ডেস্ক;‘মুসলিম বিরোধী নিষেধাজ্ঞা’র কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওয়াশিংটনের এটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসন। সোমবার তিনি সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন।
এটাই হলো ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলা। বার্তা সংস্থা এপি এ খবর দিয়েছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মুসলিম প্রধান ৭টি দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বিক্ষোভ হয় সিয়াটল-টাকোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানে বিক্ষোভ করেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। সংবাদ সম্মেলনে বব ফার্গুসন বলেছেন, যদি তিনি মামলায় সফল হন তাহলে আমেরিকাজুড়ে প্রেসিডেন্টের অবৈধ কার্যক্রম বাতিল হবে। এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে দেয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের কমপক্ষে ১৬ জন এটর্নি জেনারেল। তারা ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে আমেরিকার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় ও বেআইনি বলে আখ্যায়িত করেছেন রোববারের বিবৃতিতে। ওই ১৬ জন এটর্নি জেনারেলের একজন হলেন বব ফার্গুসন। গত শুক্রবার দেয়া ডনাল্ড ট্রাম্পের ৭টি দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে বিশেষজ্ঞরা মুসলিম বিরোধী বলে মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ বলছেন, এটা হলো ট্রাম্পের মুসলিম বিরোধিতার সূচনা। তিনি কালো তালিকাভুক্ত দেশের সংখ্যা আরও বাড়াবেন। সামনের দিনগুলোতে এ সংখ্যা বাড়বে। আরও দেশ এর আওতায় আসবে। তাই ট্রাম্পের ওই নীতিকে দেখা হচ্ছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা হিসেবে। কিন্তু ট্রাম্প বার বারই বলছেন, এ নিষেধাজ্ঞা মুসলিম বিরোধী নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষা করতে তিনি ৭টি দেশের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ওদিকে সিয়াটল কেন্দ্রীয় আদালতে ডনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ, ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের মূল কিছু অংশকে অসাংবিধানিক ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বব ফার্গুসন। অভিবাসন বিরোধী নির্বাহী আদেশকে কার্যকর করা থেকে বিরত থাকতে একটি অস্থায়ী আদেশ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে এতে। মামলায় আরও বলা হয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ফলে ওয়াশিংটনে পরিবারগুলো ভেঙে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এ রাজ্যের হাজার হাজার পরিবার। ধ্বংস হচ্ছে রাজ্যের অর্থনীতি। ওয়াশিংটনভিত্তিক কোম্পানিগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। ওয়াশিংটনের সার্বভৌম অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে, যেখানে অভিবাসী ও শরণার্থীদের স্বাগত জানানো হয়। বব ফার্গুসন বলেছেন, আমরা এমন একটি দেশে বাস করি যা চলে আইনের শাসন দ্বারা। এ দেশ চলে সংবিধান দ্বারা। দিন শেষে আপনি সংবিধান অনুসরণ করে চলছেন কিনা তা দেখা হয়। আমাদের দৃষ্টিতে নির্বাহী আদেশের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট সংবিধান মেনে চলছেন না। বব ফার্গুসন আরও বলেছেন, ওয়াশিংটন ভিত্তিক দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ও এক্সপেডিয়া তাকে এই মামলা করতে সমর্থন দিচ্ছে। তার সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গভর্নর জে ইনসলি। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অবশ্যই অমনাবিক। তার এ আদেশ আমেরিকার মূল্যবোধের বিরোধী। ভুল। এ নির্বাহী আদেশের একটিই উদ্দেশ্য তাহলো একটি ধর্মে বিশ্বাসীদের অবমাননা করা। এমন বক্তব্য দেয়ার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন থেকে প্রতিশোধ নেয়া হতে পারে এ আতঙ্ক আছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আমরা হুমকিতে ভীত নই। আমাদেরকে ভয় দেখানো যাবে না। এ লড়াইয়ে টিকে থাকার অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি। ওদিকে ওয়াশিংটনের রেডমন্ডভিত্তিক মাইক্রোসফটও বব ফার্গুসনকে সমর্থন করছে। এ কথা বলেছেন মাইক্রোসফটের গণযোগাযোগ বিষয়ক জেনারেল ম্যানেজার ডমিনিক কার। তিনি বলেছেন, যদি আরও প্রয়োজন হয় তাহলে তারা আরও সমর্থন দেবে। বব ফার্গুসন বলেছেন, তিনি অন্যান্য এটর্নি জেনারেলদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তবে এখন ওয়াশিংটন রাজ্য থেকে তিনি নিজে এ আইনী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।