প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে ঢাকায় এসেছেন। সফরকালে তিনি লা মেরিডিয়ান হোটেলে থাকবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দুপুরে চীনের বেইজিং থেকে ঢাকায় আসেন এস জয়শঙ্কর। বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে তিনি পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। আগামীকাল শুক্রবার সকালে দিল্লির উদ্দেশে তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
দুই দফায় শেখ হাসিনার সফরটি পিছিয়ে যাওয়ার পর আজ ঢাকায় এলেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। তিনি সম্ভাব্য সফরসূচি এবং ওই সফরের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করবেন। সফরের চূড়ান্ত সূচি ঠিক করতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আভাস পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে দুই দফা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর পিছিয়ে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সফরসূচি ঠিক হয়নি। দুই পক্ষ এখন আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে সফরটি আয়োজনের কথা ভাবছে।
এবার দিল্লি সফরের সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির অতিথি হিসেবে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকবেন। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীকে এই সম্মান জানানো হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার এবারের দিল্লি সফরে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয় তিস্তা চুক্তির জট খুলছে না। কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে স্পষ্ট করেই বলা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির লড়াইয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তিস্তা চুক্তি। এর পাশাপাশি সম্প্রতি গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে আলোচনা থেকে সরে আসার কথা বলছেন মমতা ব্যানার্জি। কারণ ব্যারাজটি হলে রাজ্যের কিছু এলাকা ভাঙনের কবলে পড়বে, এই আশঙ্কায় তিনি গঙ্গা ব্যারাজের বিরোধিতা করছেন। এ নিয়ে দুই দেশের একটি কারিগরি কমিটি থেকে রাজ্যের প্রতিনিধিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মমতা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থলসীমান্ত চুক্তির মতো সব পক্ষকে নিয়ে তিস্তা চুক্তি সইয়ের কথা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৫ সালের জুনে ঢাকায় এসে এ জন্য আরও সময় চেয়েছিলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে অগ্রাধিকার প্রসঙ্গ ও দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয় হিসেবে বিষয়টি বাংলাদেশ যৌক্তিকভাবেই তুলবে। তা ছাড়া ভারতকে নিয়েই যেহেতু বাংলাদেশ গঙ্গা ব্যারাজ তৈরির কাজ শুরু করতে চায়, এ জন্য যৌথ কারিগরি কমিটি করা হয়েছে। বাংলাদেশ আশা করবে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে বিষয়টি নিয়ে ভারত সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার সহযোগিতাকে নতুন স্তরে নিতে রূপরেখা চুক্তি করতে চায় ভারত। এ নিয়ে এক সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি চলছে।