রাতুল মন্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসার রঙ আকাশে বাতাসে। কাক ডাকা ভোর থেকেই শুরু হয়ে যায় ভালোবাসার রঙের ছড়াছড়ি। খুব দ্রুত বাহাড়ী রঙের পোশাক পড়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে ভালোবাসার কাঙ্গালীরা। মনের মানুষের সাথে মিলে ছুটে যান বিভিন্ন পার্ক, রির্সোট ও প্রকৃতির মাঝে।
এরই ধারাবাহিকতায় ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। যেখানে সাপ্তাহিক বন্ধ থাকার কথা প্রতি মঙ্গলবারে সেখানে ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে পার্কটি খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন পার্ক কর্তৃপক্ষ। এমন খবর তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইটে প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে দর্শনার্থীদের জন্য পার্ক সারাদিন খোলা থাকবে। এশিয়ার সর্ববৃহত পার্কটিতে সকাল থেকেই দুরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের পথচারনায় মূখর হয়ে উঠে। দিন যত দৌড়ে পালাচ্ছে তেমনিই ভাবে তার সাথে পাল্লা দিয়ে দর্শনার্থীরাও পার্কে থাকা বিভিন্ন রাইড,প্রকৃতি লোকেশন পরিদর্শন শেষ করার জন্য ঘুরছেন। পার্কে আছে (ড্রাই পার্ক),(প্রজাপতি গোহা),(মাছের রাজ্য), (সিংহ ও বাঘের অরণ্য),(কুমিড়ের জলাধর),(বাচ্চাদের জন্য বিশেষ শিশু ড্রাই পার্ক)সহ শতাধিক এমন ড্রাই পার্ক ও প্রকৃতির বিশাল সার্মাজ্য। আজ ভালোবাসা দিবস থাকায় তরুন তরুনীদের ঢল নেমেছে। পার্কে ছোট বড় সকলের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। দল বেধে বন্ধু বান্ধব মিলেও এসেছে তরুনরা।
সদ্য বিয়ে করা শফিক সুমি দম্পতি এই প্রতিবেদকের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। তারা জানান, গত মাসেই বিয়ে হয়েছে তাদের। শফিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম)। তার স্ত্রী সুমি একটি কলেজের প্রভাষক। বিয়ের পর থেকেই তারা কিছু সময় সকল ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে কাটানোর চিন্তা করেন। কিন্তু কর্ম ব্যবস্তার জন্য হয়ে উঠেনি। তবে শফিক মনে মনে ভেবে রেখে ছিলেন ভালোবাসা দিবসে শত ব্যবস্তা রেখেই প্রিয় বউটিকে নিয়ে ঘুরবেন। আজ তারা ঘুরাঘুরিই করেন। শপথ নিয়েছেন জীবনের আগামী বছর গুলোতেও যেন তাদের সম্পর্ক এমন মধূর থাকে। তবে ভালোবাসার তেমন সোঝাসাপ্টা উত্তর দিতে পারলেন না তারা। ভালোবাসার অর্থ খোঁজতে তরুণ দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলেন এই প্রতিনিধি। ভালোবাসা এই শব্দটি কত কবির কলমে ফুটে ওঠেছে মূর্ত হয়ে। ‘ভালোবাসা’ আবার অনেকের জীবনে অধরাই থেকে গেছে অচিন পাখি হয়ে। যার জীবনে ভালোবাসা নিয়ে এসেছে সফল পরিণতি, তার কাছে ভালোবাসা বসস্তের কোনো ফুল বাগানের মতই রঙিন। আবার কারো কারো জীবনে ভালোবাসা বিবর্ণ, ধূসর, শুধুই দুঃখের স্মৃতি। আসলে ভালোবাসার রং কী? এ বিষয়ে পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন উত্তর।
সাফারি পার্কে আশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়াংকার কাছে ভালোবাসা রং লাল। তার মতে, লাল আনন্দের রং। আর ভালোবাসা তো আনন্দেরই বিষয়, সোজাসাপ্টা উত্তর প্রিয়াংকার।
আবার জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানার কাছে ভালোবাসার রং নীল। তার কাছে নীল রং প্রতিনিধিত্ব করে বিশাল আকাশের।
তবে ঘুরতে আশা চিকিৎসক আশরাফ মুজুমদারের কাছে ভালোবাসার রং সাদা। তিনি জানান, সাদার শুভ্রতাই ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।
এদিকে প্রকৌশলী সুমা পারভিনের কাছে ভালোবাসার রং গোলাপি। সুমা বলেন, ‘আমার কাছে গোলাপি খুবই মিষ্টি রং। ভালোবাসাও গোলাপির মতই মিষ্টি।’
তবে ভালোবাসাকে রংধনুর সাত রঙের সঙ্গে তুলনা করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রেজাউল আমীন রেজা। তার কাছে ভালোবাসা রংধনুর মতই বর্ণিল।
রেজার ভাষায়, ভালোবাসার রক্তক্ষরণে জীবন হয়ে ওঠতে পারে রক্তিম। ভালোবাসা জীবনকে যখন আরও রঙিন করে তোলে তখন জীবনের রং হয়ে ওঠে কমলা। কোনো কারণ ছাড়াই ভালোবাসা যখন মানুষকে হাসাতে পারে তখন জীবনের রং হয়ে ওঠে হলুদ। ভালোবাসা যখন অমর, তখন এর রং সবুজ। ভালোবাসা যখন আকাশের মত বিশালতার অনুভূতি দেয় তখন এর রং নীল। ভালোবাসা যখন বসস্তের মত সজীবতা আনে জীবনে, তখন এর রং আসমানী। আর ভালোবাসা যখন ফুলের মত সৌন্দর্য আনে জীবনে তখন এর রং বেগুনি। সব মিলিয়ে ভালোবাসা হল- রংধনুর সাত রঙের সমষ্টি।
তবে ভালোবাসার রং যাই হোক, জীবনকে রঙিন করে তুলতে ভালোবাসা অতুলনীয়। আজ সারাদিন ভালোবাসার খোঁজে সাফারি পার্কে আসা দর্শনার্থীদের সাথে গ্রামবাংলানিউজ২৪.কমের শ্রীপুর প্রতিনিধি রাতুল মন্ডলের সাথে কথোপকথনে এসব মনের অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।
