ঢাকা; দেশকে গণতন্ত্রহীন রেখে আওয়ামী লীগই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে দুদিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা করে বিএনপি। মির্জা আলমগীর বলেন, ভাষা আন্দোলনের চেতনা ছিলে মূলত গণতান্ত্রিক চেতনা এবং ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনাটা ছিলো গণতান্ত্রিক চেতনা। এখনকার শাসকগোষ্ঠি বৃহত্তর জনগোষ্ঠির যে আশা-আকাক্সক্ষা পদদলিত করে দেশে একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বন্দুক-অস্ত্র ব্যবহার করে জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো তারা দাবিয়ে রাখছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ক্ষমতাসীনরা ভাষা আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গেও বেঈমানি করেছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়নের চিত্র তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদের হাজারের উপর ভাই এই শাসকগোষ্ঠির নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছে, পাঁচশর উপরে ভাই-বন্ধু গুম ও নিখোঁজ, হাজার হাজার নেতা-কর্মী পঙ্গু। নিপীড়ন-নির্যাতনে কেউ বাসা-বাড়িতে থাকতে পারে না। আমাদের অনেক কর্মীরা নিজের বাড়িতে থাকতে পারে না, অন্য বাড়িতে থাকে। নেতা-কর্মীরা নিজেদের পাড়ায় থাকতে পারে না, অন্য পাড়ায় গিয়ে থাকে। এই হচ্ছে রাজনৈতিক নিপীড়নের চিত্র। বিএনপি মহাসচিব বলেন, মিথ্যা বলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটা কল্পকাহিনী তৈরি করে জনগণকে বোঝানো হচ্ছে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে। এত প্রবৃদ্ধি না কি কখনও হয়নি। ২০০২- ২০০৫ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যে অঙ্কে পৌঁছেছিল, আওয়ামী লীগের এই সরকার এখনও তা অতিক্রম করতে পারেননি। তিনি বলেন, সে সময় গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ উদীয়মান ব্যাঘ্র। এই যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, তা একদিনে না, ধারাবাহিকভাবে এসেছে। বিএনপি সরকারের আমলেই এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি মাত্রা পেয়েছিল। নতুন নির্বাচন কমিশন ও আগামী নির্বাচনের বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে, তার প্রধান যাকে নিযুক্ত করা হয়েছেন তিনি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ দলীয় একজন ব্যক্তি। কেউ তাকে চেনে না। আগামীতে যে নির্বাচন আসবে, সেই নির্বাচন আমরা দেখতে চাই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেটা যে নামেই চিহ্নিত করা হোক না কেন- সহায়ক সরকার বলি বা অন্য কোনো সরকার বলি, তাকে সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ হতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে যে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি, সেগুলো ধুলিসাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। আজকে সত্যিকার অর্থে একদলীয় একটা সরকার চলছে। এটার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি, এটার জন্য ভাষা আন্দোলনে আমি কারাবরণ করিনি। এটার জন্য শহীদ বরকত, সালাম, রফিক রক্ত দেয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় সভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য দেন।