গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নকঁশী কাঁথা এখন বিলুপ্তির পথে

Slider গ্রাম বাংলা বাংলার মুখোমুখি

sam_2774

 

 

 

 

 

 

মোঃ সামিউল আলম, বিরামপুর (দিনাজপুর): শীতের আগমনীতে কাথাঁ সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত গ্রামাঞ্চলের কিশোরী, গৃহবধুসহ বয়স্করাও। শীল্পকলার প্রচীন নিদর্শন বাংলার গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যে মিশে আছে এই সুচশিল্পটি। আমাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নকশী কাথাঁ। এ যেন এক লোকায়ত শিল্প নিদর্শনের মূর্তপ্রতিক। অনুপম শিল্প মাধুর্যের বাস্তব রুপ নকশী কাথাঁ।

কাথাঁ বলতে মূলত জীর্ণ বস্ত্রে প্রস্তুতকৃত শোবার সময় গায়ের উপর দেবার শীতবস্ত্র বিশেষ। রং-বেরঙের সুতাই সুনিপুন হাতে গড়া গ্রাম-বাংলার বধু-কন্যাদের মনের মাধুরী মেশানো অনুভুতি দিয়ে নান্দনিক রুপ-রস ও বর্ণ-বৈচিত্রে ভরা এই নকশী কাথাঁ। এ শিল্পে মুগ্ধ হয়ে পল্লীকবি জসীম উদ্দিন রচনা করেছেন তার অনবদ্য কাব্যগ্রন্থ ‘নকশী কাথাঁর মাঠ’।

নকশী কাথাঁ শিল্পের সাথে আমাদের আর্থ সামাজিক কর্মকান্ডও জড়িত রয়েছে নিবিড় ভাবে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের এই ঐতিহ্য হাতের সেলাইয়ে গড়া নকঁশী কাঁথা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। বড় বড় কারখানায় তৈরীকৃত ও বিদেশী বিভিন্ন ডিজাইন আর রঙ-বেরঙের রেডিমেট কাঁথা-কম্বলের ভীড়ে কোথাও যেন হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের গ্রাম-বাংলার এই দেশীয় শিল্পটি।

কিছুকাল আগেও দেখা যেত বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজার ও শহরের পাড়া-মহল্লার ওলিতে-গলিতে নানী-দাদী, খালা-ফুফু ও বধু-কন্যাদের হাতে তৈরী নানা রকমের ফুল-ফল, পশু-পাখি, গাছ-পালা ও প্রকৃতির ডিজাইনে গড়া নকঁশী কাঁথা সাইকেলের পিছনে বেঁধে সারাদিন ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে বেড়াতেন শীত মৌসুমের ব্যাবসায়ীরা। কিন্তু কালের বিবর্তনে এসব আর আজকাল চোখেও পড়ে না।

বাংলাদেশ এই হস্তশীল্প দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। বহিঃবিশ্বে তথা জাপান, আমেরিকা, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, নরওয়ে, জর্মানী, ইতালীসহ বিভিন্ন দেশে এর চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু আধুনিক যুগের ডিজিটাল বাংলাদেশে সময়ের ব্যবধানে রেডিমেটের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে সেই সব গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবে উৎপাদন, আয় বৃদ্ধি ও নতুন কর্ম-সংস্থান তৈরীর ক্ষেত্রে এ খাতের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। এ খাতকে আরো বিকোশিত ও প্রোগতিশীল করার লক্ষে সংশ্লিষ্ট কারু শিল্পীদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। এজন্য সকল সরকারী-বেসরকারী সংস্থা ও সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সমূহকে আন্তরিকতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *