আমেরিকার উদ্দীপনাকে নতুন করে সামনে তুলে ধরলেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর কংগ্রেসে দেয়া প্রথম ভাষণে তিনি এমন উদ্দীপনার কথা তুলে ধরেন। এ সময় বার বার তুমুল করতালি দিয়ে তাকে অভিবাদন জানানো হয়। তিনি দীর্ঘ এক ঘন্টা বক্তব্য রাখেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় দেয়া ওই ভাষণের সময় ট্রাম্প ছিলেন খুব শান্ত মেজাজে। তিনি এ সময় বেশ কিছু প্রসঙ্গ সামনে তুলে ধরেন। নিন্দা জানান সম্প্রতি কানসাস শহরে ভারতীয় এক ব্যক্তিকে হত্যার। বললেন, যুক্তরাষ্ট্র যে মহৎ তার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। তবে তার বক্তব্যে যেসব বিষয় উঠে এসেছে তা অনেকটা আগের মতোই। তিনি সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি জিনিসপত্র কিনতে ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাজে নিয়োগ দিতে। এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে একটি বিষয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেরও অবশ্যই ন্যায্য অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দূঢ়তার সঙ্গে ন্যাটোকে সমর্থন করে। কিন্তু এক্ষেত্রে ন্যাটোর সদস্যদেরকে অবশ্যই আর্থিক বিষয়টি বাধ্যতামুলকভাবে পূরণ করতে হবে। তিনি কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান ওবামাকেয়ার বাতিল করে এর পরিবর্তে অন্য কিছু চালু করতে। মধ্যবিত্তের জন্য বিশাল অংকের আয়কর কমিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। অবকাঠামো খাতে এক লাখ কোটি ডলার তহবিল পাস করানোর আহ্বান জানান কংগ্রেসের প্রতি। তিনি যখন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন তখন মুর্হুর্মূহু করতালিতে মুখরিত হয় কংগ্রেস। দৃঢ়তার সঙ্গে ‘এ গ্রহ থেকে মুখোশধারী এসব শত্রুকে ধ্বংস’ করে দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেন তিনি। ইয়েমেনে আল কায়েদার সন্দেহজনক একটি ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলের সদস্যরা। এ টিমে ছিলেন রায়ান ওয়েনস নামের একজন সদস্য। তিনি ওই ঘেরাওকালে নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ট্রাম্পের বক্তব্যকালে কংগ্রেসে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী ক্যারিন ওয়েনস। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন রায়ান ওয়েনসের প্রতি শ্রদ্ধা, শোক প্রকাশ করছিলেন তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন ক্যারিন ওয়েনস। ট্রাম্প যখন বলতে থাকেন, স্বর্গে ঠাঁই পেয়েছেন রায়ানস, তখন অঝোরে কাঁদেন ক্যারিন। তার গ- গড়িয়ে পড়তে থাকে অশ্রু। দু’হাতে তিনি চিবুক থেকে তা মুছে নিচ্ছিলেন। তার পাশে তখন দন্ডায়মান ট্রাম্পকন্যা ইভানকা ট্রাম্প তাকে সান্তনা দিচ্ছিলেন। এ সময় কংগ্রেসে এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এদিন রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট উভয় দলের প্রতি আহ্বান জানান যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে। কংগ্রেসে মুহুর্মূহু করতালি পড়লেও ডেমোক্রেটদের অনেক সময়ই দেখা গেছে নির্বিকার। তারা হাততালি দিয়েছেন খুব কমই। আবার ট্রাম্পের বক্তব্যের সময় তাদের কাউকে কাউকে প্রকাশ্যে হাসতে দেখা গেছে। বার বার টেলিভিশনের ক্যামেরা ঘুরে যাচ্ছিল ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের দিকে, প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির দিকে। তাতে তাদের এমন দৃশ্য ফুটে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষণ দেয়ার সময় কংগ্রেসে উপস্থিত ছিলেন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। তার স্বামী বক্তব্য রাখার অনেকটা আগেই তিনি হলে গিয়ে উপস্থিত হন। গ্যালারিতে গিয়ে বসেন ক্যালিফোর্নিয়ার তিনজন অধিবাসীর সঙ্গে। ওই তিনজনের প্রিয়জনকে যুক্তরাষ্ট্রে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ওদিকে ওবামাকেয়ার বাতিলে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন ডেমোক্রেটরা।