নিরাপত্তাহীনতায় নিহত সাংবাদিক শিমুলের পরিবার

Slider টপ নিউজ

53494_thumbS_ss

 

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি; আওয়ামীলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সমকাল পত্রিকার প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার পর সাংবাদিকের স্ত্রী চাকুরী পাওয়ায় এবং প্রধান আসামীরা গ্রেপ্তার হওয়ায় সকলের মাঝে স্বস্তি ফিরে এলেও বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে এই পরিবার।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন পোতাজিয়া ইউনিয়নের মাদলা-কাকলামারি গ্রামে শিমুলের নানির বাড়িতে গেলে স্বজনরা এই শংকার কথা জানান। মৃত্যুর আগে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এই বাড়িতেই নানির আশ্রয়ে থাকতেন সাংবাদিক শিমুল।

নিহত শিমুলের মামাতো ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলার আসামীদের টাকা, প্রভাব ও ক্ষমতা সবই আছে। আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা ও মেয়র হালিমুল হক মিরু, তার ভাই পিন্টু, মিন্টু ও তাদের বাহিনীর লোকেরা অস্ত্রবাজ। প্রধানরা গ্রেপ্তার হলেও অন্যরাতো এখনও বাইরে আছে, আতংক সেখানেই। যে কোন সময় তারা আমাদের পরিবারের যে কারও ক্ষতি করতে পারে। এজন্য পরিবারের সকলের প্রতি পুলিশের নজরধারী ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবী করেন তিনি।

শিমুলের বড় মামা আব্দুল লতিফ মন্ডল জানান, ১ মার্চ চাকুরীতে যোগ দিতে নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বগুড়ায় যাবে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাকে সেখানেই থাকতে হবে। স্বামী হত্যার আলোচিত মামলার বাদীও সে। মেয়র মিরু পাবনা থেকে সন্ত্রাসী এনে শাহজাদপুরে অস্ত্রবাজি করে। তারা বগুড়াতেও শিমুলের স্ত্রীর উপরে হামলা করতে পারে। পাশাপাশি বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষতি করতে পারে। এজন্য তিনিও পরিবার ও শিমুলের স্ত্রীর নিরাপত্তা দাবী করে হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে হস্তান্তরের দাবী করেন।

শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বলেন, চাকুরী করতে বগুড়ায় যেতে হবে। নতুন জায়গায় থাকতে হবে ভাড়া বাড়িতে। ছেলে-মেয়েকেও সেখানেই স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। এ অবস্থায় আতংকে আছি। আমি নিজে স্বামী হত্যা মামলার বাদী, আসামীরা প্রভাবশালী তারা যদি সেখানে আমার বা ছেলে-মেয়ের কোন ক্ষতি করে। বিষয়টি দেখবে কে, তাই আতংকে আছি। এজন্য তিনি পুলিশের সার্বক্ষনিক নজরধারী ও নিরাপত্তা দাবী করেছেন।

শিমুলের ছোট মামা নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, মেয়র ও তার ভাইয়েরা গ্রেপ্তার হলেও তার বাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যেই হুমকি-ধামকি দেয়া শুরু করেছে। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় একটি কালো মটরসাইকেলে দু’জন অজ্ঞাত ব্যক্তি এসে মেয়রের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছিস, তোদের দেখে নেবো এই বলে গালমন্দ করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। আবারও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে, এমনকি তারা আমাদের পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতিও করতে পারে, যে কারনে আতংকে আছি। সোমবার বিকেল পর্যন্ত তারা বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেনি বলেও জানান তিনি।

সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানার পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, হুমকির বিষয়টি আমরা অবগত নই। এমনকি, শিমুলের স্বজনরাও আমাদের জানায়নি। যদি কেউ এ ধরনের কান্ড ঘটায় তাহলে তাৎক্ষণিক তাকে অথবা থানার ওসিকে বিষয়টি মোবাইলে অবগত করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।

এদিকে, শিমুলের মেঝ মামা আব্দুল মজিদ মন্ডল জানান, ঘটনার সময় শিমুলের ব্যবহৃত ক্যামেরা, মোবাইল, ডাইরী ও ম্যানিবাগ হারিয়ে গেছে। পুলিশ এখনও তা উদ্ধার করতে পারেনি। নিহত ভাগিনার রেখে যাওয়া ওই স্মৃতিগুলো উদ্ধারের দাবী করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২রা ফেব্রুয়ারী ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদকে মেয়র মিরু’র পিন্টু মেয়রের বাড়িতে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও বিজয়ের স্বজনরা মেয়রের বাসার সামনে মিছিল নিয়ে গিয়ে ইটপাটকেল ছোড়ে। এসময় মেয়র মিরু ও তার ভাই মিন্টু শটগান দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে কার্তূজের একটি লেট বল কর্তব্যরত সাংবাদিক শিমুলের চোখের ভিতর দিয়ে মাথায় ভিতরে প্রবেশ করায় গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে বগুড়া ও পরের দিন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে সে মারা যায়। এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারাদেশের গণমাধ্যম কর্মীরা। সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বাদী হয়ে পৌর মেয়র মিরুকে প্রধান আসামী করে ১৮জন নামীয়সহ অজ্ঞাত আরো ২০/২৫ নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও বিজয়কে মারপিট করায় তার চাচা এরশাদ আলীও প্রায় একই আসামীদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন। এ ২টি মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১২জনকে আটক করেছে। সবাই বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছে। এ ঘটনার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নগদ ১ লাখ টাকা নগদ সহায়তার পাশাপাশি শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহারকে বগুড়ার সরকারী এসেসশিয়াল ড্রাগস কোম্পানীতে চাকুরী দিয়েছেন। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা শিমুলের ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ুয়া ছেলে সাদি মোহাম্মদ ও নার্সারীতে পড়ুয়া মেয়ে তামান্না’র পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছেন। এছাড়াও স্থানীয় সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সমকাল পত্রিকার পক্ষ থেকেও এই পরিবারে জন্য নগদ অর্থ সহায়তায় প্রদান করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *