওই বছর সংযোগ কমে যায় ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০০৯ সালে সংযোগক্ষমতার ৩৪ শতাংশই ছিল অব্যবহৃত। ২০১০ সালে সংযোগক্ষমতার ২৬ দশমিক ৭২ শতাংশ অব্যবহৃত ছিল। ২০১১ সালে সংযোগক্ষমতার ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ অব্যবহৃত ছিল। ২০১২ সালে সংযোগ কমে যায় ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ অবস্থায় বিটিসিএল গ্রাহক বাড়াতে সংযোগ মূল্য কমালেও নিম্নমানের সেবার কারণে গ্রাহক আকৃষ্ট করতে পারেনি।
বিটিসিএল ল্যান্ডফোনের নতুন সংযোগমূল্য আগের তুলনায় অনেক কমানো হয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে সংযোগমূল্য ২ হাজার টাকা। আর চট্টগ্রামে ১০০০ টাকা। অন্য জেলা ও উপজেলায় মাত্র ৬০০ টাকা করা হয়েছে। কলরেটও আগের তুলনায় কমানো হয়েছে। লোকাল কলের ক্ষেত্রে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতি মিনিট ৩০ পয়সা এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ১০ পয়সা। বিটিসিএল থেকে অন্যান্য অপারেটরে কলপ্রতি মিনিট ৮০ পয়সা। মাসিক লাইন অবশ্য বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মাসে লাইন রেন্ট ১৬০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে লাইন রেন্ট ১২০ টাকা। উপজেলা ও গ্রোথ সেন্টারের গ্রাহকদের জন্য ৮০ টাকা। তবে এত সব সুযোগও আগ্রহ বাড়াতে পারেনি গ্রাহকদের। বিটিসিএল সাতটি মহানগর ছাড়াও ৬৪ জেলায় ইন্টারনেট চঙচ-এর মাধ্যমে লিজডলাইন ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এজন্য দেশব্যাপী শতাধিক ইন্টারনেট চঙচ স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এ সেবা সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। এছাড়া ৬৪ জেলা ও ২২টি উপজেলায় টেলিফোনের বিদ্যমান কপার ক্যাবলের মাধ্যমে একই সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়। এডিএসএল মডেম ও রাউটারের মাধ্যমে গ্রাহক নিজ বাড়িতে বা অফিসে একাধিক ডিভাইস ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। এ ধরনের গ্রাহক সর্বনিম্ন ৩০০ টাকায় এ সংযোগ পাচ্ছেন। এছাড়াও সম্প্রতি ডট বাংলা ডোমেইন সার্ভিস চালু করেছে। গত ৩১শে ডিসেম্বর ডট বাংলা ডোমেইনের শুভ উদ্বোধন করা হয়। ওইদিন থেকেই বিটিসিএল ডট বাংলা ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করে। এ সেবার মাধ্যমে ডট বাংলা ডোমেইন ব্যবহার করে ইন্টারনেটে বাংলা ভাষায় ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস দেয়া যাবে এবং বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে ইউনিকোডে বাংলাভাষা ব্যবহার করে সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাবে। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি বাস্তবে রূপ পেয়েছে। একই সঙ্গে সাইবার স্পেসে বাংলা ভাষার ব্যবহার পূর্ণতা পেল। কিন্তু যতই পূর্ণতা পাক ব্যাপক প্রচার ও প্রসার না হওয়ায় গ্রাহক এ বিষয়ে রয়েছে একেবারেই অন্ধকারে। তাছাড়া সেবা কার্যক্রম বিস্তৃত করলেও সেবার মান বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বিটিসিএলের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় এ বছর সামগ্রিক রাজস্ব বৃদ্ধির হার অসামান্য (১২৬%)। চলতি বছরের সামগ্রিক রাজস্ব আয় ছিল ১১৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। গত বছর যা ছিল ৫০৪ কোটি ৪৯ লাখ।
এ বছর বিটিসিএল নেটওয়ার্কে আন্তর্জাতিক ইনকামিং ট্রাফিক বেড়েছে প্রায় ১৫ গুণ। গত বছর অন্যান্য আইজিডব্লিউ অপারেটররা টার্মিনেশন রেট ১.৫০ ইউএস সেন্ট থেকে ২ ইউএস সেন্টে বৃদ্ধি করেছিল। তবে বিটিসিএল টার্মিনেশন রেট ১.৫০ ইউএস সেন্ট বলবৎ রাখে যা বিটিসিএল-এর নেটওয়ার্কে ইনকামিং ট্রাফিক প্রবাহ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এ বছর দেশের বাইরের কল (আইজিডব্লিউ) থেকে আয় ছিল ৫৮৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। গত বছর এ খাতে রাজস্ব ছিল মাত্র ৪০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
এ বছর পিএসটিএন স্থানীয় রাজস্ব কমেছে ১১ শতাংশ। পিএসটিএন কাস্টমার সংখ্যা কমার কারণে এটা হয়েছে। এছাড়া টেলিফোন প্রতি গড় রাজস্ব কমাটাও একটা কারণ। বর্তমান বছরে মোট পিএসটিএন রাজস্ব ২৮১ কোটি ২৮ লাখ টাকা যা গত বছর ছিল ৩১৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
ইন্টারনেট সেবা ও ডাটা সেবা থেকে এ বছর রাজস্ব বেড়েছে। এ সেবাগুলো থেকে রাজস্বের পরিমাণ ৭৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। গত বছর ছিল ৪৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সেবাগুলোয় রাজস্ব বেড়েছে ৬০ শতাংশ।
ট্রাফিক ও সেটলমেন্ট রেট বাড়ার কারণে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবা থেকে আসা রাজস্বের পরিমাণও বেড়েছে। আর ট্রাফিক কমার কারণে এএনএস ও আইএসডি সেবা থেকে রাজস্ব কমা।
বিটিসিএল তাদের অপারেটিং ক্ষতির পরিমাণ ২৮৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হয়েছে। এ বছর অপারেটিং ক্ষতি ছিল ৩১২ কোটি ১২ লাখ টাকা। আর গত বছর ছিল ৫৯৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। বিরাট মূল্যহ্রাস সংক্রান্ত ব্যয়ের কারণে এ ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অডিট রিপোর্টে সেবার পেছনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৩৫ কোটি ৪৭ লাখ ২৭ হাজার ৪২৫ টাকা। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেখানো হয়েছে ৪৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৬১ টাকা। প্রশাসনিক ব্যয় দেখানো হয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৬৭ কোটি ৩৭ হাজার ২০৮ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪১৪ কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ২৩৪ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২০১৪ অর্থবছরে ৩৭ কোটি ৯৯ লাখ ৭৪ হাজার ২২৯ টাকা। এ খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫৯ কোটি ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৮১৩ টাকা। মোট রাজস্ব দেখানো হয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫০৪ কোটি ৪৯ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৪ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব দেখানো হয়েছে ১১৪০ কোটি ৫২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭২ টাকা। সব মিলিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লোকসান দেখানো হয় ৩৩৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৫০ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যা ছিল ২৮৫ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার ৭৩১ টাকা। বেশ কজন বিটিসিএল গ্রাহক বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে ব্যর্থ হওয়ায় বিটিসিএল তার গ্রাহকক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেলফোনের সহজলভ্যতা এবং বিটিসিএলের সংযোগ গ্রহণ ও পরবর্তী সেবা দিতে সংস্থাটির অপেশাদারি মনোভাব গ্রাহকদের আগ্রহ নষ্ট করে দিয়েছে।
সেবার মান উন্নয়ন ও সেবাসমূহের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার সংস্থাটিকে এগিয়ে নিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এক্ষেত্রে বিটিসিএলকে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় যে উদ্দেশ্যে বিটিসিএল কোম্পানি করা হয়েছিল তা পুরোপুরি ব্যর্থ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে বিটিসিএলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কী করার আছে। যেখানে হাতের কাছে মোবাইল ফোন, সেখানে ঘরে থাকা ল্যান্ড ফোনে কতটা ভরসা করবেন গ্রাহক।