বেঙ্গালুরু শহরে বিজয় মালিয়া এবং আরও এক সিন্ডিকেটের পর তাঁর গ্যারাজেই এল মারসিডিজ মেবাচ। দাম ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। সদ্য জার্মানি থেকে কিনে এনেছেন। তিনি না কোনও নামী দামি শিল্পপতি! না পরিবার সূত্রে নেতা-মন্ত্রী ঘরোয়ানার ছাপ রয়েছে। অত্যন্ত ছাপোষা মানুষ এই রমেশ বাবু। বেঙ্গালুরু শহরে একটি সেলুন রয়েছে তাঁর। মাত্র ৭৫ টাকা খরচ করলেই রমেশের সেলুনে আরমসে চুল কাটা যায়। তা বলে আম-নাপিতের কাছে মারসিডিজ মেবাচ! শুধুই মারসিডিজ নয়, তাঁর বাড়ির পার্কিং লটে সাজানো রয়েছে রোলস রয়েস, ভকসওয়াগনের মতো হরেক বিলাসবহুল গাড়ি। এত বহু মূল্যের সব গাড়ি কীভাবে কিনলেন রমেশ বাবু?
রমেশের গ্যারেজে একাধিক বিলাস বহুল গাড়ি রয়েছে
গল্পটা শুরু হয়েছিল সেই ন’বছর বয়স থেকে। ১৯৭৯ সাল। যখন তাঁর বাবাকে হারিয়েছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর অভাব অনটন যেন নিত্য সঙ্গী হয়ে পড়ে। বাধ্য হন স্কুল ছাড়তে। এর পর বাবার ছোট্ট সেলুনেই কাজে লেগে পড়েন তিনি। কিন্তু স্বপ্ন দেখার হাল ছাড়েননি রমেশ। তাঁর কথায়, “আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্বের প্রত্যেকটা দামি গাড়ি এক দিন আমার কাছে থাকবে।” অনেক কষ্টেশিষ্টে টাকা জমিয়ে ১৯৯৪ তে একটি মারুতি ওমনি কিনে ফেলেন তিনি। সেই গাড়ি বেঙ্গালুরু শহরে ভাড়া খাটানো শুরু করলেন। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রমেশকে। বিলাসবহুল গাড়ি একটার পর একটা কিনে নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে গেছেন একটু একটু করে।
সেলুনের পাশাপাশি রমেশ কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন গাড়ি ভাড়া খাটানোর নতুন ব্যবসায়। তবে, সেলুনে যেতে এক দিনও ভোলেননি। এখন তাঁর প্রাসাদে ১৫০টি বিলাসবহুল গাড়ি। কিন্তু রোজ নিয়ম করে সেলুনে যান। গ্রাহকদের পছন্দ মতো চুলও কাটেন। তাঁর কাছে যখন বহু মূল্যের গাড়ি-প্রাসাদ রয়েছে, এখনও সেলুনে এসে চুল কাটার কারণ কি? সেই প্রসঙ্গে রমেশ জানান, “ বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মা অনেক কষ্টে আমাকে মানুষ করেছে। যা কিছু সাফল্য পেয়েছি এই সেলুনের হাত ধরেই।” তিনি আরও বলেন, “এর পরও হয়ত আরও দামি গাড়ি কিনব। কিন্তু সেলুনে কাজ করা কখনও বন্ধ করব না।”
পাশাপাশি সেলুনও চালাচ্ছেন রমেশ
২০১১ সালে রোলস রয়েস কিনে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছিলেন রমেশ। এবারে তাঁর পার্কিং লটে নতুন সংযোজন মারসিডিজ মেবাচ। তাই আবারও বিস্ময়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছেন বেঙ্গালুরুরে বছরে ৪৫-এর ‘বিস্ময়’ নাপিত।