অতি হুজুগে কেউ কেউ ব্যানারে ৩০ লাখ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, আবার কেউ কেউ হাজারো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে এসব ভুল ব্যানার, পোস্টার। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে দেশজুড়ে।
চট্টগ্রামের ফিরোজ পাটোয়ারীর সৌজন্যে ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগের পক্ষে যে ব্যানার বানানো হয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে, ‘হে অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি হাজারো মা বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে শহীদ দিবস আমি কি তোমায় ভুলিতে পারি’।
‘৩০ লাখ শহীদের প্রতি’ শ্রদ্ধা জানিয়ে চট্টগ্রামের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা নাহিদুল ইসলাম জাবেদের ‘সৌজন্যে’ যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনুর ‘পক্ষে’ একটি পোস্টার ছাপানো হয়েছে।
শাহানা বাজপেয়ী নামের একজন গায়িকা নিজের স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘নিজের ভাষায় কথা বলবে বলে একটা গোটা দেশ যুদ্ধ করেছিল। হাজার হাজার প্রাণ গিয়েছিল, বসতবাটি ছিন্নভিন্ন হয়েছিল, হাজার হাজার বীরাঙ্গনার জন্ম হয়েছিল। আমরা যেন কোনো দিন না ভুলি। জয় বাংলা!’
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মাস্টারমাইন্ড ব্যানারে শহীদ মিনারের ছবির ওপরে মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠের ছবি ছাপিয়েছে।
এসব ভুল ব্যানার নিয়ে দেশব্যাপী চলছে সমালোচনার ঝড়।
এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ প্রভাষ আমিন তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তারা এসব আয়োজন করেছেন। কিন্তু করার আগে একটু ইতিহাসটা জেনে নিলে ভালো হয়। সাত বীরশ্রেষ্ঠ জীবন দিয়েছিলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, ৩০ লাখ মানুষের শহীদ হওয়া ও হাজারো মা-বোনের ত্যাগের ইতিহাসও মুক্তিযুদ্ধের; ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের নয়। …আমরা শ্রদ্ধা যতটুকুই জানাই, তা যেন সঠিক হয়।’
গাজীপুরের বাংলাদেশ যুবমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান ব্যানারে নিজের একটি বড় ছবি দিয়ে রক্তিম ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
একাত্তর টেলিভিশনের ডিরেক্টর নিউজ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘এবার পাওয়া গেলো একজন বাম…একুশের শহীদদের তিনি রক্তিম ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন!!!! সাথে এলাকাবাসী ফ্রি’।
বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও জাদুঘরের নির্বাহী পরিচালক এম আর মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে মহান শহীদ দিবস পালন বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। বিষয়টি উৎসবে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ছিল ভাষা আন্দোলন। সেই সূচনার ইতিহাসই আমরা ভুলতে বসেছি। এই তো সেদিন একজন প্রশ্ন করলেন, ভাষাশহীদদের কতজন বেঁচে আছেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিজেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’
মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার জন্য জীবনদানের ঘটনা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আগে আর ঘটেনি। বাংলা মায়ের বীরসন্তানেরা মাতৃভাষার জন্য এই দিনে বুকের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত করে পৃথিবীর ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব নজির সৃষ্টি করেছিলেন।
” মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মদানের এই অতুলনীয় ঘটনা স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। আজ বাংলাদেশের সঙ্গে সারা বিশ্বেই দিনটি পালিত হচ্ছে।