ডেস্ক; সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বিশ্বজুড়ে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্বনেতারা কড়া সমালোচনা করেছেন এ পদক্ষেপের। সিরিয়ার শরণার্থীদের অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করা ছাড়াও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে মানুষের প্রবেশের ওপর স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, তার এই পদক্ষেপ যতটা আশঙ্কা করা হয়েছে তার চেয়েও কঠোর। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিমদের ওপর কার্যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তিনি। শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়ের বেলায় এসব দেশের খ্রিস্টানদের অগ্রাধিকার দেবে তার প্রশাসন।
এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ট্রাম্পকে যুদ্ধ ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা মানুষকে আশ্রয় দেয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ডেমোক্রেট দলীয় নেতা চাক শুমার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টির চিবুক বেয়ে অশ্রু নেমেছে আজ রাতে। কারণ, অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর যে মহান ঐতিহ্য আমেরিকার, যে ঐতিহ্য দেশটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বহাল ছিল, সেটি আজ ধুলিসাৎ হয়ে গেছে।’ তার মতে, ‘অভিবাসী ও শরণার্থীদের গ্রহণ করা শুধু মানবিকই নয়, এটি আমাদের অর্থনীতিকে সতেজ করেছে। দশকের পর দশক ধরে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এই প্রেসিডেন্টের জারি করা সবচেয়ে পশ্চাৎপদ ও নোংরা নির্বাহী আদেশের একটি এটি।’
আমেরিকার মুসলিমদের সবচেয়ে বড় সংস্থা দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স ঘোষণা দিয়েছে, এই আদেশের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করবে তারা। কারণ, এ নির্বাহী আদেশ এমনভাবে সাজানো যাতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর ইসলাম ধর্মবিশ্বাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া না যায়। কাউন্সিলের পরিচালক লেনা এফ মাসরি বলেন, ‘এই আদেশ গোঁড়ামি-প্রসূত, বাস্তবতা-প্রসূত নয়।’
পাকিস্তানের নোবেল বিজয়ী নারী অধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই মন্তব্য করেছেন, শরণার্থী ও অভিবাসীদের সাদরে গ্রহণ করার গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে আমেরিকার। আর ওই ঐতিহ্য থেকে আমেরিকাকে পশ্চাদপসরণ করতে দেখে তার হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। তিনি বলেন, এ মানুষেরাই এ দেশকে গড়ে তুলেছে। সিরিয়ার শরণার্থী শিশুরা যারা বিনাদোষে ছয় বছরের যুদ্ধের শিকার হয়েছে তাদেরকে বৈষম্য করে আলাদা করা হয়েছে।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ম্যাডেলিন অলব্রাইট বলেছেন, স্ট্যাচু অব লিবার্টির নিচে কোন শর্তসাপেক্ষ তারকা চিহ্ন নেই। আমেরিকাকে অবশ্যই সব ধর্মের ও বিশ্বাসের মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে। সরব হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের প্রভাব নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। ইহুদী জাকারবার্গ স্মরণ করেন, তার প্রপিতামহ যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও পোল্যান্ড থেকে। তার স্ত্রীর পিতামাতা ছিলেন চীন ও ভিয়েতনামের শরণার্থী। জাকারবার্গের ভাষ্য, ‘যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের দেশ। আমাদের উচিৎ এ নিয়ে গর্বিত থাকা।’ তিনি মনে করেন, আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগ যদি সত্যিকারের হুমকিধারী মানুষদের ছাড়িয়ে অন্যদের ওপর করা হয়, তাহলে আমরা সব আমেরিকানই কম নিরাপদ থাকবো। কারণ, এতে আমাদের সম্পদ অন্যত্র ব্যয় হবে। অপরদিকে লাখো অনথিভুক্ত মানুষ যাদের কাছ থেকে কোন হুমকি নেই তারা জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তনের হুমকিতে থাকবে।
এদিকে এ নির্বাহী আদেশের পর প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল এক বিবৃতিতে বলেছে, এ আদেশের প্রভাব নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। শুধু এ আদেশ নয় যেকোন প্রস্তাব যেটি গুগলার ও তাদের পরিবারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে এবং যার কারণে অসাধারণ মেধাবী লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে অসমর্থ হয়, তা নিয়ে গুগল উদ্বিগ্ন। গুগল জানিয়েছে, এ দৃষ্টিভঙ্গির কথা তারা ওয়াশিংটনের নেতাদের কাছে তুলে ধরা অব্যাহত রাখবে।