ঢাকা; ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধনীদের জন্য। এখানে গরিবদের জন্য কোনো সুবিধা নেই। মঙ্গলবার ঐতিহ্যবাহী প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এসে একথা বলেছেন বাংলাদেশের নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে ডিরোজিও হলে তার ভাষণে ইউনূস বলেছেন, বর্তমানে ভারতে যে কাঠামোয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে তাতে গরিবদের কোনো কাজে লাগছে না। তার মতে, ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুঁজিবাদীদের সুবিধার্ধে পরিচালিত হয়। গরিবদের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। তিনি জানিয়েছেন, আমি বারবার ভারত সরকারকে বলেছি। হয় আপনারা ব্যাংকিং আইন পরিবর্তন করুন, নয়তো গরিবদের জন্য ব্যাংক তৈরির নতুন আইন আনুন। কিন্তু ভারত সরকার খালি বলছে পার্লামেন্টে পাঠাচ্ছি, আলাপ আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু হচ্ছে না বছরের পর বছর। তিনি বলেন, গরিবের কাছে আর্থিক সুবিধা পৌঁছে দিতে হলে নতুন আইন করা জরুরি। ভারতে অনেক মাইক্রো ফিন্যান্স সংস্থা রয়েছে, যারা বাইরের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এসব মাইক্রো ক্রেডিট সংস্থাগুলোকে লিমিটেড ব্যাংকিং লাইসেন্স দেয়ার কথা বলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অবশ্য এ কাজটা করেছে। বেশ কিছু মাইক্রো ফিন্যান্স সংস্থাকে ব্যাংকিং লাইসেন্স দিতে আরম্ভ করেছে। এর ফলে ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী মাসেই ইউনূস বাঙ্গালুরুতে যাবেন উজ্জীবন বলে একটি প্রতিষ্ঠানে, যার সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। ইউনূস এদিন জানিয়েছেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নতুন আইন আনতে হবে। আইনটা হলো একটা ছাঁচ। এটা একবার প্রণয়ন করা হয়ে গেলে ওর মতো সেটি চলতে থাকবে। ভারতে বর্তমানে যে ব্যাংকিং সিস্টেম রয়েছে সেটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইউনূস বলেছেন, এটা সমুদ্রগামী বিশাল আয়তনের জাহাজ। তার পেটের মধ্য অনেক সম্পত্তি। এরা দীর্ঘমেয়াদি সমুদ্র পাড়ি দেবে। গরিবের জন্য যে ব্যাংক হবে সেটা সমুদ্রের জাহাজ নয়, সেটা যেন ছোট ডিঙ্গি নৌকা হয়ে। ওই ছাঁচ দিয়ে এই জিনিস বানানো সম্ভব নয়। এভাবেই ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সমলোচনা করেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের এদিনের আলোচনায় ইউনূস নিজের বক্তব্য শুরু করেছিলেন বাংলায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সুযোগ পেয়ে তিনি অভিভূত বলে জানান। তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সকলকে তিনি ধন্যবাদও জানিয়েছেন। এদিনের বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশে গড়ে ওঠা গ্রামীণ ব্যাংকিং ব্যবস্থা কিভাবে সারা বিশ্বে ছাপ ফেলেছে তা প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি জানিয়েছেন, এ ব্যাংকিং ব্যবস্থা বর্তমানে শুধু বাংলাদেশে নয়, আমেরিকায়ও কাজ করছে। সমানভাবে কাজ করছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও।