ডেস্ক; যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্থানীয় বেশির ভাগ মিডিয়ার সাংবাদিকের জন্য হোয়াইট হাউজে প্রেস ব্রিফিংয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এমন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে সিএনএন, বিবিসি, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, লস অ্যানজেলেস টাইমস, নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ, বুজ ফিড, দ্য হিল, দ্য ডেইলি মেইল প্রভৃতি।
এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে সংবাদ মাধ্যম। কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে সরকারি সিদ্ধান্তের। বিবৃতি দেয়া হয়েছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে। শুক্রবার কিছু সাংবাদিকদের নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী, অফ ক্যামেরা ব্রিফিংয়ে এসব সংবাদ মাধ্যমের হোয়াইট হাউজে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কথা জানান প্রেস সেক্রেটারি সিন স্পাইসার। সাধারণত তিনি জেমস এস ব্রাডি প্রেস ব্রিফিং রুমে ব্রিফিং করে থাকেন। কিন্তু তার পরিবর্তে শুক্রবার তিনি বেছে নেন ওয়েস্ট উইং অফিস। সেখানেই সাংবাদিকদের সামনে এ তথ্য তুলে ধরেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেনছে এমন মিডিয়া রয়েছে ওই সব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে। তবে প্রেস সেক্রেটারি হোয়াইট হাউজে বিফ্রিংয়ে যাদেরকে অনুমোদন দিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে ব্রেইতবার্ত নিউজ, ওয়ান আমেরিকা নিউজ নেটওয়াক, দ্য ওয়াশিংটন টাইমস সহ উগ্র ডানপন্থি বেশির ভাগ সংবাদ মাধ্যম। এ ছাড়া এ তালিকায় রয়েছে এবিসি,সিবিএস, এনবিসি, ফক্স নিউজ, রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ। সরকারের এমন পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক ডিন বাকুয়েট। এক বিবৃতিতি তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন দলের সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এর আগে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। নিউ ইয়র্ক টাইমস ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমরা। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থে স্বচ্চ সরকার ব্যবস্থাপনায় মুক্ত মিডিয়া অবশ্যই প্রয়োজন। বুজফিড-এর প্রধান সম্পাদক বেন স্মিথ তার সংবাদ মাধ্যমকে ওই তালিকায় রাখায় তিনিও বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, এই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত প্রশাসনের সুষ্ঠুতা ও তার আগ্রাসী রূপ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আমাদের সামনে কোনো প্রতিবন্ধকতা হবে না। তারা সংবাদ মাধ্যমকে শাস্তি দেয়ার জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার তীব্র বিরোধিতা করি আমরা। ওদিকে ওয়াশিংটনে বিবিসি’র ব্যুরো প্রধান পল ডানাহার বলেওেছন, আমরা বুঝতে পারি কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি হয় যখন হোয়াইট হাউস মিডিয়ার বিরুদ্ধে কড়াকড়ি আরোপ করেন। এটা হয় জায়গা স্বল্পতা সহ বিভিন্ন কারণে। কিন্তু শুক্রবার তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা এর আওতায় আসে না। এবার যা করা হয়েছে তাতে নির্বাচিত কিছু মিডিয়াকে ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। বিবিসির মতো আরও মিডিয়াকে সেই অনুমতি দেয়া হয় নি। হোয়াইট হাউজের প্রতিদিনের ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকেন বিবিসির একজন প্রতিনিধি। কিন্তু কি কারণে বিবিসিকে সে তালিকার বাইরে রাখা হলো সে বিষয়ে আমরা স্পষ্ট নই। এ বিষয়ে আমরা হোয়াইট হাউজের প্রেস টিমের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করি। আমাদের রিপোর্টিং অবশ্যই সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন। ওদিকে বার্তা সংস্থা এপি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্ত বয়কট বা প্রত্যাখ্যান করতে ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে পরিস্থিতি না বুঝতে পেরে ব্রিফিংয়ে উপস্থি হয়েছিলেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একজন সাংবাদিক। পরে তারাও প্রেস ব্রিফিং বয়কট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক মুখপাত্র একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ব্রিফিংয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু মিডিয়াকে বাইরে রাখার হোয়াইট হাউজের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। আমরা যদি আগে থেকে বিষয়টি জানতে পারতাম তাহলে শুক্রবারের ওই ব্রিফিংয়ে অংশ নিতাম না। ভবিষ্যতে আমরা এমন ব্রিফিং থেকে বিরত থাকবো। হোয়াইট হাউজ করেসপন্ডেন্টস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জেফ ম্যাসন বলেছেন, তার সংগঠন সরকারের সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ জানাবে। ওদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। ট্রাম্প প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তকে উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন এর নির্বাহী পরিচালক জোয়েল সিমন। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফক্স নিউজকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। সে বিষয়ে ফক্স নিউজের উপস্থাপক ব্রেট বেইয়ার টুইটারে লিখেছেন, ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমাদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তখন সিএনএন ও নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ কিছু মিডিয়া আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। বিশ্বাসযোগ্য সব মিডিয়ার সামনে হওয়া উচিত হোয়াইট হাউজের ব্রিফিং। উল্লেখ্য, মিডিয়াকে মার্কিন জনগণের শত্রু হিসেবে এরই মধ্যে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বার বার মিডিয়াকে আক্রমণ করে বক্তব্য রেখেছেন। প্রথমে তিনি ওয়াশিংটন ডিসি’তে কনজার্ভেটিভ পলিটিক্যাল একশন কনফারেন্সে মিডিয়াকে মার্কিন জনগণের ‘দ্য এনিমি অব দ্য পিপল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি আরও বলেছেন, যেসব মানুষ খবর বানায় ও সূত্র তৈরি করে আমি তাদের বিরোধী।