ঢাকা; অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৮টি দেশের বাংলাদেশি দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া। একই সঙ্গে ওইসব দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেয়া হচ্ছে।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বিকাশের লোগোকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে বিদেশের কিছু ব্যক্তি এবং ভুয়া মানি একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান প্রবাসীদের অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্ররোচিত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে আটটি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলিতে চিঠি দিয়েছে বিকাশ। এ ছাড়া কেউ যেন অবৈধভাবে বিকাশের লোগো ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য ওইসব দেশে লোগো নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য আইনি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মূলত বাংলাদেশের বাইরে বিকাশের কোনো এজেন্ট বা বুথ নেই। এ বিষয়ে বিকাশের মুখপাত্র জাহেদুল ইসলাম বলেন, বিকাশের লোগোকে যেন কেউ অননুমোদিতভাবে ব্যবহার করতে না পারে সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আটটি দেশে বিকাশের লোগো রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যাতে কেউ বিকাশ লোগো অপব্যবহার করলে তাকে আইনগতভাবে মোকাবিলা করা যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান,‘মাদ্রিদ প্রটোকল’ নামে লোগো বা ট্রেডমার্ক সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি গ্লোবাল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বাংলাদেশ। ফলে দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের লোগো বা ট্রেডমার্ক বিদেশে কেউ অনুমোদন ছাড়া ব্যবহার করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই সুযোগে কিছু অসাধু চক্র বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির লোগো নকল করে ব্যবসা করছে। বিদেশ থেকে অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে এই অভিযোগের ভিত্তিতে সমপ্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে দেয়াসহ বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুসারে একজন গ্রাহক তার মোবাইল অ্যাকাউন্টে দিনে দুইবারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করতে পারবেন এবং দিনে তিন বার সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ক্যাশ-আউট করতে পারবেন। আগে একজন গ্রাহক দিনে ৫ বার ক্যাশ ইন এবং তিন বার ক্যাশ আউট করতে পারতেন এবং উভয় ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২৫ হাজার টাকা। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী একজন গ্রাহক তার মোবাইল অ্যাকাউন্টে মাসে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাশ ইন করতে পারবেন যা পূর্বে ছিল দেড় লাখ টাকা। একইভাবে একজন গ্রাহক মাসে সর্বোচ্চ ১০ বারে ৫০ হাজার টাকা ক্যাশ আউট করতে পারবেন। আগে এর পরিমাণ ছিল দেড় লাখ টাকা। নতুন নির্দেশনা অনুসারে একজন গ্রাহক ক্যাশ ইন করার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ হাজার টাকার বেশি উত্তোলন করতে পারবেন না এবং ৫ হাজার টাকা বা তার বেশি ক্যাশ আউট করার ক্ষেত্রে অবশ্যই এজেন্টকে জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল বা ফটোকপি প্রদর্শন করতে হবে। ব্যাংকের নতুন এই নির্দেশনা কার্যকর হলে সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, এজেন্ট এবং এই খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এদিকে যেসব দেশে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় অবৈধভাবে মোবাইল ব্যংকিং হচ্ছে সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন করতে এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে বিকাশ উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার পাশাপাশি নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিকাশ নিয়মিতভাবে সন্দেহজনক লেনদেন সংক্রান্ত রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের সেন্ট্রাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিলেজেন্স ইউনিটকে অবহিত করে। সমপ্রতি আরব আমিরাত সরকার দুবাইতে ২৫টি অবৈধ মানি একচেঞ্জ যারা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির লোগো অবৈধভাবে ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করছিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি তাদের বিপুল হারে জরিমানা করা হয়েছে। কুয়েতে বাংলাদেশের দূতাবাস ইতিমধ্যেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের এইসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে বৈধ পথে পাঠাতে প্রচারণা চালাচ্ছে। বিকাশ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। জাহেদুল ইসলাম বলেন, বিকাশের নিবন্ধিত গ্রাহকরা দুটি উপায়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে পারবেন। একটা হচ্ছে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে অন্যটি ব্র্যাক ব্যাংকের আওতাভুক্ত নির্ধারিত ও অনুমোদিত একচেঞ্জ হাউজ থেকে। তবে কিছু অসাধু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং চক্র বিদেশে নিজেদের বিকাশ এজেন্ট পরিচয় দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে টাকা পাঠাতে প্ররোচিত করছে। বিকাশের সঙ্গে এইসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই। সুবিধাবঞ্চিতদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দুয়ার খুলে দিতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সেবা দিচ্ছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করলেও এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। মোট লেনদেনের ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ হয় বিকাশের মাধ্যমে। আর ডাচ-বাংলার ৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং অন্যান্য ব্যাংকের সর্বমোট ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে। বর্তমানে দেশে ১৯টি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন রয়েছে। তবে এর মধ্যে ১৭টি ব্যাংক এ সেবা চালু করেছে। আর আগে অনুমোদন নিয়েও সেবাটি বন্ধ করে দেয় প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক।