১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন রূপগঞ্জের মাসুমাবাদের ফুল চাষিরা। প্রতি বছর দিবস দুটিতে উপজেলার শুধু এই গ্রাম থেকেই রাজধানীতে প্রবেশ করে ২-০-২৫ লাখ টাকার বিভিন্ন জাতের ফুল। এ বছরও মাসুমাবাদ ও আশেপাশের গ্রামের ফুলচাষিরা অন্তত ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন জাতের ফুল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। ভালোবাসার দিনটি সামনে রেখে ফুলের নেশাতুর গন্ধে মাতোয়ারা মাসুমাবাদ ও আশপাশ। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা অনুসারে ফুল ফোটাতে পেরে বাড়তি মুনাফা আগমনের গন্ধও পাচ্ছেন ফুলের গ্রামের ফুলচাষিরা। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিদায়ী শীতের আয়েশি আরাম ত্যাগ করে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেন ফুলচাষিরা ফুলের বাগানগুলোতে পরিচর্যা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। উপজেলার মাসুমাবাদ ও পার্শ্ববর্তী দীঘিরপাড়, মিয়াবাড়ী, মুইরাবো, ভায়েলা, পোরাবো, পিতলগঞ্জ এলাকার বেশির ভাগ জমিতে এখন গন্ধরাজ, কাঠ বেলী, চেরী, আলমেন্দা, বেলী ফুলের বাগান। প্রতিদিন ভোর ৫টার মধ্যে বাগানে চাষিরা। বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে ফুল উঠানো আর বাগান পরিচর্যার কাজ। এরপর সেই ফুল দিয়ে ঘরে বসে সুঁই-সুতোর সঙ্গে ফুলের সেতুবন্ধন গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফুলের গ্রামের বউ-ঝিয়েরা। এ ব্যাপারে মাছুমাবাদ গ্রামের ফুলচাষি নাঈম মিয়া জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে ফুলচাষের সঙ্গে তিনি জড়িত। এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে তিনি কাঠ বেলী, চেরী ফুল, গন্ধরাজ ফুলের চাষ করেছেন। বাগানে কাজের তদারকি করা, ফুলের মালা বুঝে নিয়ে পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটি তারই। প্রতিদিন সকালে বাগান থেকে ফুল তুলে মালা বাগানোর জন্য লোকজন তাদের বাড়িতে বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে বিকালে আবার মালা তৈরি করে বৌ-ঝিয়েরা দিয়ে যায় বাগান মালিকদের কাছে। কেউ কেউ প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি মালা গাঁথতে পারেন। গ্রামের এসব বৌ-ঝিয়েরা নিজেদের আয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনতে পারেন একটুখানি সুখ। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই তিনি এ বাগানের ফুল ও ফুলের মালা বিক্রি করার জন্য ছুটেন রাজধানী শাহাবাগের বিভিন্ন ফুলের দোকানে। তিনি ফুল চাষের মাধ্যেমে নিজের ভাগ্যর পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। আশপাশের সবাই তাকে এখন এক নামে চিনে। তার মতো মাসুমাবাদ দীঘিরপাড় গ্রামের ফুলচাষি গ্রামের শহীদুল্যাহ, রফিকুল ইসলাম, অতুল চন্দ্র দাস, সাধন মণ্ডল, সফিকুল ইসলাম, ভায়েলা মিয়া বাড়ির আউয়াল মিয়া, আমিনুল হক, নাঈম মিয়া, শামীম মিয়া, মুইরাবো এলাকার জালালউদ্দিন, সোলাইমান, নজরুল ইসলাম, জলিল, লোকমান, শাহ আলম, সোলাইমান, পোরাব এলাকার আমিনউদ্দিনসহ প্রায় ২৫ জন চাষী প্রায় দেড়শ’ বিঘা জমিতে এবছর ফুল চাষ করেছেন। তাদের অধীনে কাজ করছে প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের লোকজন। তারাও এখন পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভাল ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। কথা হয় ফুল শ্রমিক এ গ্রামেরই দুই সন্তানের জননী ছালেহা বেগমের সঙ্গে তিনি বলেন, স্বামী রিকশাচালক। তার সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। একটু ভালোভাবে থাকার জন্য তিনি এ কাজ করছেন। তার আয় দিয়ে ছেলেটাকে পড়াশোনা করাতে পারছেন। এটাই তার বড় সান্ত্বনা। এখন তিনি বেশ ভালোই আছেন। এ গ্রামের ছালেহা ছাড়াও সুমা, আকলিমা, মেহরুননেছা, রমিজা খাতুন, হাবিবা, মমতাজ, খালেদাও ফুলের মালা গেঁথে স্বামীকে সহায়তা করে আসছেন। তাদের সংসারগুলোতেও লেগেছে আনন্দের ছোয়া। ফুলচাষির অতুল চন্দ্র দাস বলেন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস ও ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের কদর থাকে অনেক । এবার এ দুই দিবসে উপজেলার এসব গ্রাম থেকে অন্তত ৩০ লাখ টাকার ফুল যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রায় ২৫ জন ব্যক্তি এ ফুল চাষ করে আসছি। আমাদের এখানে ফুল চাষের কারণে এলাকার বহু পরিবার এখন স্বাবলম্বী। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুরাদুল হাসান বলেন, ফুল চাষ যেমন সৃজনশীল কাজ তেমনি একটি লাভজনক ব্যবসাও। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অনেক জমিতে ফুলের বাগান গড়ে উঠেছে। ফুল চাষ ও ফুল বিক্রি করে আজ অনেক বেকার যুবক স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।