স্মরণকালের ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়

গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ সারাবিশ্ব

82557_Electric-Line

গ্রাম বাংলা ডেস্ক: জাতীয় গ্রিডে ত্রুটির কারণে আজ সকাল থেকে সারা দেশের সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সারাদেশে সন্ধ্যার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিকের আশা বিকেলে কর্তৃপক্ষ দিলেও ত্রুটি সারতে গিয়ে ফের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে জাতীয় গ্রিডে। ফলে বিদ্যুৎ সঙ্কট দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একে একে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ভবনসহ অন্যন্য সরকারি ভবনেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে জেনারেটরের থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ চলছে। বিদ্যুতের এমন বিপর্যয় আগে কখনো ঘটেছে বলে কেউ স্মরণ করতে পারেননি। এর আগে বিভিন্ন সময় জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক বিভ্রাট, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দিলেও তা ছিল আংশিক। আজকের মতো একযোগে সারাদেশ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে যাওয়া আগে কখনো দেখেনি দেশবাসী। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নয়টি, নরসিংদীর ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছয়টি ইউনিটই বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ভেড়ামায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ত্রুটির কারণে সবকটি ইউনিটে একযোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দেয়। কুষ্টিয়া থেকে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, বেলা ১১টা ২৯ মিনিটে ভেড়ামারা উপজেলার ষোলদাগ এলাকায় জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা দেওয়ার পর ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়। ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সরবরাহ লাইনের সংযোগস্থলে ত্রুটিটি দেখা দিয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে এই ত্রুটির বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জাতীয় গ্রিডে কারিগরী সমস্যার কারণে পুরো দেশ জুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। সমস্যাটি ঠিক কি তা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে না জানালেও বলেছেন, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদের রিপোর্ট পেলেই প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছে তা জানা যাবে। জাতীয় গ্রিডের প্রধান কর্মকর্তা চৌধুরী আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রতিবেশী ভারতের একটি সাবস্টেশনের সমস্যার কারণে তার সাথে সংযুক্ত বাংলাদেশের গ্রিডে এই বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল-বেরুনি জানিয়েছেন, কোনো গাফিলতির কারণে এই বিপর্যয় ঘটেনি, কারিগরী ত্রুটিই এর জন্য দায়ী। তবে এই ত্রুটি ঠিক কি এবং কোথায় তা ঘটেছে – এ প্রশ্ন করলে আল-বেরুনিও বলেন, এটা তদন্ত কমিটি বলুক। ব্যক্তিগতভাবে আমার বলা ঠিক হবে না। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও একে একে বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুত সরবরাহ ফিরে আসছে, এবং ত্রুটি মেরামতের জন্য প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরো কিছু এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ ফিরে আসবে বলে আশা করছেন তারা। তবে সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরিয়ে আনতে কত সময় লাগবে – তা কর্মকর্তারা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেন নি। আল-বেরুনি বলেন, শনিবার রাতের মধ্যেই পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর জন্য তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তিনি আরো বলেন, উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থাকে এখন যথেষ্ট আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ২০০৭ সালের পর গত সাত বছরের মধ্যে এই প্রথম দেশে কোনো ‘টোটাল ব্ল্যাকআউট’ হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *