গ্রাম বাংলা ডেস্ক: দেশের প্রথম পতাকাবাহী বর রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও হনুফা আক্তার রিক্তার বিয়ে আজ। চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের মিরাখোলা গ্রামের মুন্সীবাড়িতে সম্পন্ন হবে এ বিয়ে। মোহরানা ধার্য করা হয়েছে ৫ লাখ ১ টাকা। রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেন মোহরের টাকা তিনি বিয়ের মঞ্চে পরিশোধের চেষ্টা করবেন। বিয়ের কাজ সম্পন্ন করবেন গল্লাই ইউনিয়নের মুসলিম নিকাহ্ রেজিস্ট্রার মাওলানা কাজী মোঃ সিদ্দিকুর রহমান।
দেশজুড়ে আলোচিত রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবের বিয়ের আয়োজন নিয়ে বর,কনের স্বজন এবং কুমিল্লা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা উৎফুল্ল। বরযাত্রী হবেন নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খানসহ ৬ মন্ত্রী এবং অর্ধশতাধিক এমপি। গত কয়েকদিন রেলমন্ত্রীর বিয়ে নিয়ে দেশের সর্বত্র তুমুল আলোচনা চলছে। আজ সবার দৃষ্টি থাকবে চান্দিনার প্রত্যন্ত গ্রাম মিরাখোলায়।
একাধিক সূত্র জানায়, শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বেইলি রোডে মন্ত্রী মুজিবুল হকের বাসভবন থেকে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হবেন বরযাত্রীরা। মন্ত্রীর পরনে থাকবে মেরুন রঙের সেরওয়ানি। বরের সাথে স্পিকার, মন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উধর্বতন কর্মকর্তা, রেলমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, কুমিল্লা মহানগরী, চৌদ্দগ্রাম ও ঢাকার দলীয় নেতা-কর্মী মিলে সাত শতাধিক লোক। পথিমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের যে কোনো একটি বড় মসজিদে পবিত্র জুমআ’র নামাজ আদায় করবেন বরযাত্রীরা। বেলা ২টার মধ্যে বিয়ে বাড়িতে পৌঁছার কথা রয়েছে তাদের।
বাড়ির সামনে তিনটি তোরণ করা হয়েছে। কনের বাড়িতে উভয় পক্ষ মিলে দেড় হাজার মানুষের খাবার আয়োজন করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিয়েতে কোনো প্রকার গিফ্ট সামগ্রী বা নগদ অর্থ গ্রহণ করা হবে না। বর ও ভিআইপি অতিথিদের জন্য আলাদা প্যান্ডেল ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। ওই প্যান্ডেলেই বরের জন্য আলাদা স্টেজ। স্টেজ তৈরির কাজ চলছে। এই প্যান্ডেলের চারপাশে অতিথিদের জন্য সোফার ব্যবস্থা থাকবে।
বিয়ে বাড়িতে শুধুমাত্র বরের সু-সজ্জিত গাড়ি প্রবেশ করবে। জানা গেছে, মন্ত্রীকে বহনকারী তার ব্যক্তিগত গাড়িটিই বরের গাড়ি হিসেবে সাজানো হবে। বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ গেটের পাশেই ওই গাড়িটি পার্কিং করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গেটে কনের আত্মীয়-স্বজন ও শিশুরা বরকে অভ্যর্থনা জানাবে। এসময় তারা কাঁচা ফুলের মালা ও ফুলের তোড়া উপহার দেবেন। বরের প্লেটে আস্ত খাসি দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। এছাড়া অন্য আইটেমও থাকবে।
বিয়ে বাড়িতে ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বণিক কাজ করবে ছয় স্তরের নিরাপত্তা বাহিনী। সেগুলোর মধ্যে বিশেষ ডিউটি পুলিশ, পুলিশের মোবাইল টিম, ডিএসবি, ট্রাফিক পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও সাদা পোশাকের কমপে ৬০-৭০জন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে থাকবে। গতকাল সন্ধ্যায় চান্দিনা থানার ওসি গোলাম মোর্সেদ কনের বাড়ি পরিদর্শন করেন।
গোলাম মোর্সেদ জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক তত্ত্বাবধান করবেন কুমিল্লার (উত্তর) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, কুমিল্লা সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম। বিয়ে বাড়ির প্রায় তিন শত গজ সামনে প্রথম গেইটে তল্লাশির পর অতিথিদের বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়া উৎসুক কোনো ব্যক্তি বিয়ে বাড়িতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না।
বিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তার আধা কিলোমিটার জুড়ে আলোকসজ্জ্বা করা হয়েছে। বর ও ভিআইপি অতিথিদের জন্য একটি, আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্য অতিথিদের জন্য একটি এবং খাবারের আগে ও পরে অভ্যর্থনার জন্য আরেকটিসহ মোট তিনটি প্যান্ডেলের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। অভ্যর্থনা প্যান্ডেলে তিনটি আলাদা ক করা হয়েছে। একটিতে কোমল পানীয়, একটিতে কফি এবং অপরটিতে শাহী পানের ব্যবস্থা থাকবে। ডেকোরেটরের সরবরাহ করা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসেই খাবার খাবেন অতিথিরা।
বিয়ে বাড়িতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করবে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। এছাড়া জেনারেটরেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার কনের গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা রাস্তায় ইটের সলিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলছে রান্নার আয়োজন। কনের বাড়িতে দূর থেকে লোকজন এসে ভিড় করেছেন কনেকে দেখতে। মিরাখোলা গ্রামটি চান্দিনা উপজেলার নিঁচু এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় রাস্তা-ঘাটের তেমন সু-ব্যবস্থা ছিল না। রেলমন্ত্রীর সাথে চান্দিনার ওই এলাকার মেয়ের বিয়ে ঠিক হওয়ায় এলাকাবাসী যেমন আনন্দিত, তেমনি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন শুরু হওয়ায়ও তারা বেজায় খুশি।
কনের খালাত বোনের স্বামী কুমিল্লা উত্তর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. লুৎফুর রেজা খোকন জানান, বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে অর্ধ শতাধিক মন্ত্রী ও এমপি আসতে পারেন। দেড় হাজার অতিথি আপ্যায়নে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। দেশি মুরগী, খাসির তৈরি কাচ্চি বিরিয়ানী, খাসি দিয়ে তৈরি জালি কাবাব, শাহী জর্দা, আলু বোখারার চাটনী, বোরহানী, কোমল পানীয়, বোতলজাত বিশুদ্ধ পানি। খাবার তৈরির জন্য ৫০টি খাসি, ৪০০ মুরগিসহ অন্যান্য উপকরণ ইতোমধ্যে বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেছে। রান্নার জন্য ১৪টি চুলাও তৈরি করা হয়েছে। কুমিল্লা কাবের বাবুর্চি মিল্টন রোজারিও শুক্রবার রাতে খাবার তৈরির কাজ শুরু করেছেন।
কুমিল্লা কাবের বাবুর্চি মিল্টন রোজারিও জানান, তার সাথে সহযোগী হিসেবে থাকবে ৮ জন পুরুষ ও ৪ মহিলার একটি দক্ষ টিম।
মন্ত্রীর বিয়ে নিয়ে একালায় আনন্দ-উল্লাসের শেষ নেই। বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা মেরামতের সর্বশেষ কাজ করছেন শ্রমিকরা। বিয়েবাড়ির প্রায় দুই কিলোমিটার আগে কংগাই গ্রামবাসীর পে মোঃ মাজহারুল হক মিয়াজী নামের এক উৎসুক ব্যক্তি বর ও কনের বিবাহিত জীবন মধুর ও সফল হোক এই কামনা করে একটি তোরণ নির্মাণ করেছেন। বর যাত্রার গাড়ি যেনো আটকে না পড়ে তাই রাস্তার পাশের বাঁশ কেটে ফেলেছেন অনেকে।
এদিকে ১৪ নভেম্বর সংসদ ভবনের এলডি হলে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ ডিসেম্বর রেলমন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি চৌদ্দগ্রামের বসুয়ারায় আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সংসদ ভবনের হলে সাড়ে ৩ হাজার এবং চৌদ্দগ্রামের অনুষ্ঠানে ৩০ হাজার মানুষকে দাওয়াত দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।