আজ শনিবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ওই সমাবেশে তাঁরা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুরও কঠোর সমালোচনা করেন।
গত বৃহস্পতিবার উত্তরায় এপিবিএন সদর দপ্তরে কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। র্যাব এর তদন্ত করছে। তবে এই মুহূর্তে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আমার জানা নেই।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির লাশ পাওয়া যায়। সাগর তখন মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। হত্যাকাণ্ডে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে এসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পুলিশকে তদন্ত শেষ করার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। সেই ৪৮ ঘণ্টা এখন পাঁচ বছরে গিয়ে ঠেকেছে। ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই মহীউদ্দীন খান আলমগীর ১০ অক্টোবরের মধ্যে সাগর-রুনির হত্যারহস্য উদ্ঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন। এরপর ৯ অক্টোবর ‘চমক দেওয়া’ সংবাদ সম্মেলনে একজনকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। পরে সেই ব্যক্তিকে ধরেও মামলার কোনো সুরাহা হয়নি।
সমাবেশে নাম উল্লেখ না করে সাংবাদিক নেতৃত্বের সমালোচনা করা হয়। বক্তারা বলেন, সবগুলো সাংবাদিক সংগঠন একসঙ্গে আন্দোলনে নেমেও পরে ব্যক্তিগত লাভের জন্য কেউ কেউ সরে গেছেন। তাঁরা সাংবাদিক নির্যাতনের পথকে প্রশস্ত করেছেন। তবে আজ সমাবেশে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃত্বে সাংবাদিকদের সব দল আবারও আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা সমাবেশ শেষে ২২ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের সব কটি সংগঠনের যৌথসভা আহ্বান করেছেন। সমাবেশে উপস্থিত সব কটি অংশের নেতারা ওই সভায় উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
আজকের সমাবেশে মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান সাগর-রুনির একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। নওশের বলেন, ‘আমরা বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু আমরা বিচার চেয়ে যাব। সাংবাদিকদের কাছে আমাদের চাওয়া, তাঁরা যেন আন্দোলনটা চালিয়ে যান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেন এমন দায়সারা বক্তব্য দিতে না পারেন। এমন দায়সারা বক্তব্য আমাদের হতাশ করে।’
বারবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তদন্তকারী সংস্থা, তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলের পরও অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার তারিখ ৪৬ বার পেছানোর সমালোচনা করেন বিএফইউজের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ। তিনি বলেন, সাংবাদিকেরা একটি গণতদন্ত কমিশন গঠন করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘সাগর-রুনির বাসা থেকে টাকাপয়সা গয়নাগাঁটি খোয়া যায়নি। ল্যাপটপ আর পেনড্রাইভ গেছে। আমরা সাহারা খাতুনের কাছ থেকে জানতে চাই, কিসের ভিত্তিতে তিনি ৪৮ ঘণ্টার সময় নিয়েছিলেন? কিসের ভিত্তিতে আইজিপি বলেছিলেন প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে? কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম কেন সাগর-রুনির চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ করেছিল? এসব তথ্য নিয়ে আমরা কমিশন গঠন করতে পারি।’
নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ভারতে জেসিকাকে খুন করেছিল প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এনডিটিভি দিনের পর দিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের ওই প্রতিবেদনগুলো জনমত গঠনে সাহায্য করেছে। বিচারের দাবিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোকে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সাগর সরওয়ারের সহকর্মী রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, ‘মাছরাঙা টেলিভিশন বিচারের দাবিতে টানা তিন বছর আন্দোলন করেছে। এখন হতাশ হয়ে পড়েছে। আমরা বুঝতে পারছি, বিচার পাওয়া কঠিন। আমাদের কৌশল বদলাতে হবে।’
সমাবেশে সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে রুহুল আমিন গাজী, আবদুল জলিল ভূইয়া, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ওমর ফারুক, মধুসূদন মণ্ডল, ইলিয়াস খান, শাবান মাহমুদ, সাজ্জাদ আলম, সারোয়ার আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন। সাংবাদিকেরা সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন, যারা সাগর-রুনি দম্পতিকে খুন করেছে, তারা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী কি না।