ঢাকা; উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির (ওটিএম) বদলে ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে (ডিপিএম) ১২০০ কোটি টাকা খরচ করতে চায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। ‘চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ সড়ক কাম বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা এবং নিষ্কাশন’ প্রকল্পের ৪২টি প্যাকেজের কাজ বাস্তবায়নের জন্য এ প্রস্তাব করে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে তারা। এ প্রস্তাবটি অনুমোদন মিললে উন্মুক্ত দরপত্রের (ওটিএম) বদলে ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে (ডিপিএম) কাজ করতে পারবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। ডিপিএম পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা সম্পর্কে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দ্রুত শিল্প কল- কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে দেশি- বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য উপকূলীয় বাঁধ (সুপার ডাইক) নির্মাণ, বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, মটোরাবল পেভমেন্ট নির্মাণ, স্লুইস নির্মাণ, ক্লোজার নির্মাণ এবং খাল পুনঃখনন কাজ জরুরিভিত্তিতে করা প্রয়োজন। এসব কাজ বাস্তবায়ন হলে প্রকল্প এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, সামুদ্রিক উচ্চ জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাবে। এ কারণে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে জনস্বার্থে সম্পাদনের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ এর ৬৮ (১) ধারা অনুযায়ী ডিপিএম পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। প্রকল্প প্রস্তাবনায় ৪২টি প্যাকেজের কাজ উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি (ওটিএম) বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। সারসংক্ষেপে বলা হয়, কাজের জরুরি বিবেচনায় এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ৪২টি প্যাকেজে একাধিক ঠিকাদার নির্বাচন করা হলে কাজ বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাবসহ পদ্ধতিগত দীর্ঘসূত্রতার কারণে কাজ বাস্তবায়ন বিলম্ব হবে। সেক্ষেত্রে ডিপিএম পদ্ধতিতে একটি প্যাকেজের আওতায় অপেক্ষাকৃত কম সময়ে কাজ শুরু ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের ৪২টি প্যাকেজের বিপরীতে ৪২ জন বা একাধিক ঠিকাদার নির্বাচন করা হলে কাজ বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিতে পারে। তাই ৪২টি প্যাকেজের কাজ একটি প্যাকেজের মাধ্যমে ডিপিএম পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যুক্তিসঙ্গত হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ ১৮ দশমিক ৪৮৮ কিলোমিটার সুপার ডাইক নির্মাণের কথা রয়েছে। প্রায় আট হাজার ৪৫২ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত ‘বেজা’ এলাকায় বিভিন্ন ধরনের শিল্প, কল- কারখানা, অবকাঠামো, অফিস ইত্যাদি স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিবেশ গড়ে উঠবে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় মনে করছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের চাহিদা মেটানোসহ জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ভূমিক্ষয় দূর হবে, বাণিজ্যিক বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ঘটবে, কৃষি ও মৎস্য চাষ বেড়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে পরিবেশের উন্নতি হবে এবং প্রকল্প এলাকায় আর্থ সামাজিক উন্নতি হবে। এটি আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সহায়ক হবে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে ১৭.৮৭২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ১৭.৮৭২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ১৮.৪৮৮৮ কিলোমিটার মটোরাবল পেভমেন্ট নির্মাণ, নয়টি স্লুইস নির্মাণ, নয়টি ক্লোজার নির্মাণ এবং ৩০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন সরাসরি টেন্ডারের মাধ্যমে সেবা নেয়া যাবে। আগামী অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য বিষয়টি উঠছে। এ সংক্রান্ত সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে, পানি সম্পদ মন্ত্রী সার- সংক্ষেপটি দেখেছেন, অনুমোদন করেছেন এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর জন্য সম্মতি দিয়েছেন।