মোহাম্মদ রাহাদ রাজা (ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি) # কুষ্টিয়া জেলার মিরপুরে ১১টি পরিবারের ৩৬ সদস্যকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতপন্থিদের মসজিদ তৈরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মতবিরোধ হওয়ায় স্থানীয়রা তাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তাদের দাবি তারা আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের সদস্য। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি এরা হলেন- কাদিয়ান। কাদিয়ানের অভিযোগে তাদের একঘরে করা হয়েছে বলছেন তারা।
একঘরে করে রাখার ফলে তারা সেখানে চলাফেরা করতে পারছেন না, দোকানপাট থেকে কিছু কিনতে পারছেন না। এমনকি জমিতে সেচের পানি পর্যন্ত দিতে পারছেন না। তারা এক ধরনের নিরাপত্তাহীন পরিবেশের মধ্যে বাস করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলার মিরপুর উপজেলাধীন চিথলিয়া ইউনিয়নের মহিষাখালী গ্রামে ধর্মসভা করে ঘোষণা দিলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ১৯৯২ সাল থেকে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলীয়া ইউনিয়নের মহেষাখোলা গ্রামের কিছু মানুষ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের যোগ দিতে শুরু করেন। গ্রামে সব মিলিয়ে এখন ১১টি আহমদিয়া পরিবার আছে।
ভুক্তভোগী ওই গ্রামের মৃত রজব আলী মণ্ডলের ছেলে ফরিদ আহম্মেদ (৩২) জানান, ইতঃপূর্বে আমরা জুম্মার নামাজ পড়তে প্রায় ১২ কি.মি. দূরত্বে ভেড়ামারা সাতবাড়িয়াস্থ উত্তর ভবানীপুর আহমদিয়া মসজিদে যেতাম। অনেক দূর হওয়ায় কষ্ট লাঘবে আমার নিজ বাড়িতে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করি। এতে স্থানীয় মুসল্লিরা বাধা দিয়ে তাদের সাথে একই মসজিদে একই ইমামের পেছনে নামাজ পড়তে চাপ দেয়। তাদের এই চাপকে উপেক্ষা করে নিজের বাড়িতেই নামাজ ঘর করে নামাজ পড়ার উদ্যোগ নেয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে হুজুর ডেকে প্রকাশ্য সভা করে আমাদের উচ্ছেদ করাসহ নানা হুমকি দেয়ার পাশাপাশি আমাদের সামাজিকভাবে একঘরে করার ঘোষণা দেন। আর এর সবকিছুর নেতৃত্বে ছিলেন, স্থানীয় মৃত ছোবহান মণ্ডলের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য ছাত্তার মেম্বার, স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি জিয়া ও এলাজ মণ্ডলের ছেলে আনিছসহ বেশ কয়েকজন। তবে এক্ষেত্রে চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের ইন্ধন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
রঞ্জনা খাতুন নামের এক নারী জানান, আমাকে কাদিয়ানের বোন বলে আখ্যায়িত করে আমি যে ব্রাক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম সেখান থেকে আমাকে বের করে দেয়া হয়েছে। এতে আমার কি দোষ? আর আমরা তো কাদিয়ান না আমরা আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের সদস্য। কলেজ ছাত্রী রিনা খাতুন জানান, আমি বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার পথে কোনো ভ্যান, অটোরিকশা নিতে চাই না। উঠলেও নামিয়ে দেয়। আমাদের রাস্তাঘাটে চলতে দিচ্ছে না, গাড়ির সমস্যা, চিকিৎসার সমস্যা। স্থানীয় জিয়াউর রহমান নামের একজন জানান, আমরা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে বসেছিলাম। সকলের সিন্ধান্তে আমরা বিষয়টি সমাধান করেছি। এ ব্যাপারে চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন পিস্তল জানান, “তাদেরকে এক ঘোরী করা হয়নি। ধর্ম নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো। তবে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।” একঘরে করা হয়েছে এমন সংবাদে ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। এ ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোনো প্রকার কথা বলতে রাজি হননি।