ঢাকা; ঢাকা সফরে আসছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ভারপ্রাপ্ত) উইলিয়াম ই টড। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই তার সফরটি হতে পারে। জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের যাত্রা শুরুর পর স্টেট ডিপার্টমেন্টের উচ্চ পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধির এটাই হবে প্রথম বাংলাদেশ সফর। ওবামা প্রশাসনের সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের বিদায়ের পর তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন আগে থেকে সেখানে প্রিন্সিপাল ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি (পিডাস) হিসেবে দায়িত্বপালনকারী উইলিয়াম ই টড। বর্তমানে তিনি ওই পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর বাংলাদেশ সফরে আগ্রহী কূটনীতিক উইলিয়াম টডের সফরসূচি চূড়ান্ত করতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট।
পররাষ্ট্র সচিবের দপ্তরে প্রায় দু’ঘণ্টার বৈঠক শেষে (সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে) উপস্থিত গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন রাষ্ট্রদূত। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, ‘হ্যাঁ, তিনি শিগগিরই ঢাকা আসছেন। তার সফর নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে।’ ওই সফরের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সেগুনবাগিচার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, নতুন প্রশাসন, নতুন নতুন ক্ষেত্র নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে। তবে দুই দেশের বিদ্যমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতা এবং চলমান সহযোগিতা যেমন সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনের মতো (উভয়ের কাছে) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ই টডের সফরের আলোচনায় থাকবে।
ওই কর্মকর্তার মতে, উইলিয়াম টডের ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সাক্ষাতের আগ্রহ দেখিয়েছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। সেগুনবাগিচা সেই প্রস্তাব বিবেচনা করছে বলে জানান তিনি। ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন দূত বার্নিকাট বলেন, সাধারণত ক্ষমতা পরিবর্তনে রাষ্ট্রের অবস্থান বা নীতির পরিবর্তন হয় না। যারা আগে আমাদের বন্ধু ছিল, তারা এখনো বন্ধু। আমাদের মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়নি, আর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ও অপরিবর্তিত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নীতি পরিবর্তন করতে পারে এমন কথা তিনি চিন্তাই করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন বার্নিকাট। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের বিশেষ বাজার সুবিধা জিএসপি ফেরত পাওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, এটি মার্কিন কংগ্রেসের এখতিয়ার। আমি সব সময়ই বলি, বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পাবে। কিন্তু এর জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত জিএসপি অ্যাকশন প্ল্যান পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি বিশেষত তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র একটি অ্যাকশন প্ল্যান ঘোষণা করে। ১৬ দফা ওই প্ল্যান অব অ্যাকশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা বিষয়ে বার্নিকাট বলেন, সাব সাহারান এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো এ সুবিধা পায়। কারণ তাদের উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল। এ সুবিধা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ আলোচনা জোরদার করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমনও হতে পারে, বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে নয়, দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থার অধীনে বাংলাদেশ এ সুবিধা পেতে পারে।
মার্কিন দূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের দাবিটি জোরালোভাবে ফের উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ওই সুবিধা চায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় একক বাজার। আমরা তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে চাই। সুবিধাটি পেলে দুই দেশের বাণিজ্য আরো বাড়বে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পেতো। বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ২০১৩ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) সেই সুবিধা স্থগিত করে। সুবিধাটি পুনর্বহাল বা ফেরতে গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকা-ওয়াশিংটন দরকষাকষি চলছে।