ঢাকা; কেউ বলেন, গুগল জেনারেশন। কারো ভাষায়, ফেসবুক জেনারেশন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে যায় বহু কিছু। বদলে গেছে এ দেশের তরুণদের ভাষা, অভিব্যক্তিও। ভালোবাসা-প্রেম।
একটা সময় ছিল বজায় রাখা হতো কঠোর গোপনীয়তা। অভিভাবকরা যেন কিছুতেই টের না পান খেয়াল রাখা হতো খুব। যোগাযোগের মাধ্যম হয়তো চিঠি কিংবা দূর থেকে চোখাচোখি হওয়া। এত সতর্কতার মধ্যেও পরিবারের কিংবা আশেপাশের কেউ টের পেলে হতো মহাকাণ্ড। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে সম্পর্ক প্রকাশের ক্ষেত্রেও। সেটা প্রেম-ভালোবাসা কিংবা বন্ধুত্বই হোক না কেন। নিজেদের সম্পর্কের কথা লুকিয়ে রাখতে চায় না কেউই। খেয়াল করে দেখবেন, অনেকেই ফেসবুকে তাদের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে পরিষ্কারই লিখে, ইন এ রিলেশনশিপ। কেউ কেউ শেয়ার করেন যুগল ছবি। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, চিন্তার পরিবর্তন, সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাসহ বিভিন্ন কারণেই ভালোবাসার সম্পর্কগুলো এখন অনেকটাই বাঁধহীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সত্তর কিংবা আশির দশকেও এই বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার কথা কেউ চিন্তাই করতো না। আর তখন প্রেমের ধরন ছিল ভিন্ন।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানা বলেন, ইন্টার মিডিয়েটের পর থেকে মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্কের একটা পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে মায়ের সঙ্গে। নিজের সম্পর্কের বিষয়ে বাবা-মাকে জানানোর বোধটা হয়তো আমাদের মেয়েদের একটু বেশিই। আর মা নিজেই বুঝতেন যে, আমার জীবনে কিছু একটা হচ্ছে। সম্পর্কের ব্যাপারে বাবা-মায়ের আগ্রহের কারণ হয়তো আমি কোনো ভুল করছি কিনা সেটা জানা। আবার এটাও হতে পারে তারা ভাবেন এখন হয়তো আমরা বুঝতে শিখেছি। তাই আমরা নিজেদের জন্য কাকে বেছে নিচ্ছি সেটা জানার প্রয়োজন তাদের। আর আমাদের সিদ্ধান্ত ভুল হলে যেন শুরুতেই সেটা ধরিয়ে দিতে পারেন এটাও একটা কারণ হতে পারে।
দীর্ঘ আট বছরের প্রেমের সম্পর্ক কাকলি এবং মুনিরের (ছদ্মনাম)। সম্পর্কের তিন মাসের মধ্যেই মাকে অবহিত করেন কাকলি। আর এক বছরের মধ্যে পরিবারের অন্য সদস্য এবং বন্ধুদের। তিনি বলেন, আমি নিজের জন্য একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি এই বিষয়টা জানানো প্রয়োজন ছিল। আর এটা জানার পর তারাও একটু সচেতন হবেন আমার ব্যাপারে। সম্পর্কের বিষয়টা পরিবারের সদস্যদের জানানো যদিও সহজ নয়। তবুও আমার ধারণা আমাদের সময়ে এসে বিষয়টা একটু সহজ হয়েছে। এটা কিভাবে হয়েছে সেটা জানি না। তবে একটু ছোট বয়সে দেখেছি আশেপাশে কেউ প্রেম করছে এমন খবর শুনতেই চারপাশে হইচই পড়ে যেত। এরপর কোনোকিছু বিবেচনা না করে মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দেয়া হতো। এই বিয়ে দেয়ার বিষয়টা মেয়েদের ক্ষেত্রেই বেশি ঘটতো। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন এসেছে। বাবা-মা আমাদের পছন্দকে প্রাধান্য দেন। তবে এক্ষেত্রে পছন্দের মানুষকে অবশ্যই সমগোত্রীয় কিংবা বিবেচনায় ভালো এমন হতে হবে।
তানিয়া চাকমা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, কারো সঙ্গে সম্পর্ক আছে এটা মা খুব সহজেই বুঝতে পারলেও চুপ করে থাকেন। এটা হয়তো আমার কাছ থেকে তিনি বিষয়টা জানতে চান বলেই। যদিও এখন আর আগের মতো প্রেম নিয়ে অতটা মাতামাতি হয় না। আর আমাদের সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সম্পর্কের বিষয়টা শুরুর দিক থেকেই একটু খোলামেলা ছিল। তবে অবশ্যই এটা নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যে হতে হবে। কোনো ভাবেই অন্য ধর্ম কিংবা অন্য সম্প্রদায়ের হওয়া চলবে না। সেক্ষেত্রে সংঘাতের দিকে চলে যেতে পারে।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বৃষ্টি সরকার। নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন না থাকায় লুকিয়ে মা কিংবা অন্য কারো মোবাইল থেকে কথা বলতেন বৃষ্টি। তবে মায়ের কাছ থেকে লুকানো ছিল না কোনো কিছুই। বৃষ্টি বলেন, প্রথমে মাকে বলেছি আমরা ভালো বন্ধু। কিন্তু সম্পর্কের গভীরতা বাড়ার পরই মাকে বলে দিয়েছি আমরা বন্ধু না। একজন অন্যজনকে ভালোবাসি। যদিও মা একটু কষ্ট পেয়ে বলেছেন আমার কাছ থেকে এটা আশা করেননি। হয়তো মা এই ভরসায় ছিলেন ছোট বয়সের প্রেম না টেকার সম্ভাবনাই বেশি। তাই অতটা চাপ দিয়ে কিছু বলেন নি, যদি উল্টাপাল্টা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উন্নতি হচ্ছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম্যের কারণে সম্পর্ক অনেক সহজ হচ্ছে। কোচিং সেন্টারে পরিচয় হয়ে আকাশ সংস্কৃতিতে নিজেদের জুড়ে নেয় ছেলেমেয়েরা। আবার নিজেদের ম্যাচিউরিটি প্রমাণ করার জন্য সেটা ফেসবুকে উল্লেখ করে। এই সম্পর্কগুলো মন এবং শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্যই গড়ে উঠে। স্কুল-কলেজে পড়া ছেলেমেয়েরা ম্যাচিউরড হয়নি এটা আমরা বলতে পারবো না। আর বাবা-মা সন্তানদের এইসব সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। কারণ কেউ ঠেকে শিখেছে আবার কেউ দেখে শিখেছে। তিনি বলেন, নিজেদের সম্পর্কের কথা বাবা-মা, ফেসবুক কিংবা অন্য মাধ্যমে জানানোর মানে এই নয় যে, সম্পর্কগুলো চিরস্থায়ী। এটা হয়তো যারা এমন সম্পর্কে জড়িত তারাও জানে। মানুষের মন সদা পরিবর্তনশীল। এক্ষেত্রে সম্পর্কেও পরিবর্তনটাও স্বাভাবিক। মানুষের কোনো একটা চাহিদা পূরণ না হলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলে। যদিও অনেকে চেষ্টা করেন কিছু বিষয় মানিয়ে নিতে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরে আসাটাই দুজনের জন্য ভালো। আর এটা দোষের কিছু না।
দীর্ঘ আট বছরের প্রেমের সম্পর্ক কাকলি এবং মুনিরের (ছদ্মনাম)। সম্পর্কের তিন মাসের মধ্যেই মাকে অবহিত করেন কাকলি। আর এক বছরের মধ্যে পরিবারের অন্য সদস্য এবং বন্ধুদের। তিনি বলেন, আমি নিজের জন্য একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি এই বিষয়টা জানানো প্রয়োজন ছিল। আর এটা জানার পর তারাও একটু সচেতন হবেন আমার ব্যাপারে। সম্পর্কের বিষয়টা পরিবারের সদস্যদের জানানো যদিও সহজ নয়। তবুও আমার ধারণা আমাদের সময়ে এসে বিষয়টা একটু সহজ হয়েছে। এটা কিভাবে হয়েছে সেটা জানি না। তবে একটু ছোট বয়সে দেখেছি আশেপাশে কেউ প্রেম করছে এমন খবর শুনতেই চারপাশে হইচই পড়ে যেত। এরপর কোনোকিছু বিবেচনা না করে মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দেয়া হতো। এই বিয়ে দেয়ার বিষয়টা মেয়েদের ক্ষেত্রেই বেশি ঘটতো। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন এসেছে। বাবা-মা আমাদের পছন্দকে প্রাধান্য দেন। তবে এক্ষেত্রে পছন্দের মানুষকে অবশ্যই সমগোত্রীয় কিংবা বিবেচনায় ভালো এমন হতে হবে।
তানিয়া চাকমা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, কারো সঙ্গে সম্পর্ক আছে এটা মা খুব সহজেই বুঝতে পারলেও চুপ করে থাকেন। এটা হয়তো আমার কাছ থেকে তিনি বিষয়টা জানতে চান বলেই। যদিও এখন আর আগের মতো প্রেম নিয়ে অতটা মাতামাতি হয় না। আর আমাদের সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সম্পর্কের বিষয়টা শুরুর দিক থেকেই একটু খোলামেলা ছিল। তবে অবশ্যই এটা নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যে হতে হবে। কোনো ভাবেই অন্য ধর্ম কিংবা অন্য সম্প্রদায়ের হওয়া চলবে না। সেক্ষেত্রে সংঘাতের দিকে চলে যেতে পারে।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বৃষ্টি সরকার। নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন না থাকায় লুকিয়ে মা কিংবা অন্য কারো মোবাইল থেকে কথা বলতেন বৃষ্টি। তবে মায়ের কাছ থেকে লুকানো ছিল না কোনো কিছুই। বৃষ্টি বলেন, প্রথমে মাকে বলেছি আমরা ভালো বন্ধু। কিন্তু সম্পর্কের গভীরতা বাড়ার পরই মাকে বলে দিয়েছি আমরা বন্ধু না। একজন অন্যজনকে ভালোবাসি। যদিও মা একটু কষ্ট পেয়ে বলেছেন আমার কাছ থেকে এটা আশা করেননি। হয়তো মা এই ভরসায় ছিলেন ছোট বয়সের প্রেম না টেকার সম্ভাবনাই বেশি। তাই অতটা চাপ দিয়ে কিছু বলেন নি, যদি উল্টাপাল্টা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উন্নতি হচ্ছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম্যের কারণে সম্পর্ক অনেক সহজ হচ্ছে। কোচিং সেন্টারে পরিচয় হয়ে আকাশ সংস্কৃতিতে নিজেদের জুড়ে নেয় ছেলেমেয়েরা। আবার নিজেদের ম্যাচিউরিটি প্রমাণ করার জন্য সেটা ফেসবুকে উল্লেখ করে। এই সম্পর্কগুলো মন এবং শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্যই গড়ে উঠে। স্কুল-কলেজে পড়া ছেলেমেয়েরা ম্যাচিউরড হয়নি এটা আমরা বলতে পারবো না। আর বাবা-মা সন্তানদের এইসব সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। কারণ কেউ ঠেকে শিখেছে আবার কেউ দেখে শিখেছে। তিনি বলেন, নিজেদের সম্পর্কের কথা বাবা-মা, ফেসবুক কিংবা অন্য মাধ্যমে জানানোর মানে এই নয় যে, সম্পর্কগুলো চিরস্থায়ী। এটা হয়তো যারা এমন সম্পর্কে জড়িত তারাও জানে। মানুষের মন সদা পরিবর্তনশীল। এক্ষেত্রে সম্পর্কেও পরিবর্তনটাও স্বাভাবিক। মানুষের কোনো একটা চাহিদা পূরণ না হলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলে। যদিও অনেকে চেষ্টা করেন কিছু বিষয় মানিয়ে নিতে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরে আসাটাই দুজনের জন্য ভালো। আর এটা দোষের কিছু না।