ঢাকা; দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং তাদের সতীর্থদের অংশগ্রহণ করাতে না পারার অতৃপ্তি নিয়েই বিদায় নিতে হয়েছে কাজী রকিবউদ্দীন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে। মঙ্গলবার সপ্তাহকাল ভারপ্রাপ্ত সিইসির দায়িত্ব পালন করা বিদায়ী ইসির সর্বশেষ কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ এ অতৃপ্তির কথা জানিয়ে বিদায় নিয়েছেন। তবে তাদের মেয়াদে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলেও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
এদিকে দ্বিতীয়বারের মতো সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন বুধবার দায়িত্ব নিচ্ছে। বিকেল ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ গ্রহণ করে নির্বাচন ভবনে আসবেন তারা। এরপর বিকেল ৫টায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রেস ব্রিফিং করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ও সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ৬ ফেব্রুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করে গঠিত কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে অপর কমিশনাররা বুধবার বিকেল ৩টার আগেই সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। সেখানে জাজেস লাউঞ্জে নতুন কমিশনারদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। এরপর বিকেলেই তারা নির্বাচন ভবনে এসে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। তিনি জানান, নতুন ইসিকে বরণ করতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সব কমিশনারের চেম্বার সজ্জিতকরণ, তাদের ছবি টানানোসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ সম্পাদন করা হয়েছে। বিকেলে নির্বাচন ভবনে এসে তারা নিজ নিজ কক্ষে কিছুক্ষণ বসবেন। এরপর মুখোমুখি হবেন সাংবাদিকদের।
এদিকে গতকাল শেষ অফিস করেছেন রকিব কমিশনের কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদসহ চার কমিশনারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ৮ ফেব্রুয়ারি তারা ইসি থেকে বিদায় নেন। মঙ্গলবার মেয়াদ পূর্ণ হয় এক সপ্তাহ ভারপ্রাপ্ত সিইসির দায়িত্ব পালন করা শাহনেওয়াজের। বিদায় বেলায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে আলাপকালে দায়িত্ব পালনকালীন সুখস্মৃতি রোমন্থনের সঙ্গে সঙ্গে নিজের অতৃপ্তি, অসন্তুষ্টির কথাও বলেন তিনি।
শাহনেওয়াজ বলেন, তাদের মেয়াদে অধিকাংশ নির্বাচন ভালো হলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের শরিক অন্য দলগুলোকে অংশগ্রহণ করাতে না পারায় অসন্তুষ্টি, অপ্রাপ্তির জায়গা রয়ে গেছে। তবে সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দীনের মতো তিনিও মেয়াদকালে কোনো চাপ কিংবা অসহায়ত্ব বোধ করেননি বলে জানান তিনিও। শাহ নেওয়াজ বলেন, আমরা কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হইনি। তবে আমাদের কিছু ডিসেটিসফেকশন ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের সময় একটা রাজনৈতিক দল ও তার জোট নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় সেটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়নি। এতে নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়দায়িত্ব ছিল না। দলগুলো রাজনৈতিক কারণেই নির্বাচনে আসেনি। তবে সব দলের অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় সে জাতীয় নির্বাচনের কিছুটা ফাঁক রয়েছে। তবে আমরা কোনো অবৈধ চাপ কারো কাছ থেকেই পাইনি। সুষ্ঠুভাবেই কাজ করেছি।
নিজেদের মেয়াদে অধিকাংশ নির্বাচন ভালো হয়েছে দাবি করে এ কমিশনার বলেন, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কিছু নির্বাচনী কর্মকর্তার অসহযোগিতার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচন খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে কিছু কিছু প্রার্থী নির্বাচনে জেতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। সে কারণে কিছু নির্বাচন খারাপ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে কাজী রকিবউদ্দীন নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে নির্বাচন কমিনার শাহ নেওয়াজ একই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন। তাই রকিউদ্দীনসহ অন্য তিন কমিশনার ৮ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিলেও শাহ নেওয়াজ বিদায় নিলেন মঙ্গলবার। এদিকে ৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নতুন কমিশন নিয়োগ দেয়। বুধবার শপথ নিয়েই প্রথম অফিস করবেন তারা।