ঢাকা; সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে জাতির অগ্রযাত্রার আকাঙ্খা বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করতে, দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে এবং শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে জাতিকে আবারো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আজ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ভাষণদানকালে তিনি এই আহ্বান জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে নতুন বছরের প্রথম অধিবেশন হওয়ায় সাংবিধানিক রেওয়াজ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-সাফল্যে ও দেশের অগ্রগতির বিষয়গুলো তুলে ধরেন। প্রেসিডেন্ট তাঁর মূল ভাষণের সংক্ষিপ্তসার এক ঘন্টা ৪ মিনিটে তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যের বাকি অংশ পঠিতভাবে গণ্য করার অনুরোধ জানালে স্পিকার তাঁর পুরো ভাষণটি পঠিত বলে গণ্য করা হবে বলে উল্লেখ করেন। এর আগে সন্ধ্যা ৬টা ৩ মিনিটে কালো স্যুট-কোট পরিহিত প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করলে সবাই দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানান। এ সময় অর্কেস্ট্রায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বক্তৃতা শেষে অধিবেশন ত্যাগের সময়ও জাতীয় সঙ্গীতের সূরে বিদায় জানানো হয়। আবারো সকলে দাঁড়িয়ে তাকে বিদায় জানান। প্রেসিডেন্ট অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করার পর সংসদ অধিবেশন ২৪শে জানুয়ারী পর্যন্ত মূলতবি করা হয়। এসময় দেশের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট বলেন, শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথ ধরেই বাংলাদেশ আরো বহুদূর এগিয়ে যাবে। বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশ হিসেবে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবে। ‘রূপকল্প-২০২১’ ও দিনবদলের সনদের ভিত্তিতে প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং এ কার্যক্রমে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হবে। আর ২০৪১ সালে দেশটি বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিসিক্ত হবে। এটাই জাতির প্রত্যাশা। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, জাতীয় সংসদ দেশের আপামর জনসাধারণের আশা-আকাঙ্খার কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণের মাধ্যমে বাংলাদশকে একটি উন্নত ও আলোকিত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে মহান জাতীয় সংসদে সরকারি দল ও বিরোধী দলসহ সকলকে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি। প্রেসিডেন্ট বলেন, সংবিধান সমুন্নত ও সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়। গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ‘রূপকল্প-২০২১’, দিনবদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের, জ্ঞানভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্নমধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এখন জাতির দৃষ্টি ২০৪১ সালের দিকে – বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার মানসে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে জাতির আকাঙ্খা পূরণে সরকার সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।