গ্রাম বাংলা ডেস্ক: মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হয়েছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে আজ রোববার সকাল নয়টা ৪০ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় আনা হয়েছে।
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ দিন ধার্য রয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় আদালত বসে। ১১টা ৪০মিনিটে ফাসির রায় হয়।
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ার প্রায় ছয় মাস পর আজ এ রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে।
জামায়াতের রাজনীতিতে অর্থের জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমের রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে গত বৃহস্পতিবার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে মীর কাসেমকে গত শুক্রবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আজ সকাল তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় আনা হয়।
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। হাইকোর্ট ও ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের সবগুলো ফটকে পুলিশ ও র্যাব অবস্থান নিয়েছে। ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে পরিচয় নিশ্চিত করা হচ্ছে।
দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্ট মাজারসংলগ্ন ফটক পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট মাজারসংলগ্ন ফটকের বাইরে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাঁজোয়া যান।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে গঠন করা ১৪টি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। আর বাকি ১২টি অভিযোগ হলো, অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম শহর শাখা ইসলামী ছাত্রসংঘের (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন) সভাপতি মীর কাসেম স্থানীয় আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি কেবল নিজেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি; একই সঙ্গে তিনি তাঁর অধীনস্থদের অপরাধ সংঘটনে নির্দেশ দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, মীর কাসেমের বিরুদ্ধে সবগুলো অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য।
ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে আটজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ১১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর যেকোনো দিন মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে চট্টগ্রাম শহরের অজ্ঞাত স্থান থেকে অপহরণ করে আলবদর সদস্যরা। পরে মীর কাসেমের নির্দেশে জসিমকে ডালিম হোটেলে নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতন ও ২৮ নভেম্বর হত্যা করা হয়। পরে সেখানে নির্যাতনে নিহত আরও পাঁচজনের সঙ্গে জসিমের লাশ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। ১২ নম্বর অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের নভেম্বরে মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা চট্টগ্রামের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা হাজারী গলির বাসা থেকে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানি সেনা ও সহযোগী রাজাকার-আলবদররা হাজারী গলির ২৫০ থেকে ৩০০ দোকান লুট ও অগ্নিসংযোগ করে।
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে বাকি ১২টি অভিযোগে ২৪ জনকে অপহরণের পর আটক ও নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব অভিযোগ অনুসারে, ৮ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে অপহরণের পর তাঁদের ডালিম হোটেল, সালমা মঞ্জিল বা আছদগঞ্জের নির্যাতন কেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। মীর কাসেমের নেতৃত্বে ও নির্দেশে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন আলবদর বাহিনী এসব অপহরণ ও নির্যাতন করে।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম বদল করে ছাত্রশিবির নামে রাজনীতি শুরু করে। মীর কাসেম ছিলেন ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ওই সময় থেকে তিনি জামায়াতের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে দলটির অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করার উদ্যোগ নেন। ১৯৮০ সালে তিনি রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার এদেশীয় পরিচালক হন। এ ছাড়া তিনি দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য।
২০১২ সালের ১৭ জুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মীর কাসেমকে গ্রেপ্তার করে। গত বছরের ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল-১। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৪ জন ও আসামিপক্ষে তিনজন সাক্ষ্য দেন। ২৩ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। গত ৪ মে দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।