বাদাম বিক্রেতা থেকে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতা চাট্টিখানি বিষয় নয়। আর সেটি করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশেরই এক উঠতি তারকা। এই বিস্ময় বালকের নাম দ্বীন ইসলাম হোসেন হৃদয়। চলমান রোল বল বিশ্বকাপে প্রথম তিন ম্যাচে অংশ নিয়ে করেছেন রেকর্ড সংখ্যক ১৫ গোল। যা যে কোনো বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। উচ্চতায় ছোট হওয়ায় দলে তাকে মেসি বলে ডাকা হয়। তার সবচেয়ে বড় গুণ গতি ও ড্রিবলিং। কাউন্টার অ্যাটাকে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন তিনি। এ তো শুরু। সামনে বিশ্ব দরবারে নিজেকে আরো তুলে ধরতে চান তিনি। হৃদয় জানান, ‘আরো গোল করতে চাই। দেশকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে চাই। রোল বলে নিজেকে আরো বড় হিসেবে দেখতে চাই।’
বাদাম বিক্রেতা থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বনে গিয়েছিলেন জিমি কার্টার, চা বিক্রেতা থেকে নরেন্দ্র মোদির ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘটনাতো রীতিমত সবার মুখে মুখে! সেই পথেই হাঁটছেন হৃদয়। বয়স মাত্র ১৫ বছর। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া হৃদয় থাকেন মিরপুরে। বাবা গত হয়েছেন বহুদিন আগে। মা আর দুই বোন নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। পরিবারের আর্থিক অবস্থা করুণ হওয়ার দরুন পড়ালেখার চিন্তা থেকে সরে আসেন। কাঁধে তুলে নেন সংসারের ভার। শুরু করেন বাদাম বিক্রি। যেই বয়সে তার প্রতিবেশীদের ছেলেমেয়েরা কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যেতো, সেই বয়সে তিনি কাঁধে বাদামের টুকরি নিয়ে ছোট্ট বাসা থেকে বের হতেন। ফেরিওয়ালা হয়ে রাজধানীর অলিগলি ঘুরেছেন। সবই তার চেনা। ঢাকার প্রত্যেক রাস্তায় তার পদচারণা আছে। কিন্তু, এ পেশায় যে তার মন টানে না। তার ভালো লাগে স্কেটিং করতে। পড়াশোনা করতে। এ যুগে স্কেটিং তরুণ সমাজের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে। সেই ভালো লাগাটাও মানুষের দেখে দেখে। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা তারপর নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়া। স্বপ্ন থাকলে কঠোর পরিশ্রমে যে সেটা ধরা যায় তার অনন্য উদাহরণ হৃদয়। রায়েরবাজার শাখার ইউসেফ স্কুলে ঢুকে শুরু করেন স্কেটিং। এরপরে স্বপ্নের গল্পটা পরিবর্তন হয়। সুযোগ মেলে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিংয়ে অনুশীলন করবার। উঠতি প্রতিভা দেখে স্কুল থেকে ৪০ হাজার টাকা উপহার দেয়া হয় তাকে। তা নিয়ে স্কেটিং সামগ্রী কেনেন তিনি। শুরু করেন কঠোর অনুশীলন। এরপরেই ফেডারেশনের নজর কাড়েন। বর্তমানে স্কেটিং ফেডারেশনে চাকরি করছেন হৃদয়। ছোট ছেলে-মেয়েদের অনুশীলন করিয়ে যা পান তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। ভালো স্কেটার হওয়ার সুবাদে সুযোগ মেলে রোল বল পুরুষ দলে। সুযোগ পেয়ে মাত্র দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন হৃদয়। এ দুই ম্যাচেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন। পেয়ে যান বিশ্বকাপে সেরা ছয়ে খেলার টিকিট। আর চলমান রোল বল বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে অংশ নিয়ে করেছেন রেকর্ড সংখ্যক ১৫ গোল। যা যে কোনো বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। এতো খেলা থাকতে কেন রোলার স্কেটিংয়ে আশা জানতে চাইলে হৃদয় জানান, এটা আসলে খুবই মজার খেলা। আমার অনেক ভালো লাগে। এই ভালো লাগা থেকেই আমি খেলাটার সঙ্গে জড়িয়ে গেছি। বিশ্বকাপে নিজের স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের এই সেরা স্কেটার জানান, ভারত অনেক শক্তিশালী দল। তাদের হারিয়ে হয়তো শিরোপা জিততে পারবো না। এ কারণে আমরা ফাইনালে খেলতে পারলেই খুশি।