২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি করে ৫৩০ কোটি ৫৬ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা এর আগের বছরের চেয়ে ১.৭৭ শতাংশ কম। ২০১৫ সালে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৫৪০ কোটি ডলার। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানির হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভিয়েতনামসহ ১১টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি করেছিল। এটি বাস্তবায়িত হলে টিপিপিভুক্ত দেশ পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে নিজেদের মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা ভিয়েতনামের সঙ্গে আগে থেকে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করেছিলেন। তাই তাদের রপ্তানি আয় ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টিপিপি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।
অটেক্সার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ সালের তুলনায় গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৫.২৩ শতাংশ কম, অর্থাৎ ৮ হাজার ৭১ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। ফলে দেশটিতে চীন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও মেক্সিকোর মতো বড় পোশাক রপ্তানিকারক দেশের রপ্তানি কমে গেছে। তবে ব্যতিক্রম হচ্ছে ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ছয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে ভিয়েতনামই গত বছর সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর ১ হাজার ৮০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। এই আয় ২০১৫ সালের ১ হাজার ৫৬ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে ২.৩১ শতাংশ বেশি।
পরিসংখ্যান মতে, গত বছর ১৮৬ কোটি বর্গমিটার কাপড়ের সমপরিমাণ পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই পরিমাণটি ২০১৫ সালের ১৮৭ কোটি বর্গমিটারের চেয়ে ০.৪১ শতাংশ কম। অর্থাৎ রপ্তানি হওয়া পোশাকের মূল্য কমে গেছে। এদিকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি কমে গেছে চীনের। বাজারটিতে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক চীন গত বছর ২ হাজার ৭৯২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এটি ২০১৫ সালের ৩ হাজার ৫৪ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ কম। বর্তমানে চীনের বাজার হিস্যার পরিমাণ ৩৪.৫৯ শতাংশ। এক বছর আগে ছিল ৩৫.৮৬ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও মেক্সিকো। বাজারটিতে গত বছর ইন্দোনেশিয়া ৪৭০ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০১৫ সালের চেয়ে তাদের রপ্তানি কমেছে ৪.৬৮ শতাংশ। ভারতের পোশাক রপ্তানি ছিল ৩৬৪ কোটি ডলার। তাদের রপ্তানি কমেছে ০.৬৯ শতাংশ। মেক্সিকো ৩৪০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। তাদের রপ্তানি কমেছে ৪.৩৬ শতাংশ।
বিজিএমইএ’র নেতারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ বাজারটিতে মন্দাভাব চলছে। তাই সব রপ্তানিকারক দেশের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে আশার খবর হচ্ছে, টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে সরিয়ে নেয়ায় ভিয়েতনাম যে সুবিধা পেয়েছিল, সেটি এখন থাকছে না। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক আমদানি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমলেও বাজার হিস্যা বেড়েছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ৬.৩৪ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিল। গত বছর সেটি বেড়ে ৬.৫৭ শতাংশ হয়েছে। বাজারটিতে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক। দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার।
এদিকে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাস অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার ডলার; যা এ সময়ের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ শতাংশ কম। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এবার এ খাতের পণ্য রপ্তানি আয় ৪.১৪ শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৮০৬ কোটি ৩ লাখ ডলার। একই সময়ে ওভেন গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৮৩৫ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
এতে জানানো হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ১ হাজার ৩৩৫ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ওই বছরের সাত মাসে আয় হয়েছিল ৭৬০ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আলোচ্য খাতে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে নিটওয়্যার পণ্যে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮০৫ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার। আলোচ্য সময়ের মধ্যে এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৮০৬ কোটি ৩ লাখ ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ০.০২ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আলোচ্য খাতের রপ্তানি আয় ৬.০৩ শতাংশ বেড়েছে।