নাটোরে একসঙ্গে মা–ছেলের এসএসসি পরীক্ষা

Slider বাংলার মুখোমুখি শিক্ষা

259f13771d365061db781e6aa6601a1f-11

নাটোর; পড়ালেখার ক্ষেত্রে বয়স বা সম্পর্ক কোনো বাধা নয়। এটা আবারও প্রমাণ করলেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার গালিমপুর গ্রামের গৃহিণী মলি রাণী। মাঝ বয়সেও তিনি নিজ ছেলে মৃন্ময় কুমার কুন্ডুর সঙ্গে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
ছেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালো প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন বলে জানান তিনি। মলি রাণী উপজেলার গালিমপুর গ্রামের মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবব্রত কুমারের স্ত্রী।
বাগাতিপাড়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মা মলি আর ছেলে মৃন্ময় কুমার কুন্ডু ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা দিচ্ছে। যে যার মতো লিখে চলেছে। কারও দিকে কারও নজর নেই। পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে কথা হয় মা-ছেলের সঙ্গে।
মা মলি রাণী বলেন, তিনি নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুরের অসিত কুন্ডুর মেয়ে। সংসারে অভাব থাকায় নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা বিয়ে দিয়ে দেন দেবব্রত কুমারের সঙ্গে। পরে আর লেখা-পড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। এরই মধ্যে একে একে কোলে আসে দুটি সন্তান। ওরা পড়ালেখা শুরু করে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওদের পড়ান মা মলি। বড় ছেলে মৃন্ময় কুমার কুন্ডু বাগাতিপাড়া মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে কারিগরি শাখায় বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স ট্রেডে নবম শ্রেণিতে ওঠে। আর ছোট ছেলে পাপন কুন্ডু তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠে। ওদের পড়াতে গিয়ে তিনি অনুভব করেন, ছেলেদের পড়াতে হলে নিজেকে আরও পড়ালেখা করতে হবে। নইলে গৃহশিক্ষক দিতে হবে। কিন্তু স্বামীর সামান্য উপার্জনে ছেলেদের গৃহশিক্ষক দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি স্বামীর কাছে নতুন করে পড়ালেখার অনুমতি চাইলেন। স্বামীও অনুমতি দিয়ে দিলেন। আশ্বাস দিলেন সহযোগিতার। এভাবেই তিনি নতুন করে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করলেন। তিনি বাগাতিপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে কারিগরি শাখায় ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডে ভর্তি হন। ভাগ্যক্রমে ছেলের সঙ্গেই এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হলো। মা-ছেলে একই সঙ্গে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিল।
মা আরও বলেন, ভেতরে ভেতরে মা-ছেলের মধ্যে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। দেখা যেত, ছেলে ঘুমিয়ে পড়লেও মা রাত জেগে পড়তে থাকলে ছেলেও একটু পরে উঠে আবার পড়তে বসত। এভাবেই চলেছে পরীক্ষার প্রস্তুতি।
ছেলে মৃন্ময় বলে, প্রথম প্রথম একটু বিরক্ত লাগলেও পরে মা-ছেলে মিলেই পড়ালেখা করেছে। কার কেমন ফলাফল হবে তা নিয়ে তারা গল্প করে। পরস্পরের মধ্যে লেখাপড়া নিয়ে প্রতিযোগিতাও রয়েছে বলে জানায় সে।
স্বামী দেবব্রত বলেন, তিনি সারাক্ষণ মিষ্টির ব্যবসা নিয়ে থাকেন। ছেলেদের পড়ালেখার দিকে খেয়াল রাখার সময় পান না। স্ত্রী ছেলেদের পড়ালেখার সবকিছু করেন। একদিন স্ত্রী নিজেও পড়ালেখার আগ্রহ দেখালেন। তাই তিনি স্ত্রীকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। তখন থেকেই নিয়মিত বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে আসছেন তাঁর স্ত্রী। তিনি আরও বলেন, তাঁর স্ত্রী যদি আরও পড়তে চান, তাতেও তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *