ঢাকা; বিশ্বে সূচনা হলো ট্রাম্প যুগের। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে এ যুগের সূচনা করলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সঙ্গে সঙ্গে তার নামের আগে যুক্ত হলো বিশেষণ ‘প্রেসিডেন্ট’ শব্দটি। এখন তার পরিচয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তার অধীনে বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। আবার তার দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা আছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেয়া তার কিছু বক্তব্য নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল তা এখনও আছে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েছেন সবেমাত্র। দু-একদিনের মধ্যে নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন। বাতিল করতে পারেন সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অনেক নির্বাহী আদেশ। তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে অনেকেই শঙ্কিত। বিশেষ করে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ঘণ্টায় কয়েক লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তেমনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার। বলেছেন, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করবেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে জেলে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোরবিরোধী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। এমনতরো তার নানারকম বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সংশয় চারদিকে- আসলে ডনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে বিশ্ব যাচ্ছে কোনদিকে! এমন প্রশ্ন পটোম্যাক থেকে পদ্মা, উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু সর্বত্রই রুদ্ধশ্বাস আলোচনায়। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি নতুন কোনো সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারবেন কিনা তারও বিশ্লেষণ চলছে। তবে তাৎক্ষণিক এসব বিষয়ে পূর্বাভাস করা কঠিন। গতকাল ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের সামনে এ শপথ বাক্য পাঠ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। এ অনুষ্ঠানে তার সমর্থক ও বিরোধী মিলে উপস্থিত হন কয়েক লাখ মানুষ। শপথ নিয়ে ট্রাম্প প্রবেশ করেন হোয়াইট হাউসে। এখানে গিয়ে তার প্রথম কাজ হলো নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় এমন কিছু কাজ করা। তবে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর নিউ ইয়র্কের সাবেক এই ব্যবসায়ী, সাবেক রিয়েলিটি টিভি তারকা তার সমালোচকদের জবাব দিতে বার বারই টুইটার ব্যবহার করেছেন। এ সপ্তাহে এবিসি নিউজ/ওয়াশিংটন পোস্টের এক জরিপে দেখা গেছে শতকরা মাত্র ৪০ ভাগা মার্কিনি ট্রাম্পের অনুকূলে। ১৯৭৭ সালের ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের পর এ যাবৎ যতজন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় এসেছেন তার মধ্যে এই জনসমর্থন সর্বনিম্নে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আরো বেশি আত্মকেন্দ্রিক করে তোলার, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি সংরক্ষণ করার কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কোম্পানি বিদেশে কারখানা স্থাপন করেছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রি করছে তাদের পণ্যের ওপর শতকরা ৩৫ ভাল শুল্ক আরোপ করা হবে বলেছেন ট্র্যাম্প। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার উষ্ণ সম্পর্ক, ন্যাটোতে অর্থায়ন কমিয়ে দেয়ার হুমকিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বলয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উদ্বেগ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে তিনি ইসরাইলের তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন এর আগে। যদি তিনি তা করেন তাতে আরবদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিতে পারে। আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কীভাবে তিনি অগ্রসর হবেন সে পরিকল্পনা হয়তো পাওয়া যাবে অল্প সময়ের মধ্যে। গতকাল তার শপথ অনুষ্ঠানের আগেই কমপক্ষে ৫০ জন ডেমোক্রেট কংগ্রেস সদস্য অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দেন। জর্জিয়া থেকে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য জন লুইসকে নিয়ে তার মন্তব্যের প্রতিবাদে এমন অবস্থান নিয়েছেন তারা। তবে শেষ পর্যন্ত তারা বা তাদের কেউ শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন কিনা তা জানা যায় নি। ওদিকে ট্রাম্প বিরোধী কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী গতকালের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা। শপথ অনুষ্ঠানের সময় ওয়াশিংটনে বিশাল বিক্ষোভের কর্মসূচি দেয় ‘অ্যানসার কোয়ালিশন’। আজ শনিবার ওয়াশিংটনে হবে ‘ওমেনস মার্চ অন ওয়াশিংটন’। তারা সেখান থেকে আজকের এই প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দিতে পারেন। এ ছাড়া লন্ডনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হওয়ার কথা। ওদিকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এখন ট্রাম্প অগ্রাধিকারে কি কি রাখবেন সেদিকে দৃষ্টি সবার। বিশেষ করে তিনি নির্বাচিত হওয়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের দু’কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে আসায় উদ্বেলিত রিপাবলিকানরা। এজন্য তারা দ্রুততার সঙ্গে যেকোনো বিল পাস করিয়ে নিতে পারবেন। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক ওবামাকেয়ার আইন, আয়কর সংশোধন, কেন্দ্রীয় অনেক আইন-নিয়মকানুন তারা বাতিল করতে পারবেন। অন্যদিকে অপ্রত্যাশিতভাবে নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন হেরে যাওয়ার পর ডেমোক্রেটরা রাজনীতিতে তাদের অবস্থান শক্ত করার পরিকল্পনা করছে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে প্রতিটি পদে তারা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের মধ্যে রাখতে চাইছেন। ট্রাম্প অভিবাসনবিরোধী যে বক্তব্য দিয়েছেন, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের যে পরিকল্পনার কথা বলেছেন তার কোনোটাই ডেমোক্রেটরা বিরোধিতা ছাড়া ছেড়ে দেবেন না বলে মনে হচ্ছে। অন্যদিকে সমালোচকরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনায় ব্যক্ত। তারা তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, তিনি নির্বাচিত হয়েছেন রাজ্যভিত্তিক ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে। তিনি হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ২৯ লাখ পপুলার ভোট কম পেয়েছেন। ট্রাম্পের সমালোচকরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টিদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে ট্রাম্পকে ব্রিফিং করেছে। রাশিয়া যে হস্তক্ষেপ করেছে সে বিষয়ে তিনি স্বীকার করেছেন। কিন্তু রাশিয়া এমন অভিযোগ অস্বীকার করে। সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ ও ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া দখল করার কারণে ক্ষমতার শেষ মেয়াদে নতুন করে অবরোধ দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রতিক্রিয়া হিসেবে বলেছেন, শর্তসাপেক্ষে তিনি ওই অবরোধ প্রত্যাহার করতে পারেন। এ ছাড়া ইরানের সঙ্গে বারাক ওবামার সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করার কথা বলেছেন তিনি। এরই মধ্যে ট্রাম্পের উপদেষ্টারা তাকে পরামর্শ দিয়েছেন ক্ষমতায় আসার প্রথম কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের সংখ্যা সীমিত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামা ‘ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডিএসিএ)’ নামে একটি নির্বাহী আদেশ দেন। এ নির্দেশের অধীনে কোনো মানুষ শিশু অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ উপায়ে প্রবেশ করলে বা তাকে আনা হলে সে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে। তাকে সরকার দু’বছর কাজ করার অনুমোতি দেবে। এবং কলেজে যাওয়ার অনুমতি দেবে। এ নির্দেশের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৯ সালে নির্বাচিত হয়ে গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবির বন্ধ করে দেয়া ও পানিতে ডুবিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় বন্ধ করে দেয়া সংক্রান্ত তিনটি নির্বাহী নির্দেশে স্বাক্ষর করেছিলেন বারাক ওবামা। তবে ট্রাম্প তার উল্টোটা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা সেখানে আরও খারাপ মানুষকে ভরতে যাচ্ছি।
বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ
একদিকে চলছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রামেপর শপথ গ্রহণ আরেকদিকে ট্রামপ-বিরোধীরা দলে দলে রাস্তায় নামছেন বিক্ষোভ করতে। এই বিক্ষোভে পোড়ানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা, ধাওয়া করা হচ্ছে ট্রামপ সমর্থকদের। গতকাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এমনই দৃশ্যের অবতারণা হয়। ওয়াশিংটনে অবস্থিত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন কয়েকশ বিক্ষোভকারী। ট্রামপ সমর্থক ও তার শপথ গ্রহণে যোগদানকারীদের বিদ্রূপ করা হয়। ট্রামেপর এক সমর্থনকারীকে ধাওয়া করে বিক্ষোভ সমাবেশের পার্শ্ববর্তী ওয়ার্নার থিয়েটার পর্যন্ত নিয়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। ওয়াশিংটনে ট্রামপ সমর্থকরা আয়োজন করেছিলেন ‘ডেপ্লোরাবল বল’। এর বাইরে অবস্থান করছিল বিক্ষোভকারীরা। তাদের সামাল দিতে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়েছে পুলিশ।
ফিলিপাইনে বিক্ষোভ আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। ম্যানিলায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীরা পুড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। দেশটির ২ শতাধিক কর্মী ফিলিপাইন থেকে আমেরিকার সেনাদের প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। সাথে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে’কে আমেরিকামুক্ত একটি বৈদেশিক নীতিমালা তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পর দুতের্তের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। পরে দুতের্তে দাবি করেন, মাদকের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, মাদকবিরোধী অভিযানে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন। এ জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিবৃতি দিয়েছে অনেক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন। কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে দুতের্তের সুসম্পর্ক স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে নি ফিলিপাইনের জনগণ। তাই তারা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে ওই বিক্ষোভে নেমে আসেন। এ সময় তারা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের দিকে অগ্রসর হলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। ফলে বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসের গেটে পৌঁছতে পারে নি। ওদিকে বেশ কিছুদিন আগেই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এমন নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব আনা হয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদে। কিন্তু জাতিসংঘের এমন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তাতে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ। এজন্য গতকাল পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন কয়েক শত মানুষ। এ ছাড়াও ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প। বিক্ষোভকারীরা তার এমন মন্তব্যেরও বিরোধিতা করে স্লোগান দেন। লন্ডনেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। গতকাল ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে টাওয়ার ব্রিজে উড়িয়ে দেয়া হয় একটি ব্যানার। তাতে লেখা- এখনই পদক্ষেপ নিন। সংযোগ স্থাপন করুন, দেয়াল নয়। লন্ডনের অন্যান্য স্থানেও একই ধরনের ব্যানার টানানো হয়েছে অন্য ব্রিজগুলোতে। এর মধ্যে রয়েছে ভক্সহল ব্রিজ। সেখানে ব্যানার টানিয়েছে এলজিবিটি সম্প্রদায়। ওদিকে লন্ডন, এডিনবার্গ, ব্রাইটন ও ম্যানচেস্টার সহ বৃটেনের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে।
বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ
একদিকে চলছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রামেপর শপথ গ্রহণ আরেকদিকে ট্রামপ-বিরোধীরা দলে দলে রাস্তায় নামছেন বিক্ষোভ করতে। এই বিক্ষোভে পোড়ানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা, ধাওয়া করা হচ্ছে ট্রামপ সমর্থকদের। গতকাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এমনই দৃশ্যের অবতারণা হয়। ওয়াশিংটনে অবস্থিত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন কয়েকশ বিক্ষোভকারী। ট্রামপ সমর্থক ও তার শপথ গ্রহণে যোগদানকারীদের বিদ্রূপ করা হয়। ট্রামেপর এক সমর্থনকারীকে ধাওয়া করে বিক্ষোভ সমাবেশের পার্শ্ববর্তী ওয়ার্নার থিয়েটার পর্যন্ত নিয়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। ওয়াশিংটনে ট্রামপ সমর্থকরা আয়োজন করেছিলেন ‘ডেপ্লোরাবল বল’। এর বাইরে অবস্থান করছিল বিক্ষোভকারীরা। তাদের সামাল দিতে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়েছে পুলিশ।
ফিলিপাইনে বিক্ষোভ আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। ম্যানিলায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীরা পুড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। দেশটির ২ শতাধিক কর্মী ফিলিপাইন থেকে আমেরিকার সেনাদের প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। সাথে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে’কে আমেরিকামুক্ত একটি বৈদেশিক নীতিমালা তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পর দুতের্তের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। পরে দুতের্তে দাবি করেন, মাদকের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, মাদকবিরোধী অভিযানে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন। এ জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিবৃতি দিয়েছে অনেক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন। কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে দুতের্তের সুসম্পর্ক স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে নি ফিলিপাইনের জনগণ। তাই তারা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে ওই বিক্ষোভে নেমে আসেন। এ সময় তারা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের দিকে অগ্রসর হলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। ফলে বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসের গেটে পৌঁছতে পারে নি। ওদিকে বেশ কিছুদিন আগেই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এমন নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব আনা হয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদে। কিন্তু জাতিসংঘের এমন প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তাতে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ। এজন্য গতকাল পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন কয়েক শত মানুষ। এ ছাড়াও ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প। বিক্ষোভকারীরা তার এমন মন্তব্যেরও বিরোধিতা করে স্লোগান দেন। লন্ডনেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। গতকাল ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে টাওয়ার ব্রিজে উড়িয়ে দেয়া হয় একটি ব্যানার। তাতে লেখা- এখনই পদক্ষেপ নিন। সংযোগ স্থাপন করুন, দেয়াল নয়। লন্ডনের অন্যান্য স্থানেও একই ধরনের ব্যানার টানানো হয়েছে অন্য ব্রিজগুলোতে। এর মধ্যে রয়েছে ভক্সহল ব্রিজ। সেখানে ব্যানার টানিয়েছে এলজিবিটি সম্প্রদায়। ওদিকে লন্ডন, এডিনবার্গ, ব্রাইটন ও ম্যানচেস্টার সহ বৃটেনের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে।